রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

করোনায় বাড়ছে মনোরোগের ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার : করোনা আক্রান্তদের মধ্যে বিষন্নতা, ভুলে যাওয়ার মতো মনোরোগ এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে দাবি করছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।  গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা সংক্রমিতদের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে মানসিক বা স্নায়ুবিক সমস্যা নতুন করে তৈরি হয়েছে অথবা আগের সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। তবে, হাসপাতাল বা আইসিইউতে যারা ভর্তি ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির মাত্রা আরও বেশি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং করোনাভাইরাস সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
গবেষক দল যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ লাখের বেশি করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা নথি পর্যালোচনা করে তাদের বহুল প্রচলিত মনোরোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতোটা তা জানার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের তালিকায় ছিলো: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, পারকিনসন্স, গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোম (এক ধরনের ফ্লু-জনিত উপসর্গ), ভুলে যাওয়া, ভাবের অসঙ্গতি, উদ্বেগ অসঙ্গতির মতো রোগের নাম।
গবেষণা থেকে, করোনা আক্রান্তদের উদ্বেগ এবং ভাবের অসঙ্গতিতে ভুগতে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। খুবই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চাপ থেকে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। এছাড়াও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মানবদেহে যে শারীরিক প্রতিক্রিয়া তার ফলাফল হিসেবে স্ট্রোক ও ভুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। কিন্তু, পারকিনসন্স বা গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে করোনার কোনো যোগসূত্র পাননি গবেষকরা। গবেষণাটি পর্যবেক্ষণধর্মী হওয়ায় কোভিড-১৯ আদৌ এসব রোগের কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে কি না? অথবা করোনায় ভোগা ব্যক্তিদের কিছু অংশ ভাইরাসটির কারণেই পরের ছয় মাসে স্ট্রোক বা বিষণ্নতার শিকার হয়েছেন কি না? তা গবেষকরা নিশ্চিত করতে পারেননি। গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায়, অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের তুলনায় করোনায় ভুগে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মানসিক বা স্নায়ুবিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা ১৬ শতাংশ বেশি এবং ফ্লুতে ভোগাদের তুলনায় এই হার ৪৪ শতাংশ বেশি।
আরেকটা আশঙ্কার কথা হলো, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা মস্তিষ্কের জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সেরে ওঠার পর মনের ভাব, উদ্বেগ বা মনোরোগের অসঙ্গতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিয়েছিল ২৪ শতাংশের ক্ষেত্রে এবং অসুস্থ থাকাকালীন ডেলিরিয়ামের অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২৮ শতাংশ রোগীর, জানিয়েছেন গবেষকরা। এ ব্যাপারে অ্যালঝেইমার রিসার্চ ইউকের গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. সারা ইমারিসিও বলেন, আগের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাদের আগে থেকেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে, তারা করোনা আক্রান্ত হলে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির ঝুঁকি বেশি থাকে। নতুন এই গবেষণায় জানার চেষ্টা করা হয়েছে, বিপরীত দিক থেকেও একই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে কিনা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদ হুসাইন বলেন, করোনাভাইরাস মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং সরাসরি এর ক্ষতি করে সে বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে। এর অন্যান্য পরোক্ষ প্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা যা থেকে রোগীর স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীরে যে সাধারণ প্রদাহ সৃষ্টি হয় সেটাও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বলেন মাসুদ হুসাইন।
গবেষণায় করোনা আক্রান্ত যে এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার এক বা একাধিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সেটাই ছিল প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তবে করোনার কারণে এ ধরনের অসুস্থতা ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন গবেষকরা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ