বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

ইসলামে মতপার্থক্যের সৌন্দর্য

আলী আহমাদ মাবরুর

আমাদের ভেতর নানা বিষয়ে মতপার্থক্য আছে, থাকতেই পারে। মানুষ যেহেতু অনেক তাই বহুপথ, বহুমত থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই মতপার্থক্যগুলো বেশিরভাগ সময়েই আমাদের জন্য লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থান ঘটার পর থেকে আমরা মতপার্থক্যের কুৎসিত রূপের ভিকটিম হয়ে যাচ্ছি নিয়মিতই। বিগত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং এর বিশ্লেষণ নিয়ে নানা ধরনের ভিন্নমত চোখে পড়ছে। সকলেই এ বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হচ্ছে। কেউ কেউ চুপ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বেরিয়ে আসছেন। কেউ বা সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু মতামত বা ভিডিও দিচ্ছেন। এতে করে, মতপার্থক্যের নেতিবাচক প্রভাব আরো যেন প্রকট হয়ে উঠছে। মতপার্থক্য আমাদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে দিচ্ছে। আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। ফলে, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে যেখানে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য চিন্তার ওপর একত্রিত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া জরুরি ছিল, সেখানে আমরা নিজেরাই বিভাজিত হয়ে অন্যায়কারীকে আরো বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি।

আমাদের সীমাবদ্ধতা হলো, আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি যেখানে মতপার্থক্য থাকবে না- যা কখনোই হওয়ার নয়। অনেক মানুষ থাকলে অনেক মতও থাকবে। এই বাস্তবতায়, মতপার্থক্য নিরসনের জন্য আমাদের যতটুকু সচেষ্ট হওয়া উচিত, সে তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকা উচিত যাতে আমরা মতপার্থক্যগুলো ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা করতে পারি। মতপার্থক্য নিয়েই একসাথে চলার একটি কৌশল বা নীতিমালা আছে। আমরা অনেকেই এ পন্থাগুলো সম্বন্ধে অবগত নই- যা আমাদের আরেকটি সংকট।

আমি-আপনি চাইলেই মতপার্থক্য মুছে দিতে পারবো না। তাই বলে মুসলিমরা সব বিষয়েই কেবল তর্ক ও বাদানুবাদ করে যাবে- এমনটাও কাম্য নয়। তবে, মতপার্থক্য যদি ইতিবাচক অভিপ্রায় বা খুলুসিয়াত থেকে হয়, তাহলে তার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। কেউ তখনই মতামত দিতে পারে যখন সে চিন্তা করতে পারে। কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। কেননা, আলোচনা করতে গেলেই দ্বিমতের উদ্ভব হয়। তবে, মতপার্থক্য তখনই কার্যকরী হয় যখন তা হয় জ্ঞানার্জনের নিয়তে। আর যে দুজন মানুষ মতপার্থক্য করবেন তাদের পরস্পরের প্রতি যদি শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে মতপার্থক্যের সৌন্দর্যটুকুও দৃশ্যমান হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ বজায় না রেখে বরং একে অপরকে হেয় করার প্রক্রিয়ায় মেতে আছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইদানিং রীতিমতো ভয়াবহ তর্কযুদ্ধ দেখা যাচ্ছে। 

জীবিত মানুষেরা একে অপরকে নাস্তানাবুদ তো করছেই, মৃত মানুষদেরকেও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। অথচ মৃত মানুষগুলো তাদের বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগের জবাব দিয়ে যেতে পারবেন না জানার পরও তাদেরকে অভিযুক্ত করা বড়ো ধরনের জুলুম। শুধু হেয় করেই আমরা ক্ষান্ত হচ্ছি না, তর্কযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য কিংবা নিজেদের মতামতকে পোক্তরূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা এখন সমমনা লোকদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করছি, সম্মিলিতভাবে একজনের ওপর হামলা করছি, চরিত্র হনন করছি। এগুলো সবাই অনুচিত কর্মকান্ড। আমাদের সংযত হওয়া শেখা প্রয়োজন। কোথায় থামতে হয় জানা দরকার। আর সর্বোপরি, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের আলাপগুলোকে আমজনতা পর্যায়ে নামিয়ে এনে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমাদের স্মরণ করা দরকার যে, আমরা যা বলছি, অপরকে যেভাবে হেয় করছি, গীবত করছি- এর প্রতিটির জন্য শেষ বিচারের দিনে আমাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে।

তাছাড়া যারা বিভাজন করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাও কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন, “সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।” (সূরা রুম: ৩১-৩২)

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় যারা নিজেদের ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা’আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।” (সূরা আনআম: ১৫৯)

অন্যদিকে, রাসূল (সা.) বলেন, “ইহুদী জাতি একাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী এবং অবশিষ্ট সত্তর ফেরকা জাহান্নামী। খৃস্টানরা বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একাত্তর ফেরকা জাহান্নামী এবং একটি ফেরকা জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! অবশ্যই আমার উম্মাত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। তার মধ্যে একটি মাত্র ফেরকা হবে জান্নাতী এবং অবশিষ্ট বাহাত্তরটি হবে জাহান্নামী। উপস্থিত সাহাবাগণ জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ফেরকাটি জান্নাতী। তিনি বলেনঃ জামাআত (একতাবদ্ধ দলটি)। (ইবনে মাজাহ: ৩৯৯২)

মুসলিম হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান কেননা আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যে আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন তা আজ অবধি অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেছে। কারণ অন্য অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঐশী গ্রন্থগুলো সময়ের সাথে সাথে বিকৃত হয়েছে। মূল অনেক শিক্ষা বাদ পড়ে গেছে আর নতুন নতুন ইস্যু যুক্ত হয়েছে। ইসলামের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। পাশাপাশি, বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে আমরা নবীজী (সা.) এর বর্ণনায় অসংখ্য হাদিসও সাহাবাদের মাধ্যমে পেয়েছি। ফলে, যে কোনো তথ্য হাতে পাওয়ার পর তার সত্যতা আমরা নিজেরাই যাচাই করতে পারি। 

যদি কোনো তথ্য কুরআন ও হাদিসে পাওয়া না যায় তাহলে তা ইসলামসম্মত হতে পারে না। আর যারা আন্তরিক ও একনিষ্ঠভাবে সত্য শিখতে এবং অনুশীলন করতে চায়; আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে হেদায়েত করেন। ইসলামের কোনো বয়ান বা অবস্থান নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য থাকার কারণে মুসলিমদের মধ্যে অনেক সময় মতপার্থক্য দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মতবিরোধ নিরসন করতে চাইলে ইসলামিক রীতিনীতি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, সব বিষয়ে সবাইকে একমত হতেই হবে তা জরুরি নয়। তবে মতবিরোধ বজায় রাখতে গিয়ে আমরা যেন একে অপরের শত্রু না হয়ে যাই। দ্বিতীয়ত, যদি আমরা কোনো ভুল করেই বসি এবং তা অনুধাবনও করতে পারি, তাহলে সম্মান হারানোর ভয়ে কিংবা নিজের ইগোর কারণে সেই ভুলকে আঁকড়ে ধরে রাখা কাম্য নয়। কারণ যে কোনো ব্যক্তিকে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করতে বাধা দেয় তার ইগো এবং অহংকার। প্রকৃত মুসলিম কখনোই ইগোর ভিকটিম হতে পারে না। বরং যখন মুসলিমরা সত্য চিনতে পারে কিংবা যখন তাদের সামনে আল্লাহর কোনো নিদর্শন এসে হাজির হয় তখন তারা বিনয়ী হয়, আরো বেশি বিন¤্র হয়।

এক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর সীরাত পাঠ করেও আমরা মতপার্থক্য নিরসনের কিছু নজির দেখতে পাই। খন্দকের যুদ্ধের আগে যুদ্ধকৌশল নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। কেউ মদিনা শহরের বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন আবার কেউ কেউ শহরে থেকেই রক্ষণাত্মক কৌশলে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। যখন এ দুই দৃষ্টিভঙ্গির সাহাবাগণ নবীজী (সা.) এর কাছে এসে উপস্থিত হলেন; রাসূল (সা.) তাদের উভয়ের কথা শুনলেন এবং শেষ পর্যন্ত যারা শহরে অবস্থান করে লড়াই করতে চেয়েছিল তাদের সাথে তিনি একমত পোষণ করেন। তিনি কারো কথা না শুনেই তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেননি। বরং সবার সাথে পরামর্শ করেছেন। সবাইকেই মতামত দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং তারপর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের সাথে একমত হয়েছেন। ফলে, পরিবেশটা মোটেও তিক্ত হয়ে ওঠেনি। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ সাহাবা একমত হয়ে যাওয়ায় যারা প্রাথমিকভাবে শহরের বাইরে গিয়ে লড়াই করার পক্ষে ছিলেন তারাও নিজেদের মতামত প্রত্যাহার করে নেন এবং সবাই মিলেই যুদ্ধ কৌশল বাস্তবায়নে নেমে পড়েন।

যদি মুসলিমদের মধ্যে দুটো পক্ষ তৈরি হয়ে যায় কিংবা তাদের মধ্যে প্রকট মতবিরোধ থাকে, তাহলেও অবশ্যই একে অপরের মতামতকে সম্মান করতে হবে এবং যার যার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত যদি বিতর্কের মধ্য দিয়ে কোনো সুরাহা না হয় তাহলে পরস্পরের প্রতি বিনয়ী এবং শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমরা যদি নিজেদের কোনো ভুল খুঁজে পাই, তাহলে সেই ভুলের সাথে লেগে থাকা বা জিদ করা সঠিক হবে না। বরং ভুলটি সনাক্ত করে দেয়ার জন্য এবং আল্লাহর দেয়া বিধানকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভাই ও বোনকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এবং আল্লাহর দরবারেও শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। খলিফা ‘উমর (রা.) একবার বলেছিলেন, “আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির ওপর রহম করুন যে আমাকে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়।”

কিন্তু এতটা মার্জিতভাবে অনেক সময়ই আমাদের আলোচনা হয় না। আমরা যেসব বাদানুবাদ করি, দিন শেষে তা ঝগড়ায় ও ছিদ্রান্বেষণে রূপ নেয়। আমরা একে অপরকে তখন কষ্ট দিয়ে বসি। শুধু তাই নয়, এসব বাদানুবাদ বা বিতর্কগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো উন্মুক্ত প্লাটফর্মে হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ- যারা ইসলামের কাছে আসতে চেয়েছিলেন তারাও বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করে এবং ইসলামী প্লাটর্ফমগুলো থেকে দূরে সরে যায়। যারা সম্প্রতি নওমুসলিম হয়েছেন কিংবা মুসলিম হতে চাইছেন অথবা সেই নামধারী মুসলিমগুলো যারা এখন বলিষ্ঠভাবে ইসলাম অনুশীলন করতে চায়, তারা এসব বাহাসে ইসলামের প্রতি আগ্রহ অনেকটাই হারিয়ে ফেলে।

আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করি, তাদের মধ্যে যদি ফরজ বিধানের বিষয়ে কিংবা ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী নিয়ে কোনো দ্বিমত বা মতপার্থক্য না থাকে, তাহলে অন্যান্য আনুষঙ্গিক নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক নিয়ে খুব বেশি উৎকন্ঠিত হওয়া উচিত নয়। আমাদের বরং সবার প্রতি সুধারণা থাকা প্রয়োজন কেননা আমরা সকলেই ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোতে একমত হয়েছি এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান লালন করার এবং রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করার তৃপ্তি অনুভব করেছি।

বিবেচনায় রাখা দরকার, ইসলাম বিরোধী শক্তিরা ইসলামের অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা বিকল্প কূটকৌশল হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভাজন তৈরির প্রয়াস অবলম্বন করেছে। ইসলামের ইতিহাস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের অস্থিরতার নেপথ্যেও ইসলাম বিরোধী শক্তির তৎপরতা আবিষ্কৃত হয়েছে। অহেতুক একটি অবান্তর বিষয়কে সামনে এনে বিভিন্ন মহলকে উস্কানি দিয়ে উত্তেজিত করার এই প্রয়াস নানাসময়ই পরিলক্ষিত হয়েছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চলে আসায় এ ধরনের সুপ্ত অপতৎপরতা পরিচালনার সুযোগ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন এবং কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেয়া উচিত নয়। আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যে আমাদের ভেতর যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন ঈমানের বন্ধন থেকে আমরা যেন দূরে সরে না যাই। 

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম শায়খ সালমান আল আওদাহ হাফি: এ প্রসঙ্গে বলেন, “বর্তমান সময়ে, পৃথিবী জুড়েই মুসলমানেরা নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছে। মুসলমানরা সর্বত্রই এখন নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে। মুসলমানদেরকে জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, মুসলমানেরা নানা ধরনের পাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে। তারা অনেকেই পরিস্থিতির চাপে আল্লাহর মনোনীত দীন ইসলামকে ছেড়ে মানবসৃষ্ট দর্শন ও মতবাদ গ্রহণ করছে। অথচ ইসলাম নিয়ে যারা চর্চা করছেন, তাদের অনেকেই এসব বিষয়ে একেবারেই ধারণা রাখেন না। কারও কারও আবার নির্দিষ্ট কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাপারে বিস্তর আগ্রহ থাকে। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, ঐ সময় এটা হয়েছিল বা ওটা হয়নি। 

আবার কখনো কখনো আমরা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার জেরকে টেনে বর্তমান সময় অবধি নিয়ে আসি। সেগুলোর ওপর ভর করে আমাদের মধ্যে আরেকদফা বিভাজন হয়, নতুন করে প্রশ্ন তৈরী হয়। অথচ এই বিষয়গুলো ঈমানের কোনো উপকরণ নয়। যদি ঈমানের কোনো উপকরণ নিয়ে মতপার্থক্য হতো তাহলে সেটা ভয়ংকর কিছু হতে পারতো। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ইতিহাসের ঘটনাবলী সরাসরি আমাদের ঈমানের সাথে জড়িত না থাকলেও এগুলো নিয়ে বিভেদ-বিভাজনই আমাদের সবসময় কাবু করে রাখে। আমরা সিংহভাগ সময় এগুলো নিয়েই পড়ে থাকি।” (তথ্যসূত্র: পাবলিক ম্যাটারস)

একবার দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবন আল-খাত্তাব (রা.) তার অপছন্দের একজন ব্যক্তির কাছে গেলেন। লোকটি জানতেন যে, খলিফা কিছু যৌক্তিক কারণেই তাকে একটু কম পছন্দ করেন। তাই লোকটি সরাসরি উমর (রা.) কে প্রশ্ন করলো, “আপনি কি আমার অধিকার কেড়ে নেবেন?”

উমর (রা.) উত্তরে বললেন, “আমি তোমাকে পছন্দ করি না, তবে আমি তোমার অধিকারকে সম্মান করব। স্পষ্টতই, আমাদের মধ্যে থাকা মতপার্থক্যগুলো মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে খলিফা উমর (রা.) এর দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর রহম করুন। বিদ্যমান মতপার্থক্যগুলোর সুন্দর একটি সমাধান করার মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে একতা ও সংহতি বৃদ্ধি করে দিন। আমিন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ