শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

রাজশাহীতে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ভবনে দুদক’র হানা ॥ ৭ কোটি টাকার অনিয়মের সন্ধান!

 

রাজশাহী অফিস : কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রায় সাত কোটি টাকা অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর বরেন্দ্র ভবনে অভিযান পরিচালনা শেষে দুদক রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন এ তথ্য জানান।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দুদকের তিন সদস্যের একটি টিম রাজশাহীতে বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ে যান। টিমে আরো ছিলেন দুদকের পরিদর্শক বায়েজিদুর রহমান খান। দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা ২৪টি শাখার প্রায় প্রতিটিতেই খতিয়ে দেখেন নথিপত্র। দুপুরে অনুসন্ধান শেষে দলের প্রধান আলমগীর হোসেন জানান, বিএমডিএতে তারা প্রায় সাত কোটি টাকা অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন। কোটেশানের মাধ্যমে কেনাকাটা এবং আম বাগান ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয়ে অনিয়ম ধরা পড়েছে। তারা বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে  দেবেন। তারপর সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রধান কার্যালয় মামলা করতে বললে তাও করা হবে। সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএ’র অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদকের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মাসুদুর রহমান বুধবার এক আদেশে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককে তদন্ত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন। এ আদেশের পরদিনই দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম বিএমডিএ’তে অনুসন্ধানে যায়। 

এদিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএ’র ২৪টি খাতে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের বাণিজ্যিক অডিটে ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৯ টাকার অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিএমডিএ’র জোন পর্যায়ের ভবনের তৃতীয় তলা সহকারী প্রকৌশলীদের আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হলেও তা বরাদ্দ না দিয়ে ফেলে রাখার ফলে সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৩ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে কর্মকর্তাদের টাইমস্কেলে বেতন নির্ধারণের সময় অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট হিসেবে প্রদানকৃত অর্থ আদায় না করায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ টাকা। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুত কিনে সেটি আবাসিক বাসায় সরবরাহের ফলে ক্ষতি হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৭ টাকা। পার্টিসিপেশন ফি এর উপর প্রযোজ্য মুসক সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৭ টাকা। পুনরায় টেন্ডার আহ্বান না করে যোগসাজসের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে আমসহ ফলগাছ ইজারা দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৮৯৬ টাকা। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এড়ানোর লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে খণ্ড খণ্ড ভাবে ক্রয় করে ক্ষতি করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৯২৫ টাকা। পিপিআর লঙ্ঘন করে কোটেশনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৬ টাকার পণ্য ক্রয় এবং ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৯ টাকার কাজ করে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৫ টাকা। সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে ২০ ভাগ অতিরিক্ত কাজ দিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭০ টাকা। বিধি লঙ্ঘন করে ঠিকাদারকে মূল ক্রয়ের অতিরিক্ত ২০ ভাগ পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি ক্ষতি করা হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৮ টাকা। এভাবে সবমিলিয়ে ২৪টি খাতে ৫ বছরে সরকারের ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ