সোমবার ১৩ মে ২০২৪
Online Edition

সরকার একেকটি আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে একেকটি আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে।  যেন সরকারের বিরুদ্ধে তারা কিছু লিখতে না পারেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে-সংবাদপত্র এখন সংবাদ কর্মীদের হাতে নেই, সংবাদপত্র চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আব্দুস শহিদ ও কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক নেতা বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ খান, মুরসালিন নোমানীসহ সিনিয়র সাংবাদিক নেতারা। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুপুরে কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করবে সংগঠনের সদস্যরা।
সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশে যারা সংবাদপত্রের মালিক বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। এ ব্যবসা রক্ষা করার জন্য সরকারের বাইরে যাওয়ার তাদের কোনো উপায় নেই। যে কারণে আমরা সেলফ সেন্সরশীপ দেখছি। সম্পাদক সাহেব নিজেই বলেন যে, এটা নেয়া যাবে না, দেয়া যাবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে, চাটুকারিতা এমন এক পর্যায় চলে গেছে যে, প্রফেশনাল চাটুকার যারা আছে তারাও লজ্জা পায়। দিজ আর ফ্যাক্ট।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, উল্টো চিত্রও আছে। আবার এই সাংবাদিক ভাইয়েরাই যেখানেই সুযোগ পান, আসল চিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। যেমন, বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গেলো। আমরা কিন্তু সাংবাদিক ভাইদের দ্বারাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন কিভাবে হয়েছে সেটা জানতে পেরেছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি যে, কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা সিন্ধুকের মধ্যে গোডাউন তৈরি করা হচ্ছে, কিভাবে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে যায়, কিভাবে ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে সব শেষ করে ফেলা হচ্ছে। একটা ব্যাংকও নাই যারা ভালো অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সবসময় কিন্তু সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ একটাই এই দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, এই দেশে মানুষের এখন কোনো অধিকার নেই। এই দেশে সম্পূর্ণভাবে একনায়কত্ববাদ একটা ফ্যাসিবাদ পুরোপুরিভাবে দখল করে আছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক সমাজকে সব চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন যখন হচ্ছে, তখন সাংবাদিকদের সম্ভবত সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্রের কাঠামো এবং সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ ছাড়া প্রযুক্তির কারণেও সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। নিউজ পেপারে যারা কাজ করছেন তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। কারণ, পরের দিন সকালে যখন তাদের নিউজটি ছাপা হয়, তার আগেই মোবাইল বা অনলাইনে সেই খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে মুক্তচিন্তার যে বাতাস বইছিলো তা সরিয়ে দিয়ে একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ বেশ জানান দিয়ে সারা পৃথিবীতে এসেছে’ বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাংবাদিকদের সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখে। বাংলাদেশের ভাষার জন্য লড়াইয়ে, স্বাধীনতার লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব। মির্জা ফখরুল বলেন, যুগে যুগে যারা মুক্তি, স্বাধীনতার লড়াই, সংগ্রামের কথা বলেছে, তাদের নিয়মিত নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছুদিন সুবাতাস বইলেও আবার সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে অনেক বরেণ্য সাংবাদিকদের লেখা আমরা দেখেছি। তারা অনেক সত্য কথা লিখেছেন মানুষের জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে সাংবাদিকদের সত্যিকার অর্থে যে ভূমিকা জনগণ আশা করে, সেটা সবসময় কিন্তু সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ একটাই- এই দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, এই দেশে মানুষের এখন কোনো অধিকার নেই। এই দেশ সম্পূর্ণভাবে একনায়কত্ববাদ, একটা ফ্যাসিবাদ পুরোপুরিভাবে দখল করে আছে। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিলম্বিত বিচার, সাংবাদিক গুম হওয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ ফখরুল বলেন, এই বিষয়গুলোতে আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ না হোন তাহলে সাংবাদিক ছাঁটাই হবে, বিচার পাওয়া যাবে না। সুভেনিরে আপনাদের একজন লেখেছেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা সাংবাদিকতা আপনারা করতে পারছেন না। চলেই যেতে হবে ছেড়ে। প্রধান কারণ হচ্ছে যে, এখানে কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর্থিক কোনো নিরাপত্তা নেই।
গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করে রাখার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে কারাগারে অন্তরীন করে রেখেছে। আজকে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, এতো অসুস্থ যে তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে তারা মুক্ত করছে না।
বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা  সাহেবকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলো, সেদিনই জুডিশিয়ারি শেষ। আর কোন মানুষের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, ভিন্নভাবে রায় দেবে তাদের (সরকার) ইচ্ছার বাইরে গিয়ে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি মামলায় বেকসুর খালাস দিলেন যে জজ সাহেব, সেই জজ সাহেব পালিয়ে বেঁচে আছেন, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে। পিরোজপুরের ঘটনা দেখেছেন, কয়েক ঘন্টার মধ্যে জজ সাহেবকে ট্রান্সফার করা হলো আওয়ামী লীগের সভাপতিকে জামিন বাতিল করে কারগারে নিতে বলেছিলেন বলে। এই হচ্ছে বিচার বিভাগের অবস্থা। এই অবস্থা থেকে উত্তরনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন উঠে দাঁড়াবার সময়, এই সময়টা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করার সময়। অনেক বাঁধা আসছে, আসবে, অনেককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হবে। আমরা আশা করি, জনগণের যে যে লড়াই, জনগণের যে সংগ্রাম, সেই লড়াই-সংগ্রামে সাংবাদিকরা সবসময় সামনের দিকে ছিলেন, আজকেও তারা এই লড়াই-সংগ্রামে সামনের দিকে থাকবেন।
তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের যে ইতিহাস সেখানে আমরা কখনো মাথা নত করে থাকিনি। আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আজকে হবে না, কালকে হবে, কালকে হবে না পরশু হবে। সব জানালা বন্ধ থাকলে একটা জানালা খোলা থাকবে, সেই জানালা দিয়ে আমাদেরকে এগুতে হবে। আজকে সময় এসেছে নিজেদের ছোট-খাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা যেমন একদিকে আপনাদের আন্দোলন করবেন অন্যদিকে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে।
করোনা ভাইরাস যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শংকা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের এই দেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটা যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ