মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নাগাল্যান্ডে সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলীতে প্রাণ গেল স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর ১৪ নাগরিকের

৫ ডিসেম্বর , রয়টার্স, এনডিটিভি ,  হিন্দুস্তান টাইমস, এএফপি , আনাদোলু : মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ভারতের নাগাল্যান্ড দেখা  ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য নাগাল্যান্ডে সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিতে রাজ্যের স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তত ১৪ জন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১ সদস্য নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের গুলিতে ভুলক্রমে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশটির সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তারা গত কাল রোববার এ তথ্য জানান।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, গত শনিবার গভীর রাতের এ ঘটনায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার খবরে তিনি ‘ব্যথিত’। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফু রিও বলেছেন, এ ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। ঘটনাটির জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন তিনি।

এ ঘটনায় অন্তত এক ডজন সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। নাগাল্যান্ডে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযানের সময় প্রায়ই নিরীহ গ্রামবাসীরা সেনা সদস্যদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।

আসাম রাইফেলসের সদস্যদের তেমন একটি অভিযানের সময় নাগাল্যান্ডের মন জেলায় মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম অটিংয়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। রাজ্যটিতে মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ এই আসাম রাইফেলস। দিনের কাজ শেষে একটি ট্রাকে করে বাড়িতে ফিরছিলেন ৩০ বা তারও বেশি খনিশ্রমিক। আসাম রাইফেলসের অস্থায়ী ঘাঁটি পার হওয়ার সময় নির্বিচার গুলি শুরু হয়। কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ওই এলাকায় কিছু বিদ্রোহী আনাগোনা করছে বলে সেনাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। ট্রাকটি দেখে ভুলে ওই খনিশ্রমিকদের তাঁরা বিদ্রোহী মনে করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয় শ্রমিক প্রাণ হারান।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রামে গুলির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ অস্থায়ী ঘাঁটি ঘিরে ফেলেন। তাঁরা আসাম রাইফেলসের গাড়িতে আগুন দেন এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সেনাদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, এ সময় আসাম রাইফেলসের সেনাসদস্যরা পাল্টা আক্রমণ চালান। তাঁদের দ্বিতীয়বারের হামলায় আরও আট গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত হন।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিরুর একটি কয়লা স্থাপনা থেকে পিক আপ ভ্যানে করে তারা নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন। ভ্যানে ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ডের (এনএসসিএন) বিদ্রোহীরা ছিল বলে ধারণা করেছিল নিরাপত্তা সদস্যরা। প্রতিবাদে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘিরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। আত্মরক্ষার্থে অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা আবারও গুলি চালায়। দু’পক্ষের সংঘাতে এক জওয়ান নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

স্থানীয় সংগঠনগুলো এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আর না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে সতর্ক করেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বিচার না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) রাজ্যের রাজধানী কোহিমার কাছে কিসামায় হতে যাওয়া বার্ষিক হর্নবিল উৎসব থেকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ছয়টি গোষ্ঠীর নাম প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে। ইএনপিও কয়েক মাস আগে তাদের এলাকায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল বলে জানা গেছে।  

“আমাদের লোকজন যখন নিহত হচ্ছে তখন কীভাবে উৎসবে নাচবো আমরা?” এক বিবৃতিতে বলেছে ইএনপিও।  

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ