শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

মিয়া হোসেন : মর্যাদাপূর্ণ মাস মহররমের পঞ্চম দিন আজ। মহান রাব্বুল আলামীন বছরের বারটি মাসের মধ্যে ৪টি মাসের মর্যাদা অধিক বলে ঘোষণা করেছেন। এই মাসগুলোর মধ্যে মহররমের স্থান প্রথম। এ মাসসমূহে সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা ছাড়াও ইতিহাসে মহররম মাস তাৎপর্যপূর্ণ। রাসূল (সা:)-এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তার হিজরত করা থেকে আরবী সন গণনার সূচনা হয়। সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:) হিজরতের ১৭ বছর পর হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। আকাবার শেষ বায়াতের পর রাসূল (সা:) হিজরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর ওই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রথম যে চাঁদটি উদিত হয়েছিল তা ছিল মহররম মাসের চাঁদ। তাই মহররম হিজরী সালের প্রথম মাস। আল্লাহতায়ালা ৪টি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে বর্ণিত হারাম মাস সম্পর্কে যদি আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে যে তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দিন এ মাসে যুদ্ধ করা পাপ।
আমিরুল মুমিনীন উমার বিন খাত্তাব (খিলাফাতকাল ৬৩৪-৬৪৪ খ্রিঃ) প্রদেশগুলোতে গভর্নরদের কাছে যেসব জরুরি রাষ্ট্রীয় পত্র পাঠাতেন তাতে সন উল্লেখ না থাকায় মিসরের গভর্নর আমর বিন আল-আস (রা.) এ সংক্রান্ত জটিলতার কথা খলীফাতুল মুসলিমীনকে অবহিত করেন। তখন উমার (রা.) সাহাবাগণের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরামর্শে মহানবী (সা.)-এর জন্ম-মৃত্যু সাল থেকে সন ধরার কথা উঠলেও ইসলামের বিজয়ের সবচেয়ে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে হিজরতকে ইসলামী সালের প্রথম সাল গণ্য করা হয়। এ প্রসঙ্গে উমার (রা.)-এর বক্তব্য ছিল, হিজরাত সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সাধন করেছে। সুতরাং তা থেকে সন তারিখ নির্ধারণ করো। তাতে তারা হিজরাত থেকেই সন-তারিখ নির্ধারণ করে নিলেন এবং সকলেই তাতে একমত হলেন। হজ পালনকে বছরের শেষ শ্রেষ্ঠ পূর্ণকর্ম ধরে পরবর্তী মাস মুহাররামকে বছরের প্রথম মাস গণনা করা শুরু হলো। আত-তারিখ লিত-তাবারী- ২/৩-৪ পৃ:
হিজরী সালের একটি বছর ১২টি চন্দ্র মাসের সমন্বয়ে হয়। চন্দ্র বছরে দিবস সংখ্যা ৩৫৪.৩৭। আর চন্দ্র মাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনে হয়। এর কমবেশি হয় না। হিজরী সালের মাসসমূহকে আশ-শুহুরুল হিলালিয়্যাহ) বলা হয়। চাঁদ কেন্দ্রিক মাসসমূহকে মহান আল্লাহ সময় নিরূপক করেছেন তার সুস্পষ্ট আয়াত নিম্নরূপ : ‘লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, এটা মানুষ এবং হজের জন্য সময় নির্দেশক। সূরা আল বাকারাহ, আয়াত : ১৮৯
মহররম মাসকে মানুষ বিশেষ করে কারবালার ঘটনা উপলক্ষে স্মরণ করে থাকে। এ মাসের দশম তারিখে মহানবী (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা:) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজীদ বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন।
অন্যায়, অসত্য ও স্বৈরাচারের কাছে মাথানত না করে ইমাম হোসাইন সহযোগীদের নিয়ে কারবালার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। কারবালার শিক্ষাই মুসলমানদেরকে যুগে যুগে অন্যায়, অসত্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উৎসাহ যোগায়। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে “ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কি বাদ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে খেলাফতের মহান দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজে চলবে এবং অন্যদের পরিচালিত করবে এটাই আল্লাহর অভিপ্রায়। মানুষ দুনিয়াতে তার সামগ্রিক জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ গাইড লাইন তথা পবিত্র কুরআন পাঠিয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমান হিসেবে পরিচিত সকলেই সেই জীবন বিধান মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু মানুষ বৈষয়িক বিভিন্ন স্বার্থ ও মানবিক দুর্বলতার কারণে ইসলামের পথ চলা থেকে দূরে চলে যায়। মহররমের শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা। চরম ত্যাগ ও কুরবানি স্বীকার করেই ইসলামের পথে অটল অবিচল থাকতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ