রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

হালিমা নদীর ‘কোলাব্যাঙের বিয়ে'

শাহ আলম বাদশা: ছড়াকার হালিমা নদী, অল্পবয়সী হলেও তার ছড়ার হাত বেশ ভালো। তার লেখালেখির শুরুটা ছড়া ও শিশুসাহিত্য দিয়ে হলেও বর্তমানে তিনি উপন্যাস ও গল্পের দিকেও ঝুঁকেছেন। তাই বলে ছড়া ও শিশুসাহিত্যকে তিনি বাদ দেননি। ফলে বইমেলা ২০২১ উপলক্ষে  তার প্রথম শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ " কোলা ব্যাঙের বিয়ে” প্রকাশিত হয়েছে।

চাররঙ্গা সুন্দর প্রচ্ছদ সম্বলিত সাদাকালো শিশুতোষ সাইজের দু'ফর্মার ছোট্ট ছড়াগ্রন্থটির প্রতিটি ছড়ার সাথেও সাদাকালো অলংকরণ রয়েছে, যা বেশ দৃষ্টিনন্দন। তবে প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে একই অলঙ্করণ যুক্ত করায় একটু দৃষ্টিকটুই লাগে।

কোলাব্যাঙের বিয়ে ছড়াগ্রন্থটিতে নানা স্বাদের এবং নানা বৈচিত্র্যের মোট ১৪টি ছড়া রয়েছে। ছড়াগুলো হচ্ছে মামার বাড়ি, রোজ সকালে, খোকন সোনা, একটি পাখি, খোকার ভ্রমণ, ঠিক করেছি হবো আমি, পরীর দেশে, আঁকাআঁকি, কাক ও ছোট্টপাখি, জগৎসেরা বীর, ওঠো সোনা, মজার ছড়া, খুকির বিয়ে ও কোলাব্যাঙের বিয়ে।

স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত সবগুলো ছড়াই শিশুতোষ এবং শিশুদের বিনোদনমূলক। ছড়াকার শিশুমনের চাহিদা ও  চিন্তাভাবনাগুলোকেই ছন্দতালে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন, যা ছেলে-বুড়ো সকলেরই উপভোগ্য হবে। আমাদের চারিদিকের সবুজ প্রকৃতি, পাখ-পাখালি, গঙ্গা-ফড়িং, পোকামাকড়, শিশুভাবনা, আপনজন, অতিপ্রাকৃতিক কল্পকথা ইত্যাদিই তাঁর ছড়ার মূল উপজীব্য। প্রসঙ্গক্রমে ভালোলাগা কিছু ছড়ার উদ্ধৃতি দেয়াই যায়। তার গ্রন্থের প্রথমছড়ার নাম ‘মামার বাড়ি', যা কিছুটা কবি জসীমউদ্দীনের মামার বাড়ি ছড়ার অনুকরণে রচিত। যেমন হালিমা নদী লিখেছেন--

আয়রে খোকা আয় রে খুকি

মামার বাড়ি যাই,

মামার বাড়ি গিয়ে সবাই

হাত ডুবিয়ে খাই।

'খোকন সোনা’ ছড়ার চারলাইন এমন--

খোকন সোনা ফোকলা দাঁতে

খিলখিলিয়ে হাসে,

তাই না দেখে মায়ের মনে

শান্তি ফিরে আসে।

'ঠিক করেছি হবো আমি’ ছড়ায় শিশুমনের স্বাভাবিক কল্পনাপ্রবৃত্তি ফুটে উঠেছে--

ঠিক করেছি হবো আমি

সকালবেলার পাখি,

রোজ সকালে ঘুম ভাঙ্গাতে

করবো ডাকাডাকি।

'আঁকাআঁকি’ নামক ছড়াটি বেশ প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়--

একটি পাখি উড়ে এসে

বসলো ডালে।

একটি পোকা আটকে গেলো

লতার জালে।

একটি ময়ূর মেললো পেখম

আপন মনে।

পালকি চড়ে শ্বশুর বাড়ি

যাচ্ছে কনে।

এবার মজাদার ‘কাক ও ছোট্টপাখি'র ৮টি চরণ পড়া যাক--

ছোট্ট পাখি গান গেয়ে যায়

মিষ্টি গলা ছেড়ে,

তাইনা দেখে ঠোঁট উঁচিয়ে

কাকটি এলো তেড়ে।

ছোট্টপাখির মিষ্টি গলা

কাকের গলা টক,

এই কথাটা ভুলে গেছে

পাড়ার সাদা বক।

মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিকদের কথাও ফুটে উঠেছে তার ‘জগৎসেরা বীর’ ছড়ায়--

দেশের তরে যুদ্ধ করে

আনলো যারা জয়,

তোমরা সবাই জানো কিগো

তাদের পরিচয়?

তারা ছিলেন ধরার বুকে

জগৎসেরা বীর

বিশ্বমাঝে করলো উঁচু

বাঙলা মায়ের শির।

ছড়াগ্রন্থটির নাম নির্বাচন করা হয়েছে যে ছড়া দিয়ে, গ্রন্থের সর্বশেষ সেই ছড়ার কিছু অংশও শোনা যাক--

সাতসকালে ধুম পড়েছে

কোলাব্যাঙের

বিয়ে ঘটক হলো নেড়িকুকুর

বরটি হলো টিয়ে।

শেয়াল হলো পুরুতমশাই

কাঠবিড়ালি সাক্ষী

বরযাত্রীর বাহক হবে

নৌকা ময়ূরাক্ষী।

পরিশেষে শিশুতোষ গ্রন্থ হিসেবে কিছু ছড়ায় ব্যবহৃত ভাষা, ভুলবানান, অশিশুতোষ ও দুর্বোধ্য শব্দচয়ন নিয়ে বলতে চাই। সর্বশেষ ছড়ায় ব্যবহৃত ‘ময়ূরাক্ষী’ শব্দটি অবশ্যই দুর্বোধ্য এবং শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়। তেমনই বাতায়ন, ত্রিভুবন ইত্যাদি শব্দ শিশুদের জন্য কঠিন বৈকি। কিছু বানান ভুল রয়েছে। আর কিছু ছড়ায় ছন্দপতন রয়েছে, যা অন্যান্য ছড়ার সঙ্গে যায় না। যেমন ‘একটি পাখি’ ছড়ার চারটি লাইন উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়-

একপায়ে সে

নৃত্য করে,

কক

গানও ধরে।

এখানে ‘কক’ যেমন দুর্বোধ্য, তেমনই ওপরের লাইনের ছন্দতাল ও মাত্রার সাথে মেলে না। তবে সামান্য ভুলত্রুটি বাদ দিলে গ্রন্থটি সার্বিকভাবে শিশুদের জন্য খুবই উপযোগী। আমি গ্রন্থটির বহুলপ্রচার কামনা করি।

------------------------------

শিশুতোষ গ্রন্থ: কোলা ব্যাঙের বিয়ে

ছড়াকার: হালিমা নদী

প্রকাশক: দাড়িকমা প্রকাশনী

মূল্য: ৮০ টাকা।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ