বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

সিলেটে আগের মত নেই আতঙ্ক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

সিলেট ব্যুরো : সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। বাজার, মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় খুলে দেয়া হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে প্রাইমারি থেকে কলেজ-মাদরাসা খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী আগমনে বিদ্যালয়গুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। এ যেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মিলন মেলা। মূলত করোনা সংক্রমণ অনেকটা হ্রাস পাওয়ায় প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে আগের মত নেই আতঙ্ক। নেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। মাত্র মাসখানেক আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঢু মারলে দেখা যেত করোনায় মৃত্যুর ভয়াবহ খবর। সিলেটের রাস্তায় রাস্তায় দেখা যেতো করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ছুটোছুটি।
এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে স্বজনদের দৌঁড়ঝঁপ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হাসপাতালে সাধারণ বেড পাওয়াও ছিল দুষ্কর, আর আইসিইউ বেড তো ছিল সোনার হরিণ। তবে কিছুদিনের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সিলেটের হাসপাতালগুলোতে অনেকটা খালি পড়ে আছে বেড। নেই আগের মতো রোগীর চাপ।
সিলেটসহ সারাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ শুরু হয়। ঈদের সময় আট দিন বিরতি দিয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ছিল কড়া বিধি-নিষেধ। এরপর সংক্রমণ কমে আসায় ১১ আগস্ট থেকে বিধি-নিষেধ শীথিল করে সরকার। তবে লকডাউনের সুফলে সিলেটে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ।
লকডাউন চলাকালে সময় সিলেট বিভাগে করোনায় রেকর্ড ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্তের ভয়াবহতায় মানুষ বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। এসময় সিলেটে প্রতিদিনই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যেত। অনেক যুবক-যুবতিও মারা গেছেন করোনা ভাইরাসে।
ওই সময় মানুষ ছিলেন চরম আতঙ্কে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য সিট পেতে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে স্বজনদের ঘুরতে দেখা গেছে প্রতিদিন। একটি আইসিইউ বেড পেতে থাকতে হতো অপেক্ষায়। নাম লেখিয়ে রাখতে হতো হাসপাতালের খাতায় কেবলমাত্র একটি আইসিইউ বেড পাওয়ার জন্য। পাশাপাশি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটও দেখা দিতো মাঝে মধ্যে। হাসপাতালে সিট না পেয়ে অনেক রোগীকে বাসাবাড়িতে রেখেই দেয়া হয় অক্সিজেন সাপোর্ট।
তবে মাসখানেক সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে সিলেটের হাসপাতালে অনেকটা কমেছে করোনা রোগী। নেই রোগী নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সের ছুটোছুটি। কিংবা আগের মতো স্বজনদের রুদ্ধশ্বাস দৌঁড় নেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। তবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন- লকডাউন দেওয়ার সুফলতা এখন ভোগ করলেও মানুষ যদি সচেতন না থাকেন তাহলে সিলেটে আবারো বাড়তে পারে করোনার ভয়াবহতা।
এদিকে, সিলেটে করোনা ভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা) পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছেন ৪৯ জন নতুন রোগী। নতুন ৫ জন নিয়ে বিভাগে মৃতের সংখ্যা এখন ১১২৯ জন। এর আগে গেল ১১ সেপ্টেম্বর একদিনে সিলেটে ২ জন করোনা রোগী মারা গিয়েছিলেন। এদিন সিলেটে মাত্র ৫৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর ১১৭ জন, ৯ সেপ্টেম্বর ৭১ জন, ১০ সেপ্টেম্বর ৬৭ জন ও গত ১১ সেপ্টেম্বর ৫৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন সিলেট বিভাগে। ধারাবাহিকভাবে করোনার সংক্রমণ কমছে সিলেটে। দীর্ঘ দিন পর শনাক্তের সংখ্যা নেমেছে পঞ্চাশের নিচে।
সিলেটে করোনা রোগী কমেছে সেটির সত্যতা হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেটে করোনা চিকিৎসার নির্ধারিত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন সেখানে। এর আগের দিন অর্থাৎ- শনিবার ৪৭ জন রোগী ছিলেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ নাফিজ মাহদি বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে কিছু দিন আগেও একটি বেড পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। গত ১০ দিন থেকে করোনা রোগী অনেকটা কমেছে এ হাসপাতালে।
সিলেটের বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও রোগীর সংখ্যা কম। ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ওই হাসপাতালে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২টি আইসিইউ বেডে রোগী রয়েছেন বলে জানান হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। এছাড়া ৩২টি সাধারণ বেডের মধ্যে ১৬ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। ওয়েসিস হাসপাতালেও ৪টি করোনা বেড রেখে অন্যগুলো বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা চলছে। কিছু দিন আগেও সিলেট উইমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করতে হিমশিম খেতে হতো। এখন এই হাসপাতালের করোনা ইউনিয়ন অনেকটা শূন্য।
এছাড়া সিলেট শামসুদ্দীন হাসপাতাল, মাউন্ট এডোরা হসপিটালেও রোগীর চাপ কম রয়েছে বলে জানিয়েছন সংশ্লিষ্টরা।
করোনা সংক্রমণ কমে আসা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সর্বশেষ লকডাউন যৌক্তিক সময়ে ছিল। যার সুফলতা আজকে আমরা ভোগ করছি। তিনি জানান, করোনার তৃতীয় ঢেউ যে কোন সময় শুরু হতে পারে। তাই সিলেটবাসী সহ সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ