বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ মানছে না কেউ

খুলনা অফিস : ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে নিজ বাড়িতে আসা শুরু করেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আটকে থাকা মানুষ। পরিবহন বন্ধ থাকার পরও মাইক্রোবাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন উপায়ে তারা নিজ বাড়িতে আসছেন। পথে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি সম্মুখীন হলেও নাড়ীর টানে তারা ফিরছেন বাড়িতে। তবে এবারের বাড়ি ফেরা এবং অন্যবারের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগে ঈদের সময় বাড়িতে আসায় খুশীর আমেজ তৈরি হলেও এবার তার বিপরীত। নিজ জেলায় অন্য জেলার মানুষ আসায় বিব্রতকর অবস্থার পাশাপাশি আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মতে, বাড়িতে আসার পর ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা একাধিকবার প্রচার করা হলেও তা মানছে না কেউ। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে উদাসীনতার ভাবও দেখা দিচ্ছে।
এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ঝিনাইদহেও ক্রমেই বাড়ছে করোনা রোগী। গেল দুইদিনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেনোম সেন্টারে নমুনা পরীক্ষা করে যশোরের ১৭টি এবং চুয়াডাঙ্গার ৩৮টিকে পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমের নেতৃত্বে থাকা ড. শিরিন নিগার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে যশোর জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একশ’য়ের কাছাকাছি পৌঁছালো। আর চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে শনিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরীক্ষার যে ফল পাঠানো হয়েছে, তাতে দেখা যায়, ১৬৫টি নমুনার মধ্যে ৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত। গেল দুই দিনে এই ল্যাবে যশোরের ৩৯টি নমুনার মধ্যে ১৭টি পজিটিভ রেজাল্ট দেয়। চুয়াডাঙ্গার ১২৩টি নমুনার মধ্যে ৩৮টিরই পজিটিভ ফল আসে। এছাড়া ঝিনাইদহের তিনটি নমুনা পরীক্ষা করে একটির ফলাফল পজিটিভ আসে। ফলে ঝিনাইদহ জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো।
অপরদিকে খুলনা বিভাগে দিনে বেড়েই চলেছে করোনা রোগী বা কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। শনিবার পর্যন্ত বিভাগে সর্বমোট রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০১। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬ জন। বিশেষ করে ভারত, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে খুলনা বিভাগে রোগী আসার পর সংক্রামণ বাড়ছে। পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিভাগের মধ্যে যশোর জেলায় ৯০ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭৮ জন রোগী এখন পর্যন্ত সনাক্ত হয়েছে। সর্বমোট করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৩টি। বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতাল (খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল)। খুলনা সিভিল সার্জন অফিস এবং বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) থেকে এ সকল তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা যায়, গেল ১০ মার্চ থেকে খুলনা বিভাগে করোনা রোগীদের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং ডেটিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত বিভাগে সর্বমোট ৬ হাজার ৩৭৩টি করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ৬৫৯, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫৪২ এবং কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ১ হাজার ১৭২টি। যার মধ্যে করোনা পজেটিভ আসছে ৩০১ জনের। এদের মধ্যে যশোর জেলায় রোগীর সংখ্যা ৯০, চুয়াডাঙ্গায় ৭৮, ঝিনাইদহে ৪৩, কুষ্টিয়ায় ২২, খুলনায় ১৯, মাগুরায় ১৯, নড়াইলে ১৫, বাগেরহাটে ৭, মেহেরপুরে ৬ এবং সাতক্ষীরায় ২ জন। এখন পর্যন্ত করোনা রোগী মারা গেছে ৬ জন। এদের মধ্যে খুলনায় ২ জন, বাগেরহাট ১, নড়াইল ১, চুয়াডাঙ্গা ১, এবং মেহেরপুরে ১ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৯৫ জন এবং আইসোলেশনের সংখ্যা ৩৩৭ জন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৪ জন।
সম্প্রতি বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঈদ উল ফিতরতে সামনে রেখে অনেকেই জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন উপায়ে নিজ বাড়িতে আসছেন। তারা কোন ধরণের হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনেই প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। যার ফলে স্ব স্ব এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশকে জানানো হলেও তাদের উদাসীনতার অভিযোগ মিলেছে। তবে খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারাই জেলার বাইরে থেকে আসবে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন মানতে হবে ন্যূনতম ১৪ দিন। এরপর যদি করোনার লক্ষণ দেখা যায় তবে নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। কোন পুলিশ বা জনপ্রতিনিধি যদি এসব বিষয়ে উদাসীনতা দেখায় তবে ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, বিভাগে ৬ হাজার ২৪৪ জন করোনা রোগীর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩০১ জন। মারা গেছে ৬ জন। এগিয়ে যশোর ও চুয়াডাঙ্গা। করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতালে ১৫০ রোগী ভর্তি করার মত প্রস্তুতি রয়েছে।
খুলনা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, যশোরে ভারত থেকে এবং চুয়াডাঙ্গায় নারায়াণগঞ্জ থেকে মানুষ আসছে। তাদের মাধ্যমে করোনা রোগী বাড়ছে। কারণ একজন রোগী অনেকের মধ্যে রোগ ছড়ায়। আমরা চেষ্টা করছি গার্মেন্টস কর্মী বা সন্দেহজনকদের করোনা টেষ্ট করানোর জন্য। এগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের এডিশনাল এসপি (মিডিয়া সেল) মো. শরফুদ্দিন বলেন, প্রত্যেক জেলায় পুলিশ তৎপর আছে। জেলার বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদেরকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের পজেটিভ আসছে তাদের বাড়িতে লাল পতাকাসহ লক ডাউন করা হচ্ছে। এসব না মানা হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ