কবিতা
আমি চিনতে পারিনি
হেলাল আনওয়ার
আলোর বিপরীতে চলতে চলতে
আমি বড় ক্লান্ত এখন
অন্ধকার আমাকে নিয়ে যায়
উত্তাপহীন সময়ের কাছে।
ইদানিং সব কিছুই অচেনা মনে হয়
আত্মার অতিথি, যাকে বড় ভালোবাসি
চেনা পথ, সবুজের সমারোহ, কাশফুল।
যে পথে চলেছি আমি সে পথ বড় বন্ধুর।
যাকে ভালোবাসি অমোঘ আবেগে
সেও ভাবে অপাঙ্ক্তেয় কবিতার চরণ।
হে বিমলা, স্বর্গীয় গেলেমান।
তোমাকে পেয়েছি বলে, ভুলের জীবনটাকে আর একবার-
আর একবার প্রেমের পসরাতে সাজালাম।
আমি কষ্টকে ভুলতে চাই
ভুলতে চাই বাসি কান্নার যন্ত্রণা।
কিন্তু,কষ্ট আমাকে জাপটে ধরে শীতের পোশাকের মতো।
রাশি রাশি অন্ধকারে যেমন আচ্ছন্ন
সবুজ পৃথিবী তেমন আমার দুচোখও।
এখনো চেয়ে আছি এক মুঠো রোদ আর
একফালি জোসনার প্রত্যাশায়।
সেই ভোর-ভাবনার স্নিগ্ধতা এখনো
চেনাতে পারিনি বকুলের বিপুলা বিকেল।
সুখ সাগরের পাড়
হারুন আল রাশিদ
সুখ পাবে না
টাকার কাছে
সুখ পাবে না ক্ষমতায়,
সুখ পাবে না
নকল স্বভাব
মিথ্যে মায়া-মমতায়।
বেশি পাওয়ার আশা করে লাভ কি হলো ঢের?
সুখের খোঁজে হাত বাড়ালে
অন্ধগলির পথ মাড়ালে
যেই না পায়ে ফোস্কা পড়ে-তখন পেলে টের!
মূলের কাছে শান্তি আছে-ভুলের কাছে ঘাই,
আপন দেবে আশার কাঁপন-পর মানুষে হাই।
পৃথিবীটা পাল্টে গেছে,
অপাত্রে যেই ঢালতে গেছে,
যখন হলো হার-
বুঝ হয়েছে তার!
সঠিক পথেই হাঁটলে পাবে সুখ-সাগরের পাড়।
হিরক দ্যুতি
শেখ একেএম জাকারিয়া
নির্বোধেরা কবিতায় হিরক দ্যুতি দেখে না
কবির মন্দাবস্থা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে
বুঝে না কবিতার শরীর পবিত্র পুরান-অবিনাশী গান।
চৈতন্যকে কুর্নিশ করে শ্রেষ্ঠত্ব আঁকে না
মিছামিছি হেসে ওঠে শব্দহীন সনাতন চারণ
তবু সূর্যোদয় বধ করে সূর্যাস্তের অযুহাতে
বোকাদের দল।
এমন সহজ কিস্তি যদি
না বুঝে কোনও গৌড়গোবিন্দ
হাতে পেয়েও ছুঁড়ে ফেলে চিন্ময় বৃক্ষের ফল
এতে কবির কী এসে যায়?
অনুকরণে অনুসরণে
আকিব শিকদার
রাতের নির্জনে তুমি করাত হাতে নামো রাস্তায়।
গোপনে অন্যের বাগানে চারাগাছ কেটে আসো।
সকালে দেখো, একি! তোমার বাগান
কেটে গেছে অন্য করাত চালক, গোপনে।
গলির মোড়ে ভাতিজা বয়সি ছেলেটা সিগারেট ফোকে।
দেখেও না দেখার ভান করো। অন্যের ছেলে
নষ্ট হচ্ছে, তোমার কী!
এদিকে তোমার মেয়েটা দশজন মুরব্বিকে সাক্ষী রেখেই
ছেলেদের সাথে মাতে।
তারা কেন ফেরাবে! তোমার মেয়ে তো তাদের কেউ না...
অথচ, তুমি করাত চালানো ষড়যন্ত্র থামালে
কমে যাবে পৃথিবীর একজন গোপন বৃক্ষনিধক।
সিগারেটখোর ছেলেটাকে ফেরালে
অবক্ষয় থেকে বাঁচবে একটি সন্তান। আর ঠিক তখনই
অনুকরণে অনুসরণে বদলে যাবে সমস্ত পৃথিবী।
অভিমান
মোহাম্মদ এনামুল হক
খিলটা আলতো করে খুলে দেখি দোর
মুখ গুঁজে পড়ে আছে কুহেলিকা ভোর।
সামনে দাঁড়ায় এসে ঘৃণার দেয়াল
লোভের ফসিল চাটে চতুর শেয়াল।
সোনালি রোদের আদৌ মিলে না হদিস
দোয়েল পাখিরা যেন ভুলে গেছে শিস।
মানুষ খোঁজে এখন ভার্চুয়াল সুখ
প্রকৃতির প্রতি তাই ভীষণ বিমুখ।
দিকহারা বাতাসের কাঁধে রেখে ভর
অভিমানে উড়ে গেছে শ্বেত কবুতর।
যুথবদ্ধ কোরাস
হাসান মাহমুদ
আমাদের ভাষা বিনিময় যেন ক্রমেই ফুরিয়ে যাচ্ছে
চারদিকে ভাষার গুঞ্জনে অচেনা এক কোরাস
আবছায়ায় স্বদেশের প্রচ্ছদে ভেসে ওঠে।
তবে যুথবদ্ধ কোরাস কার!
আমাদের এত শব্দ এত লোকজ কথার পশরা
হারিয়ে যাচ্ছে যেন বেদুইনদের ভাষিক আধুনিকায়নে।
লোককথার ঐতিহ্য আর স্বদেশ প্রেমের প্রাচুর্য
ক্রমেই কেন ম্রীয়মাণ স্বদেশের প্রণয় বুকে?
আল্লাহু আকবর
সুজন আহসান
সুবহে সাদিকের পর,
যখন প্রস্তুতি নেয় কর্মবীরের উষ্ণ কায়া;
বিছানা ছেড়ে উঠে পরে আলোর শপথে।
অভ্যর্থনা জানায় মহাকালের নিয়তি সংগ্রামের পথে,
যেমন করে ছুটে চলছে ঐশ্বরিক ঘড়ি, নিঃশ্বাসহীন অনিকেত পথে।
পথে পথে পড়ে থাকা শত জঞ্জাল,
শত শত মাথার খুুলি, অগণিত রক্তবিন্দু
কালো হয়ে শুকিয়ে আসা গালির আস্তরণ;
পেছনে ফেলে রেখে ছুটে চলে বখতিয়ারের ঘোড়া,
ছুটে চলে শপথের নামে দিগি¦জয়ী কাসিমের কফিন।
এইসব দিনরাত্রি, এইসব পদাবলি
সাক্ষী হয়ে আছে একেশ্বরের বলয়রেখা,
শত গ্লানি আর অলসতা মাড়িয়ে জেগে আছে শহরের মুয়াজ্জিন।
প্রতিকুল হাওয়ায় ন্যাকড়ের সম্মুখে তবুও জেগে আছে স্বর
সবকিছু ছেড়ে পরম তৃপ্তিতে বলে ওঠি ‘আল্লাহু আকবর’।