মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বহুমাত্রিক সংকটে ভারত

শেখ এনামুল হক

মহানবী (স:) সর্ম্পকে কটূক্তিতে মুসলিম বিশ্বের কড়া প্রতিক্রিয়া : সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এবং তার স্ত্রী উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) সর্ম্পকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির ( বিজেপি) দুই নেতা-নেত্রীর আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব। উপসাগরীয় দেশ  সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, সযুক্ত আরব আমীরাত,ওমান ও বাহরাইনের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, মালদ্বীপ, জর্ডান ও লিবিয়া ভারতের বিজেপি নেতা-নেতীর মন্তব্যের ত্রীব সমালোচনা করেছে। 

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এবং তাঁর স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) সম্পর্কে বিজেপি নেতা-নেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে কমপক্ষে ১৫টি দেশ ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি এসব দেশ ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। 

কুয়েতে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা হয়েছে। ইরান, কুয়েত ও কাতার এই ঘটনার নিন্দা জানাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। সৌদি আরব কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়ে সমালোচনা করেছে। উপসাগরীয় এবং এশিয়ার প্রভাবশালী কমপক্ষে পাঁচটি আরব দেশ মহানবী (সা:)-এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য ভারতে সরকারীভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব দেশ ভারতীয় পণ্য বর্জনেরও ডাক দিয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরেও এই অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে। ইতিপূর্বে ইসলাম, মুসলমান ও বাদশাহ  শাহজাহানের তৈরী তাজমহল সর্ম্পকে  অবমাননাকর মন্তব্যের ব্যাপারে নরেন্দ্র মৌদি সরকারের অর্থবহ নীরবতার ফলে ইসলাম বিদ্বেষী মহল আরো আস্কারা  পেয়েছে। 

বিশ্বের মানবাধিকারবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশাল ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

মহানবী (সা:)-এর ব্যাপারে অবমাননাকর মন্তব্যের নিরুদ্ধে ভারত সরকার ধীরে চল নীতি গ্রহণ করে। তবে কাতার ও কুয়েত তাদের দেশে ভারতীয় দূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানোর পর ভারত সরকার নড়েচড়ে বসে। 

কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এব্যাপারে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সরকারীভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে বলে প্রত্যাশা করে। কুয়েত বলেছে, এ ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভারতের চরমপন্থী ও হিংসাত্মক মতবাদ বৃদ্ধিপাবে।

ওমানের গ্রান্ড মুফতি বলেন, মোদির দল ইসলামের বিরুদ্ধে যে সব বক্ত্যব দিচ্ছে তা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।

মিশরের আল আজহার বিশ^বিদ্যালয় থেকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এ ধরনের মন্তব্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মারাত্মক ঘৃণা ও যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করবে। 

মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে মোদি সরকার নড়েচড়ে বসে। বিশেষত সৌদি আরব, ইরান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমীরাত, কাতার ও কুয়েতের মত মুসলিম দেশগুলো সমালোচনামুখর হলে আর চুপ থাকতে পারেনি সরকার। ব্যাপক সমালোচনার মুখে নুপুর শর্মাকে সাময়িক আর জিন্দালকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিজেপি।

নুপুর-জিন্দালের বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেছে সৌদি আরব। অন্যদের বিশ^াস ও ধর্মের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানায় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে কাতার, কুয়েত ও ইরান। কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ টুইট করেছেন। বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেতা-নেত্রীর মন্তব্য ব্যক্তিগত অভিমত, সরকারের মনোভাব নয়। তিনি আরো বলেন, ওআইসি সচিবালয়ের দেয়া বিবৃতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেকাইয়া নাইডু এখন কাতার সফরে রয়েছেন। এর মধ্যেই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বিজেপি নেতা-নেত্রীর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে দেশটির সরকার। কাতার জানিয়েছে, পুরো বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে ভারতকে। একই দাবি কুয়েত, ইরান, সংযুক্ত আরব আমীরাত, সৌদি আরব ও ওমানের।

ভারত সরকারের আশংকা, মহানবী (সা.)কে নিয়ে বিজেপি নেতা-নেত্রীর অবমাননাকর মন্তব্যে আরব বিশে^র সঙ্গে দিল্লির কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। কেননা এসব দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্পর্কের অবনতির চাপ সামলানোর বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে দিল্লি। শুধু বিদেশে নয়, দেশের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধীদল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বলেছে, বিজেপি ধোঁকা ছাড়া আর কিছু দিচ্ছে না। মুসলিম দেশগুলোর সাথে নয়াদিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় ভারতীয় কূটনীতিকরা পরিস্থিতি সাম্ল দেয়ার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাকর পর্যায়ে রয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নুপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে ভারতের প্রভাবশালী ও জনবহুল উত্তর প্রদেশের কানপুরে সংঘর্ষ হয়েছে। গত শুক্রবারের এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভারতের বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদ নিয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ বিতর্কে বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা মহানবী (সা.)কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাযের পর মুসলমানদের পক্ষ থেকে দোকানপাট বন্ধ রাখার আহ্বান জানালে হিন্দুরা এর বিরোধিতা করে। এক পর্যায়ে দুইপক্ষে সংঘর্ষ বাধে এবং তাদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে ১৩ পুলিশ সদস্য ও দুই পক্ষের ৩০ জন আহত হন বলে জানান কর্মকর্তারা।

পুলিশ কমিশনার বিজয় সিং মিনা বলেন, ৫০/১০০ তরুণের একটি দল হঠাৎ সড়কে নেমে শ্লোগান দিতে থাকলে অপর পক্ষ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়। তিনি বলেন, ৮/১০ জন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারা দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। পুলিশ কমিশনার বলেন, ভিডিও দেখে লোকজন শনাক্ত করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ