রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

রেজা খসরুর ‘মস্তিষ্কে কফিশপ’

তাজ ইসলাম :

একজন কবির প্রথম কাজ লিখে যাওয়া। লিখতে লিখতেই মনের জমিন বিচরণ করে প্রকাশের ভাবনা । দ্বারস্থ হন নানা মাধ্যমের। কবিতার খাতা থেকে কবিতা পত্রস্থ হয় পত্রপত্রিকায়।

এক মলাটে বই আকারে নিজের সৃষ্টিকে পাঠকের সামনে হাজির করা একজন কবির পরম পাওয়া। শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করবে পাঠক।  বিচারের ভার মহাকালের কাছে অর্পণ করে কবি প্রকাশ করে যান নির্দ্বিধায়। 

প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি অন্যরকম। তরুণ কবির কাছে এটি আনন্দের ও সুখের। রেজা খসরু  তার লেখক জীবনের সৃষ্টিসমূহ থেকে বাছাই করে পাঠকের সামনে পরিবেশন করেছেন তার প্রথম বই  “মস্তিষ্কের  কফিশপে”। 

"মস্তিষ্কের কফিশপে" একজন তরুণ কবির প্রথম কবিতার বই। আনন্দ ও উদ্দীপনার স্মারক।বইয়ের নামকরণ আমাদের কাছে চমৎকার মনে হয়েছে। শব্দযুগলে আছে আধুনিকতা, বিজ্ঞান মনস্কতা, কল্পনার যাদুর ছোঁয়ার পরশ। আমরা আশাবাদী শব্দের এমন অভিনব উপস্থাপনে সক্ষমতা দেখাবে খসরু। শব্দে শব্দ জোড়া দিয়ে নতুন অর্থবহ শব্দের, শক্তিশালী কবিতার জনক হবে রেজা খসরু। তার কবিতা উপমা, চিত্রকল্পের কারুকার্যে হবে স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। থাকবে বিষয়ের বিচিত্রতা। কবি রেজা খসরু কবিতায় জানান দেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা। কোন কোন অভিজ্ঞতা রূঢ় এবং তিক্ত। পাঠক জানতে পারে নারী কেমন? কবি বলেন " মৃত্যু যেমন সত্য / তেমন সত্য / নারী তুমি বিশ্বাসঘাতক।/( নারী)। আসলে কী তাই! হয়তো না। কিন্তু কবির অভিজ্ঞতা বলে তাই।

কবির জন্য কবিতার বিষয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শহর রেজা খসরুর কবিতার অন্যতম বিষয়। শহর এখন মানব জীবনের অপরিহার্য অংশও বটে। কবিও তাই তার কবিতায় শহরকে নিয়ে এসেছেন বারবার। ভিন্ন ভিন্নভাবে, ভিন্ন নামে, ভিন্ন বয়ানে। শহরমুখী কবি তাই কখনো বলেন " এই শহরের পাখিরা সব আমায় চিনে"  শহর দেখে কবির মন ভরে না তাই তিনি " চার দেয়ালের চৌকাঠ পেরিয়ে" মাঝে মাঝেই শহর দেখতে বেরোন। এবং অভিজ্ঞতা হয় এ শহরে সব বিক্রি হয় " এই শহরে শুধু প্রেমিক বিক্রি হয় না"। শহরের পর কবি আচ্ছন্ন হন মানুষে। কবিতার বিষয়ে মানুষ তার আরেক পছন্দ। মানুষ বিষয়ে তার স্বীকারোক্তি  " আমি আসলে মানুষ হয়ে জন্মেছিলাম" তারপর?  তারপর তার উপলব্ধি হল তিনি " নিখাদ মাটির মানুষ।/ তবে/ অবশ্যই একজন হতাশ মানুষ!/"।শব্দের পৌনপুনিকতা বা একই বিষয়ে বারবার আবর্তনের মায়াজাল ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হয় কবিকে। পাঠক তখন তৃপ্ত হন নতুনত্বের স্বাদে। রেজা খসরু এগিয়েছেন সামনের দিকে। কবিতার প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে কুড়িয়েছেন বর্ণিল রঙ। এঁকেছেন জীবনের ছবি। শব্দে শব্দে বুনন করেছেন প্রেম,বিরহ,প্রকৃতির কথা।

উপমা, উৎপ্রেক্ষা,  চিত্রকল্প,শব্দের চিত্তাকর্ষক প্রয়োগে তরুণ কবি কবিতার প্রাঙ্গণে নিজের স্বকীয়তাকে পাঠকের সামনে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। কবিতা শব্দের খেলা। কবিতা  বলে দেয় কে কত বেশি পারঙ্গম। রেজা খসরুর অনেক কবিতাই বক্তব্যধর্মী। সাবলীল বাণীতে বিবৃত হয়েছে কবির বক্তব্য। তবে চিত্রকল্পময়তাও আছে তার কোন কোন কবিতার দেহে। তার ক্ষুদ্র একটি কবিতা এখানে তুলে ধরছি" আজ রাতে আমার মরণ হবে/ কাঁটাতারে ঝুলবে গুলিবিদ্ধ লাশ/ আমি প্রতিদিনই মরি/ কারণ/ আমি বাংলাদেশ/। ( কাঁটাতারের ইতিকথা)।

আবার পড়তে পড়তে শব্দ বা বাক্যের অসংগতি পড়ার গতিকে রুদ্ধ করে দেয় কখনো কখনো। আমরা যখন পাঠ করতে থাকি "বল প্রিয়া আর কী চায়?" ( তোমায় একটি নাম দিব প্রিয়া),গাছের ছাকল- বাকলও কিনতে হয় টাকায় "(এই শহরে শুধু প্রেমিক বিক্রি হয় না) এসব বাক্য বা শব্দ প্রয়োগে পাঠক হোচট খায়। এক্ষেত্রে কবিকে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে অবশ্যই। 

"মস্তিষ্কের কফিশপে" কবি বয়সে তরুণ। তারুণ্যের দ্রোহ আছে তার কলমে। তার কলমের কালি রক্ত হয়ে যায়। দ্রোহে গর্জে ওঠে কবি। তিনি লিখেন " এই রক্ত শোষিত বাংলার কথা বলে।/ এই রক্ত ইতিহাস জাগিয়ে তোলে।/ এই রক্ত বলে/লক্ষপ্রাণ কিনেছে ৫৬ হাজাট বর্গমাইলের কারাগার। ( রক্তরা কথা বলে)। 

আমরা বলতে পারি  কবিতার শর্ত মেনে রচিত পঙক্তিমালা প্রথমত কবিতা। তারপর শ্রেণীবিন্যাসে নির্ণয় হবে কোনটা কতটুকু শ্রেষ্ঠ কবিতা। একজন কবির বাসনা থাকা উচিৎ একটি শ্রেষ্ঠ কবিতার জনক হওয়া। দেদার লেখাই জরুরী নয়। বাছবিচার করে উত্তম কিছু উপহার দেয়াই কবির সাধনা। রেজা খসরু তরুণ। নিজে চেষ্টা, শ্রম ঢেলে দিলে আশা করা যায় উজ্জ্বলদের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।"মস্তিষ্কের কফিশপে" তার প্রথম বই। এ বইয়ে ৬৪ পৃষ্ঠায় আছে বর্ণিল বর্ণনার ৪৮ টি কবিতা। কাব্যপ্রেমীদের মন জয় করুক কবিতা ও কবিতার বইটি। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী আল নোমান। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান  ধূমকেতু বাংলাবাজার ঢাকা। মূল্য রাখা হয়েছে ১৮০ টাকা। সুন্দর প্রচ্ছদ, উন্নত কাগজ,ঝকঝকে ছাপার বইটি কিনে কবি ও কবিতার পাশে থাকুন।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ