রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

গ্যাস লাইনের উপর মসজিদ নির্মাণের অনুমতি ছিল কিনা তদন্ত করা হচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস লাইনের উপর মসজিদ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অন্য সব বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে সেখানে বিস্ফোরক তদন্ত দল গেছে, তদন্ত হচ্ছে। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত হবে। মৃতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদটি না কি গ্যাসের লাইনের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণত গ্যাস লাইনের উপরে কোনো স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয় না। গ্যাস লাইনের উপর মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছিলো কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সামর্থবানরা অনেক সময় মসজিদে এসি দান করে থাকেন। ওই এসির ক্যাপাসিটি ছিলো কিনা তা দেখা হবে। এছাড়া মসজিদ নির্মাণে ভালোভাবে নকশা করা হয়েছিল কিনা প্রত্যেক বিষয় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাহসী ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়টি টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারে থেকে আমরা এমন একটা ঘটনা ঘটাবো তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যারা ক্ষমতায় আসতে পারে নাই তারাই তাদের পেছনে ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল ওয়ান ইলেভেন যারা সৃষ্টি করেছিল তারা। আওয়ামী লীগ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসায় সবকিছুকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনায় তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন না একদিন এই সত্যটা বের হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাহারা খাতুনের সাহস দেখেছি বিডিআরের ঘটনার সময়। সাহারা আপা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। রাতের বেলা সেখানে গিয়ে বিডিআর সদস্যদের আর্মড সারেন্ডার করিয়েছেন। অনেক আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। এজন্য তার জীবনের ওপরও হুমকি এসেছিল। এরকম অবস্থায় তিনি দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনও সাধারণ মানুষ এই সাহস করতে পারতো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সততার সঙ্গে কাজ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের ৫২ দিনের মাথায় এই ঘটনা ঘটলো। ওই ঘটনায় যেসব সেনা কর্মকর্তা মারা যান তাদের মধ্যে ৩৩ জন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিবারের। বিডিআরের ডিজি ছিলেন। ওই সংসদের সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চু তার আপন চাচাত ভাই। ঘটনার পরে আমাদের চেষ্টা ছিল কোনোমতে এটাকে থামানো। অফিসার ও তাদের পরিবারগুলোকে রক্ষা করা। ওই সময় আমরা সেনাবাহিনী নিয়োগ করার পর তাদের (বিদ্রোহীদের) গুলীতে কয়েকজন সেনা সদস্য মারা গেলেন। বিডিআরের ওই ঘটনাটি ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা। ঘটনার আগের দিন আমরা গেলাম। একটা ভালো পরিবেশ। পরের দিন এই ঘটনা ঘটলো, এর পেছনে কারা আছে? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি। এটা কোনোদিনই যুক্তিযুক্ত নয়। সরকার গঠনের পর আমরা এমন একটা ঘটনা কেন ঘটাবো দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়? কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারে নাই তারাই তাদের পেছনে ছিল। একদিন না একদিন এই সত্যটা বের হবে।’
বিএনপি জামায়াতের মিথ্যা বলার একটা আর্ট আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তারা ব্যাপক প্রচার করে ফেলেছিল আমি নাকি নিজেই গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি। বিডিআরের ঘটনার পরও তারা এভাবে অপপ্রচার শুরু করেছিল।
সাহারা খাতুনকে স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতেন। কোনও ভয়ভীতি তার ছিল না। তার ওপর যে অত্যাচার জুলুম হয়েছে...। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় তখন তার ওপর লাঠির বাড়ি, পিটিয়ে ডাস্টবিনে পর্যন্ত ফেলে দিয়েছে। এরপর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরও একই অত্যাচার। একদিকে পুলিশ বাহিনী, আরেকদিকে ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী। তাদের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কেউই বাদ যেতো না। একদিকে অত্যাচার আর অন্যদিকে মামলা মোকদ্দমা চলতো।’
ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,  ‘২০০৭ সালে যখন আমাকে গ্রেফতার করা হয় এবং একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। বিএনপি আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর আরও ৫-৬টি মামলা দেওয়া হয়। তাদের প্রচেষ্টা ছিল মামলাগুলো দ্রুত চালিয়ে আমাকে শাস্তি দিয়ে দেবে। বলতে গেলে একদিন পরপর আমাকে কোর্টে হাজিরা দিতে নেওয়া হতো। আর ওই মামলার সময় সাহারা আপা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতেন। মামলা পরিচালনা করতে আমাদের আইনজীবীরা এলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করতো, গ্রেফতার করতো। তাদের ছাড়িয়ে আনতে ছুটে যেতেন সাহারা আপা। এভাবে তার সাহসী ভূমিকা আমরা দেখেছি।’
ইসরাফিল আলমকে স্মরণ করে তিনি বলেন, এত অল্প সময়ে চলে যাবেন বুঝতে পারি নাই। তার করোনা হওয়ার পর ভালো হয়েছিল। তার কিডনির সমস্যা ছিল, কিন্তু সে কিছু মানেনি। যখন একটু সুস্থ হলো চলে গেলেন এলাকায়। এভাবে করোনার সময় আমরা আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী হারিয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই কিন্তু তারা জীবন দিয়েছেন। ইসরাফিলের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে ছিলেন। পঁচাত্তরে আমাদের পাশে ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আমি বন্দি থাকাকালে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতু নিয়ে আমার ওপর দোষ চাপালো তখনও তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর আমাকে ভারতে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। নিজেদের নাম পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতে পারতাম না। কারণ নিরাপত্তার কারণে আমাদের ভিন্ন নামে থাকতে হতো। আমরা দুই বোন একেবারে নিঃস্ব, রিক্ত অবস্থায় ওখানে (ভারতে) থাকতাম। পারিবারিক পরিবেশের একটু স্বাদ পাওয়া যেতো প্রণব বাবু এবং তার পরিবারের কাছ থেকে। আর তার ধারাবাহিকতা আমৃত্যু বজায় ছিল। তার মতো একজন জ্ঞানী রাজনীতিবিদ পাওয়া খুবই মুশকিল। সব দলই তাকে সম্মান করে। তার মৃত্যুতে উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিরল শূন্যতা তৈরি হলো।’
তিনি বলেন, শোক প্রস্তাবে এত পরিচিত মানুষ সবার কথা বলতে গেলে সময় লাগবে। মৃত্যু, এটাই সত্য। জন্মিলে মরিতেই হবে। মৃত্যু মানেই দুঃখ-কষ্ট। আমরা সেই দুঃখ বয়েই চলছি। একের পর এক বহু সংসদ সদস্যকে আমরা হারাচ্ছি। প্রতিবারই আমাদের শোক প্রস্তাব গ্রহণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস আসার পর এটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ