রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

আ’লীগ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদের পর এবার উপজেলা নির্বাচনেও অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি গত সোমবার রাতে বৈঠক করে বর্তমান আওয়ামী সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয় সোমবার রাতে। 

দলটির স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার হতে চায় না বিএনপি। সে কারণে ৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া আসন্ন চার ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। 

আলোচনা শেষে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের নিকট জবাবদিহি করে সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। এই শর্তের অনুপস্থিতিতে স্বৈরতন্ত্র হিং¯্ররুপে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক বিকট স্বৈরাচারের অভ্যুদয় হয়েছে। আওয়ামী দখলদার শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয়ে দেড় দশক ধরে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে। এদের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোন নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। দখলদার শাসকগোষ্ঠী প্রতিটি নির্বাচনের পূর্বে জনগণকে প্রতারিত করার জন্য নতুন নতুন রণকৌশল গ্রহণ করে। প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি। তাদের অধীনে সকল জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও শারীরিক আক্রমণসহ পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। অনেককেই মনোনয়ন পত্র জমা দিতেও দেওয়া হয়নি।

বৈঠকে আরও বলা হয়, অগণতান্ত্রিক শক্তি কখনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মিত্র হতে পারে না। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ভোটারবিহীন ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পরও তারা আশঙ্কামুক্ত হতে পারেনি। তাই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া, ইন্টারনেটের গতি স্লথ করা, নাগরিকদের নজরদারী নস্যাৎ ইত্যাদি নজীরবিহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিনাশী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর আগেও জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে বাধা প্রদান করা হয়। কিছু এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হলেও পরক্ষণেই তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। এরা একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ভরে রাখে। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করা হয়, এদের অনেকেই এখনও কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গুম, খুন অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

বিএনপির সর্বোচ্চ এই নীতি নির্ধারণী ফোরাম মনে করে, এই সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলশ্রুতিতে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

 সভায় ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

সভায়, বান্দরবান জেলায় কেএনএফ (কু-কি-চিন) এর হামলায় ব্যাংক ও অস্ত্র লুট এবং পার্বত্য এলাকায় বিরাট অংশে স্বায়ত্বশাসন দাবী নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে এই ধরনের দাবী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত। এই সংগঠনটির ব্যাংক থেকে অর্থ এবং অস্ত্র লুঠ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য প্রমান করে যে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠির সঙ্গে সরকারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে এবং পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য বিষয়টিকে আরো রহস্যময় করেছে। এই ধরনের আক্রমন এবং পরবর্তীকালে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌত্ব কতটা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সরকার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। যা জনমনে আরো উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সভা মনে করে, বিডিআর-এর হত্যাকান্ড সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা এবং এই ধরনের আক্রমনের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করার একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সভা মনে করে, অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন।    

সভায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইসরাইল থেকে দুটি কার্গো বিমানের অবতরন যা সর্বমহলে উদ্বেগ ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কোনো চুক্তি না থাকার পরেও বিমানগুলি তেলআবিব থেকে ঢাকা বিমান বন্দরে সরাসরি অবতরন এবং তা নিয়ে পরবর্তীকালে বেসামরিক বিমান চলাচল র্কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য গ্রহন যোগ্য নয়। উপরন্ত বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইউরোপে পরিবহনের বিষয়টি বিজেএমই অস্বীকার করায় জনমনে আরো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। যখন ইসরাইল কর্তৃক গাজায় ভয়াবহ আক্রমন, প্যালেস্টাইনিদের নির্বিচারে হত্যা সারা বিশে^ নিন্দার ঝড় বইছে সেই সময় ইসরাইল থেকে ঢাকায় বিমান অবতরন রহস্যময়তার সৃষ্টি করেছে। সভা অবিলম্বে এই বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবার দাবি জানায়।

সভায় আগামী ১মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়। সভায় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে দলের যে সিদ্ধান্ত সেটা পরিবর্তনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সভা মনে করে, এই অবৈধ সরকরের অধীনে কোনো নির্বাচনে সুষ্ঠ ও অবাধ হতে পারে না। সুতরাং এই উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ