রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বাইরে স্থাপন হচ্ছে দুই হাজার সিসি ক্যামেরা

 

খুলনা ব্যুরো : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ সময়ের প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডে। নির্বাচন নির্বিঘœ করতে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৪৮৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম মনিটর্রিং করতে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র এবং বুথের সামনে স্থাপন করা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ৩১টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা প্রায় দুই হাজার ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরাসরি মনিটর্রিং করবে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কেসিসিতে এ বছর ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৮ জন। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে তার ভোট প্রদান করবেন। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সহজ করতে এসব কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি বুথ স্থাপন করা হবে। ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ২৮৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৩২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৩ হাজার ৪৬৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সামনে একটি করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকবে। এছাড়া ১ হাজার ৭৩২টি ভোট কক্ষের প্রতিটিতে একটি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। রোববার তিনি এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা সরেজমিনে ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে কোথায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে তা সংশ্লিষ্টদের দেখিয়ে দেন। ইতোমধ্যে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ জানান, ইতোমধ্যে ইভিএম মেশিন খুলনায় এসেছে। ইভিএম মেশিনসহ ভোট গ্রহণের সরঞ্জাম আগামী ১১ জুন বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ১২ জুন ভোটগ্রহণ শেষে রাতে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

খুলনা সিটির ভোটে চেকপোস্ট বসিয়ে ৯০ লাখ টাকা জরিমানা : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরযানের ওপর প্রায় ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। খুলনা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ থেকে ইসিতে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ অনুযায়ী গত ১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত এই জরিমানা আদায় করা হয়। ১১২টি চেকপোস্টের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৪০টি মামলা হয় আর আটক করা হয় ১ হাজার ৯২৮টি যানবাহন। এতে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ৮৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৮০ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা। 

আগামী ১২ জুন খুলনা সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। এ ছাড়া ভোটের মাঠে ৩১টি ওয়ার্ডে ১৩৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সাধারণ দু’টি ওয়ার্ড ১৩ ও ২৪ নম্বরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা) এবং জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ কেএমপি কমিশনারের : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা সকাল সাড়ে ১০টায় সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা, বিপিএম-সেবা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অপরাধ পর্যালোচনা সভার প্রারম্ভে কেএমপি’র কমিশনার শ্রেষ্ঠ মামলা তদন্তকারী অফিসার, শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্ধারকারী অফিসার, শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার, শ্রেষ্ঠ ভিআর ও পাসপোর্ট তদন্তকারী অফিসার এবং শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টদেরকে নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন।

মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, নারী নির্যাতন এবং চুরি মামলার তদন্তের অগ্রগতি, ওয়ারেন্ট তামিলের পরিসংখ্যান, থানায় মামলা রজু ও নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান, সাজা ও খালাস মামলার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করা হয়।

কেএমপি কমিশনার সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের মুলতবি মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্ট তামিল হার বাড়ানো এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধারের নির্দেশ দেন। তিনি আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য নিজেদের সেফটি সিকিউরিটি বজায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকারি দায়িত্ব পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ডিসিদেরকে মনিটরিং এর জন্য দিক-নির্দেশনা দেন। উক্ত অপরাধ সভায় উপস্থিত ছিলেন কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. সাজিদ হোসেন; অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) মোছা. তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন; বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম, পিপিএম-সেবা; ডেপুটি কমিশনার (ডিবি) বিএম নুরুজ্জামান, বিপিএম; ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; ডেপুটি কমিশনার (এফএন্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু; ডেপুটি কমিশনার (ইএন্ডডি) মো. কামরুল ইসলাম; ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা; ডেপুটি কমিশনার (আরসিডি) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজীসহ অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, সহকারী পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, অফিসার ইনচার্জবৃন্দ এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারবৃন্দ।

লাঙ্গল প্রতীকের আহ্বান

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারপার্সন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিন খুলনার যথাযথ উন্নয়ন করা হবে। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন যে সব উন্নয়ন করেছি তা এখনও দৃশ্যমান। পল্লীবন্ধু এরশাদ এ দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখন তারই আদর্শে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি কঠোর হয় তাহলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যমূলক নির্বাচন সম্ভব। যেটি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা দেখেছি। খুলনাতেও এটি হওয়া সম্ভব। তাই খুলনার মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ফলাফলে নতুন কিছু হতে পারে। 

মতবিনিময়কালে কেসিসি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, দিদার বক্স ও সুনীল শুভ রায়, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আল জুবায়ের, নগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট মহানন্দ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এম হাদিউজ্জামান, জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর, ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম, মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, ইসমাঈল খান টিপু, ঢালি সফিকুর ইসলাম, আব্দুল ওদুদ মোড়ল, এডভোকেট অচিন্ত কুমার দাস, আশরাফুল ইসলাম সেলিম। তোবারক হোসেন তপু, প্রিন্স হোসেন কালু, মোল্লা সাইফুল ইসলাম, অপূর্ব দত্ত নেতু, মাজহার যদ্দ পান, মো. এজাজ, রেজা মহসিন, এম মনসুর শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ