শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

দুর্নীতির কারণে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না সরকার

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দুর্নীতির কারণে জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পাস হওয়া বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।  তিনি বলেন, আজ (গতকাল) একদলীয় সংসদে, একদলীয় বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী গত বছরের বাজেটে কোন অর্জন নেই। তিনি বলেন,  শেয়ার বাজার, রেল, পদ্মা সেতুসহ সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আটককৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহানগরের সদস্য সচিব আব্দুস সালাম। এতে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আববাস, ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।

মওদুদ আহমদ আরো বলেন, সদ্য পাস হওয়া বাজেটের কোনো একটি লক্ষ্যও সরকার ঠিক রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, এর একমাত্র কারণ দুর্নীতি। শেয়ারবাজার ও রেলওয়েসহ সরকারের সব ক্ষেত্র দুর্নীতিতে ভরে গেছে। একদলীয়ভাবে বাজেট পাস করা হয়েছে। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দিতেই হবে। নয়তো তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আমাদের কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়। এটি জনগণের দাবি। দু'টি কারণে আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়ক রাখতে হবে। এক. এ ব্যবস্থা না রাখলে তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দুই. তারা রাজনৈতিকভাবেও সম্মানের সঙ্গে বিরোধী দলে থাকতে পারবে না। আর যদি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তারা না রাখে তাহলে আমরা তাদের বাধ্য করবো।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার আগেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও এ ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে কিছু ছিল না।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙা হয় না। তাই এখনও সময় আছে, সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ সংশোধন করুন।

আওয়ামী লীগের অনেক এমপিও জানেন যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই যতো দ্রুত এর সমাধান সম্ভব হয়, ততোই মঙ্গল। নয়তো আন্দোলন অনেক দূর যাবে।

তিনি বলেন, সরকার আইন ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না। সরকারের প্রভাবের কারণে বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাই তারা আমাদের নেতাদের জামিন দিচ্ছেন না। তবুও আমরা ভিক্ষা চাইব না। আইনী লড়াই করেই নেতাদের মুক্ত করে আনব।

মওদুদ বলেন, এ পর্যন্ত চারটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে'। দেশে আইনের শাসন নেই, আওয়ামী লীগের শাসন আছে।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, ব্যবস্থা না নিলে দেশের বিচার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগে বিপর্যয় ও বিশৃক্মখলা ঘটবে। দেশে আইনের শাসন বলতে কিছুই থাকবে না। তিনি আরো বলেন, সরকার দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। দেশে আজ দুর্নীতি আর দুঃশাসনে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের মনে রাখা উচিত, বিরোধী দলের নেতাদের নিপীড়ন করে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না।

মির্জা আববাস বলেন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি কিভাবে চলেন, তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, হাসানুল হক ইনুর আয় কি, তিনি সরকারকে ট্যাক্স দেন কিনা, আর কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি করেন, দুদককে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইনু খালেদা জিয়াকে কিভাবে মাইনাস করতে চান? তাকে কি জেলে দিয়ে, হত্যা না গুম করে মাইনাস করতে চান? এ বিষয় তিনি বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করার আহবান জানান। মির্জা আববাস বলেন, এদেশের জনগণ আর কয়েক দিন পরেই ইনুদের মাইনাস করে দেবে। কারণ, মানুষ তাদের নাম শুনলেই এখন খেপে ওঠেন। তিনি সরকারকে জেলখানা সংস্কারের আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের নিয়ে নোংরা ঘরে ধুলোবালির মধ্যে রেখেছিলেন। আর কয়েক দিন পরেই আপনাদের জেলে যেতে হবে। জেলখানা সংস্কার করুন। পরবর্তীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আর সেখানে থাকতে হবে না।

সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মো. মহসিন কবিরের জানাজার নামাজে অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ