রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

আজ মধুকবির ১৯৯ তম জন্মজয়ন্তী: সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা

কেশবপুর (যশোর) সংবাদদাতা: আজ ২৫ জানুয়ারি, ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, নাট্যকার, প্রহসন রচয়িতা, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯ তম জন্মবার্ষিকী। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। প্রতি বছর সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যেদিয়ে সপ্তাহব্যাপী তার জন্মবার্ষিকী পালন হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্র কেএম খালেদ। দেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে কপোতাক্ষ পাড়ের জনপদ। গত ৩ বছর মহামারি করোনার কারণে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মধুমেলা। এ বছর সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে মধুমেলা।   মধুসূদন ১৮২৪ সালের এই দিনে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছদ্মনাম টিমোথি পেনপোয়েম। পিতা রাজনারায়ন দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা তার মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রাম শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে। 

বাংলা সাহিত্যের এই মহাকবি মাত্র ৭ বছর বয়সে কলকাতা যান। খিদিরপুর স্কুলে দু‘বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। বাংলা, ফরাসী ও সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৪৪ সাল থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে মধুসূদন গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ১৮৪৮ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় মন না বসায় তিনি মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত প্রত্রিকা মাদ্রাজ স্পেক্টেটর এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। 

একই বছর ৩১ জুলাই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিশ নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর মধুসূদন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুনীকে বিবাহ করেন। তাদের নেপোলিয়ান নামক এক ছেলে ও শর্মিষ্ঠা নামক এক মেয়ে রয়েছে। তিনি পাশ্চত্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং মাইকেল উপাধি ধারণ করেন। ১৮৬০ সালে তিনি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরিতে চলে যান।  তিনি ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি “দি ক্যাপটিভ লেডি” কাব্যগ্রন্থ রচনা করে তৎকালিন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেন। ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনঃক্ষুন্ন হয়ে বুঝতে পারেন নিজ স্বদেশ ও শেকড়ের মর্ম। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখেন। বহু ভাষাবিদ মধুসূদন বন্ধু মহলের পরামর্শে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তিনি  ১৮৫৯ সালে বাংলা সাহিত্যে উপহার দেন শর্মিষ্ঠা নাটক, ১৮৬০ সালে রচনা করেন “একই কি বলে সভ্যতা,” বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ” এবং পূর্ণাঙ্গ পদ্মাবর্তী নাটক। এ নাটকে তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। একের পর এক রচনা করেন “মেঘনাদবদ কাব্য”(১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), কৃষ্ণকৃমারী (১৮৬১), ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি, হেক্টরবধ এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।  মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায় তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন দুপুর ২টায় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডে সমাধি দেওয়া হয়। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ