শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধের ইতি ঘটছে

১০ সেপ্টেম্বর, আল জাজিরা : কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধের ইতি ঘটছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ অবরোধ শেষ হতে পারে। গত  বুধবার এমন ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত আলোচনায় এরইমধ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে নমনীয়তা দেখা গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক ডেভিড শেনকার অবশ্য জানিয়েছেন, আলোচনায় এখনও এমন কোনও মৌলিক পরিবর্তন হয়নি যাতে করে দ্রুত সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট-এর এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ ইস্যুতে কথা বলেন ডেভিড শেনকার। তিনি বলেন, আমি পুরো কূটনৈতিক আলোচনায় যেতে চাই না। তবে কিছুটা অগ্রগতি রয়েছে। আমার মনে হয়, অবরোধ উঠে যেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধে ওই চেষ্টায় ফাটল ধরে। তেহরানের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার বদলে দোহার মতো প্রভাবশালী মিত্রের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে রিয়াদ। এমন বাস্তবতায় সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ তুলে নেয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েত। দৃশ্যত ওই মধ্যস্থতা সফল হচ্ছে।

ওয়াশিংটন মনে করে এ অঞ্চলে তার মিত্রদের মধ্যে বিবাদ ইরানকেই লাভবান করবে। ফলে যে কোনও মূল্যে নিজের মিত্রদের ইরানবিরোধী একই প্ল্যাটফর্মে রাখতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।

ডেভিড শেনকার বলেন, এখনও মৌলিক কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত আলোচনায় আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখতে পেয়েছি। ফলে আশা করছি আমরা উভয় পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারবো এবং এই বিবাদের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবো।

ডেভিড শেনকার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক উদ্যোগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুক্ত ছিলেন।

সৌদি-আমিরাত-ইসরায়েল বলয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প শুরুতে কাতারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কৌশলগত দিক বিবেচনায় ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটির অবস্থান কাতারে। ওয়াশিংটনের কাছে আল উদেইদ নামের এই ঘাঁটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

২০১৭ সালের ৫ জুন কথিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর। তবে সৌদি জোটের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কাতার। বরং এ অবরোধকে রক্তপাতহীন যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুররহমান আলে সানি। তার ভাষায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব দেশ দোহার বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

পরে অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সৌদি জোট। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া, কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তবে সৌদি জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো রিয়াদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ তুরস্ক ও ইরানের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে কাতার। আর এই ইরানবিরোধী জোট গঠনেই অবরোধের ইতি টানতে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ