বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

নাচোলের ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ

শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : এক গম্বুজ বিশিষ্ট আলী শাহপুর মসজিদটি কালের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ৫শ বছরের পুরনো এ প্রাচীন মসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের ২নং ওয়ার্ডের আলী শাহপুর গ্রামে অবস্থিত। এ ঐতিহাসিক মসজিদটির কথা অধিকাংশ মানুষই জানে না।
সরকারী বা বেসরকারীভাবে এ মসজিদটির ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির তথ্য উৎঘাটন বা সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মসজিদটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। মসজিদের দেওয়ালের প্রস্থ ৩ফুট। দেওয়াল অক্ষুন্ন রাখার বেস্টনীসহ এর প্রশস্থতা ৪২ইঞ্চি। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে ৪টি বুরুজ। গম্বুজের চুড়ায় একটি মিনার আছে। উত্তর দক্ষিনে ২টি খিলান জানালা রয়েছে। দেয়ালের চার কোনায় চারটি নাম রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালের ভিতরাংশের মধ্য স্থানে রয়েছে একটি ছোট খিলান মেহরাব। পূর্ব দেওয়ালের মধ্যে রয়েছে একটি খিলান দরজা। এ দরজার দু’পাশে রয়েছে ইস্টক অলংকরনে সজ্জিত দুটি দরজা। কাছ থেকে দেখে মনে হবে দরজা দুটি কাঠের এবং নানা নকশা অলংকরনে সজ্জিত যা সম্প্রতি বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে হবে; কিন্ত প্রকৃত পক্ষে দরজার যাবতীয় অলংকরন ইটের এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ। মসজিদটি গৌড়িয়া ইট দ্বারা নির্মিত। মসজিদের ভিত্তি, দেওয়াল ও গম্বুজটি খিলানের উপরে স্থাপিত।
ভিতর ও গম্বুজে বিচিত্র নকশা রয়েছে। মসজিদের বহিরাংশের দেওয়াল গাত্রে বিচিত্র মেরলন নকশা বিদ্যমান। এর চার কর্নারে চারটি বুরুজের উপর রয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট চারটি মিনার। কোন শিলালিপির চিহ্ন নেই। মসজিদের উত্তর পশ্চিম কর্নারে রয়েছে একটি পুকুর। এটি মুসল্লীরা ওজু ও গোসলের কাজে ব্যবহার করতো; কিন্ত নতুনভাবে সম্প্রসারন করায়
মসজিদটির প্রকৃত অবয়ব পুরা অংশ ঢাকা পড়েছে।
এ মসজিদের সঠিক ইতিহাস পাওয়া না গেলেও মসজিদের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে সবাই মনে করেন এ মসজিদটি প্রায় ৫ শত বছর আগে নির্মিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন ৬/৭ শত বছর আগে এ এলাকায় আলীশাহ নামক ধর্মপরায়ন এক ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের জন্য এসে এই গ্রামে এ মসজিদটি নির্মান করেন। আর এ কারনেই তার নামানুসারেই গ্রামের নাম রাখা হয়।
মসজিদটির দু’দাগে ৩৬ শতক জমি হযরত আলী শাহর নামে আর,এস রেকর্ডে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ তথ্য হতে অনুমান করা যায় যে, হযরত আলীশাহ নামক কোন এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এটি নির্মান করেন এবং তার নামানুসারে মসজিদ ও গ্রামটির নামকরন করা হয়।
এলাকাবাসীরা আরো জানান, স্বাধীনতার আগে মসজিদটির আসে-পাশে বনজঙ্গলে ভরা ছিল। তখন এটিকে কেউ মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করতো না। স্বাধীনতার পর নিকটবর্তী ফুরশেদ গ্রামের রসুল মিয়া (৭৫) নামক এক ব্যক্তি মসজিদটির সংস্কার করে তার ছেলেদের নিয়ে সর্বপ্রথম জুম্মার নামাজ আদায় করেন। পরে মসজিদটি স্থায়ীভবে আরো সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে ওই গ্রামের জামে মসজিদ হিসাবে সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে। মসজিদটির আধা কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে পীরপুকুর নামে একটি উঁচু ঢিবি ও পুকুরের অস্থিত্ব বিদ্যমান। ছোট এ ঢিবিটির উপর ও আশে-পাশে প্রচুর টুকরো টুকরো পাথর ও ইটের ভগ্নাংশ দেখতে পাওয়া যায়। স্থানটি প্রায় দেখতে জঙ্গালাকীর্ন।
কালের বিবর্তনে অনেক ইতিহাস হারিয়ে গেছে। বহু প্রাসাদতুল্য ইমারত ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে; কিন্ত পবিত্র স্থানগুলি আজো কালের সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপক গবেষনা, পর্যবেক্ষন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলে এর ইতিহাস যেমন বেরিয়ে আসবে।
তেমনি মসজিদটি নাচোল উপজেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পুরনো দিনের মুসলিম সভ্যতার পরিচায়ক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করবে। তাই মসজিদটি সংস্কার ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী বলে প্রত্নতাত্বিক বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার অভিজ্ঞ মহল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ