রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ঈদযাত্রায় ১৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত ১৮৫ জন

* উত্তরবঙ্গের সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র ঈদুল আযহার আগে ও পরে সারা দেশে ১৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৫৫ জন বলে জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা। নিসচা বলছে এবার ঈদযাত্রায় দক্ষিণবঙ্গে ও উত্তরবঙ্গের সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লিটন এরশাদ। সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ঈদুল আযহার ছুটিতে সারা দেশে মোট দুর্ঘটনা সংঘটিত  হয়েছে ১৩৫টি। এসব দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত এবং ৩৫৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়কপথে ১৩০টি, রেলপথে ২টি এবং নৌপথে ৩ টি দুর্ঘটনা ঘটে। ১০ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট এই ৯ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যানবাহনের দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদসংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এই ঈদে উত্তরবঙ্গের সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এ বছর ঈদুল আজহার সময় সারা দেশে সড়ক পথে গাড়ি চলাচল নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই ঈদে উত্তরবঙ্গে সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তিনটি সেতু খুলে দেওয়ার ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় যানজট হয়নি বললেই চলে এবং সড়ক দুর্ঘটনা এ সকল অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। কিন্তু খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি বরং বেড়েছে।
দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালনা ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, যানবাহনের সিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন বা সার্ভিস রোড না থাকা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, সড়কের বেহাল দশা, গাড়ি না পেয়ে মোটরসাইকেলের যাত্রা, সড়কে নৈরাজ্য নিয়ম না মানার প্রবণতা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে দ্রুতগতি ট্রাফিক আইন না মানা আর একের অধিক যাত্রী নেয়ায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, সরকার এক লাখ দক্ষ প্রশিক্ষিত চালক তৈরি করার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে। এতে সরকারের যে পরিকল্পনা, প্রতি ঘরে ঘরে একজনের কর্মসংস্থান করে দেয়া সেটা বাস্তবায়ন হবে। এটাই একমাত্র সেক্টর যেখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হলে কেউ বেকার থাকবে না। তাই, সরকারের প্রতি আহ্বান আপনারা প্রশিক্ষিত চালক তৈরি করুন।এতে করে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা দূর হবে অন্যদিকে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।
সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নিসচার প্রস্তাবনায় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লিটন এরশাদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মনিটরিং শুধু ঈদের আগে করলেই হবে না ঈদ পরবর্তী সময় মনিটরিং করতে হবে, চালক হেলপারসহ পরিবহন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। মহাসড়কের গতি নিরাপদ করে দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, ফিটনেস বিহীন লক্কর-ঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে বন্ধের আদেশ শতভাগ কার্যকর করা, সড়ক নিরাপত্তা ইতিমধ্যে যেসব সুপারিশ প্রণীত হয়েছে তার শতভাগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি আরও কিছু পরিকল্পনা তিনি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতন মূলক অনুষ্ঠান প্রচারের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে তা ব্যাপকভাবে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, দরিদ্র ও বেকার যুবকদের বিনা বেতনে অথবা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, বিদ্যমান চালকদের মাঝে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা মূলক নিয়ন্ত্রণ নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম চালু অব্যাহত রাখতে হবে, পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করে এবং যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরি করে হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশের ৬৬ টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সকল শিক্ষক তাদের স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ