ঢাকা, বোরবার 05 May 2024, ২২ বৈশাখ ১৪৩০, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

যে কারণে ডনবাস অঞ্চল দখল করতে চায় রাশিয়া

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: রাশিয়া এবার তাদের সৈন্যদের কিয়েভ থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসের দিকে নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে এই যুদ্ধ অনেক দিন ধরে চলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, ইউক্রেনের এই প্রাচীন শিল্পাঞ্চলকে মুক্ত করা তার লক্ষ্য। কিন্তু সেটা কি সম্ভব হবে? তবে ইতোমধ্যে লক্ষ্য অর্জনে রুশ সেনারা ডনবাস ঘিরে ফেলেছে।

অন্যদিকে ইউক্রেনের সুপ্রশিক্ষিত বাহিনীগুলোকে ইতোমধ্যেই পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ গত আট বছর ধরে সেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে তাদের লড়াই চলছে। এসব যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তারপরেও তারা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।

ডনবাসে রাশিয়ার নতুন করে সামরিক শক্তি বাড়ানোর জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যেক মিটার জমির জন্য আমরা লড়াই করবো।’

ডনবাস কোথায় এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ডনবাসের কথা বলেন তখন তিনি ইউক্রেনের কয়লা এবং ইস্পাত-উৎপাদনকারী অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ দুটি অঞ্চল লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক-এর সমগ্র এলাকাকে বোঝান। এই এলাকা দক্ষিণের মারিউপোল বন্দরশহর থেকে শুরু করে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটো মনে করে রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে নেয়ার মাধ্যমে দনিয়েৎস্ক থেকে ক্রাইমিয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠার করতে চায়।

ব্রিটেনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট বা রুসির স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, মূল বিষয় হলো - ক্রেমিলন এই অঞ্চলকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে যার অর্থ এই অঞ্চল ইউক্রেনের চেয়েও অনেক বেশি রাশিয়ান নাগরিক রয়েছে। তবে এসব অঞ্চলে হয়তো রুশভাষী লোকেরাই বসবাস করেন, কিন্তু তারা এখন আর রুশপন্থী নন।

এদিকে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর রাশিয়া দাবি করছে যে, তারা লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ এবং দোনেৎস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে রুশ প্রেসিডেন্টকে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

পুতিন কেন ডনবাস নিয়ন্ত্রণে নিতে চান

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা পূর্বাঞ্চলে গণহত্যা পরিচালনা করছে, যদিও তার এই অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন পূর্বদিকের এসব অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলো ইউক্রেনের হাতে। বাকি অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরিচালনা করতো যারা সেখানে আট বছর আগে শুরু হওয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগেভাগে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটো এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাশিয়া যদি এই দুটো বৃহৎ অঞ্চল জয় করতে পারে, তাহলে প্রেসিডেন্ট পুতিন দেখাতে পারবেন যে, এই যুদ্ধ থেকে তিনি কিছু একটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

পুতিনের কৌশল কী

রাশিয়ার সৈন্যরা উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে অগ্রসর হয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই অঞ্চল অনেক বৃহৎ। এছাড়াও এখানকার ভৌগোলিক জটিলতাকেও ছোট করে দেখা যাবে না বলে মনে করেন লন্ডন কিংস কলেজের সংঘাত ও নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক ট্রেসি জার্মান।

সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পরেও রাশিয়া তাদের সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ দখল করতে পারেনি। কিন্তু তারা ইজিওম শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের জন্য এই শহরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জার্মান অধ্যাপক আরো বলেন, আপনি যদি দেখেন ইজিওমে তারা যেটা করছে তা হলো - এখান দিয়েই প্রধান মহাসড়কগুলো গেছে, যার অর্থ হচ্ছে তারা তাদের যুদ্ধ-সামগ্রী আনার ক্ষেত্রে এসব রাস্তা ও রেলপথ ব্যবহার করবে। রাশিয়ার পরবর্তী বড় টার্গেট হবে স্লোভিয়ান্সকের একটি সড়ক। এই শহরে সোয়া এক লাখ মানুষের বাস। রুশসমর্থিত বাহিনী ২০১৪ সালে শহরটি দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দখলে চলে যায়। রাশিয়ার আরো একটি বড় টার্গেট হবে দক্ষিণ দিকে ক্রামাটরস্ক শহর দখলে নেয়া।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলছে - ইউক্রেন যদি স্লোভিয়ান্সক শহরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে, তাহলে দুটো অঞ্চল দখলে রাশিয়ার অভিযান ব্যর্থ হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ