সোমবার ১৩ মে ২০২৪
Online Edition

চামড়া নিয়ে খুলনায় এবারও তেলেসমাতির আশঙ্কা

খুলনা অফিস : ঈদুল আযহা আসলেই কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে তেলেসমাতি শুরু হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ট্যানারী মালিকদের সাথে আলোচনা করে সরকার ইতোমধ্যে চামড়ার মূল্যও নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির টামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়-একটি বড় সাইজের গরুর চামড়ার মূল্য হতে পারে পারে সর্বোচ্চ ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। খুলনার চামড়ার ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ট্যানারী মালিকদের কাছে পড়ে থাকলেও আশানুরূপ টাকা পায়নি ব্যবসায়ীরা। এতে তারাও অনেকটা আর্থিক সংকটে রয়েছে। আর এই সুযোগে কম মূল্যে চামড়া কিনে মজুদ করতে চাইছে কেউ কেউ। ইতোমধ্যে খুলনার একটি ট্যানারী থেকে বিভিন্ন মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ডেকে চামড়ার দাম জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে হতাশ হয়েছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। খুলনার সবচেয়ে বড় মাদরাসা খুলনা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.খ.ম. যাকারিয়া বলেন, খবরে দেখা যাচ্ছে চামড়ার এক রকম আর ওই ট্যানারী মালিক বলছেন অন্যরকম। এতে মাদরাসাগুলোর বছরের সবচেয়ে বৃহৎ আয়ের উৎস এবারের কোরবানির চামড়া থেকে আশানুরূপ আয় নাও হতে পারে বলে তিনি আশংকা করছেন।
খুলনার চামড়া পট্টি বলে খ্যাত শেখপাড়ার শের-এ-বাংলা রোডের সংস্কার কাজ এখনও শেষ হয়নি। সেখানকার চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। একদিকে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় চেয়ে এখনও যেমন পাওয়া যায়নি তেমনি ট্যানারী মালিকদের কাছে দীর্ঘদিনের পাওনা টাকাও পায়নি ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের শেষ দিন পাওনা টাকার সর্বোচ্চ ১০শতাংশ টাকা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ঢালী। তিনি বলেন, একদিকে দাম কমিয়ে দেয়ায় বাজারে একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে অপরদিকে টাকার অভাবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। চামড়ার যে দাম সরকার থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে সবচেয়ে বড় গরুর চামড়ার মূল্য হতে পারে ৫/৬শ’ টাকা। আর দেড় মন ওজনের গরুর চামড়া কেনাই হবে না। কেননা তা বিক্রি করা যাবে না। একটি চামড়া লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি উপযোগী করতে অন্তত দুইশ’ টাকা খরচ হয়। আর বড় চামড়ার ক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি। কিন্তু ছোট একটি চামড়ার বিক্রয়মূল্য হবে সর্বোচ্চ একশ’ টাকা। যা কিনে খরচই উঠবে না।
এদিকে, কাঁচা চামড়ার বর্তমান বাজার দর অনেক নাজুক উল্লেখ করে ফুলতলার সুপার এস লেদার লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ ভূইয়া বলেন, দাম কম থাকায় সবার জন্যই ক্ষতির বিষয়। বহির্বিশে^ চাহিদা কম বলেই এবার চামড়ার দাম কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশী চামড়ার একটি বড় মার্কেট ছিল চীনে। কিন্তু এখন সেখানে চাহিদা নেই। এজন্য এদেশের চামড়ার দাম কমে গেছে। তিনি নিজেও কয়েকশ’ কোটি টাকার চামড়া মজুদ করে রেখেছেন। বিক্রি করা যাচ্ছে না। তার পরেও দেশীয় এ পণ্যটি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি এবার প্রয়োজনে খুলনা বিভাগের সব চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। বর্তমানে সুপার এস লেদারে তিন লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে বলেও তিনি জানান। দাম কম থাকায় তিনি বিক্রি করতে পারছেন না। চামড়া একটি জাতীয় সম্পদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তিনি খুলনার বেশকিছু মাদরাসার অধ্যক্ষকে ডেকে বৈঠক করেছেন। যাতে এ সম্পদ নষ্ট না হয় সেজন্য বাজার দর অনুযায়ী তিনি কেনার কথাও জানিয়েছেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন, প্রতি বছর কুরবানি আসলেই একটি সিন্ডিকেট চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। এজন্য ট্যানারী মালিকদের সাথে বৈঠক করে গত মঙ্গলবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে এবারও চামড়া পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাচার হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
চামড়ার দাম নির্ধারণী সভা শেষে মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাজার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও কমে গেছে। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই সবকিছু বিবেচনায় গতবারের দামই নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চামড়ার মান বাড়ানোরও তাগিদ দেন তিনি।
খুলনায় পবিত্র ঈদুল আযহার কর্মসূচি
পবিত্র ঈদুল-আযহার প্রধান জামাত সকাল আটটায় খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। পবিত্র ঈদুল-আযহা যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচির সাথে খুলনাতে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদ-উল-আযহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল আটটায় খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে। টাউন জামে মসজিদে সকাল ন’টায় দ্বিতীয় ও শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল আটটায় এবং দ্বিতীয় ও শেষ জামাত সকাল ৯টায় টাউন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা কালেক্টরেট জামে মসজিদে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
নগরীর বসুপাড়া ইসলামাবাদ কমিউনিটি সেন্টার ঈদগাহ, লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ ঈদগাহ মাঠ, খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসা, বায়তুন নুর জামে মসজিদ, রূপসা বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বায়তুল্লাহ জামে মসজিদ, নিরালা আবাসিক এলাকা ঈদগাহ, খানজাহান নগর খালাসী মাদরাসা ঈদগাহ, দৌলতপুর ঈদগাহ এবং খালিশপুর ঈদগাহ ময়দানসহ নগরীর বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদে  সংশ্লিষ্ট  ঈদগাহ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি সময় নির্ধারণ করে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।  এছাড়াও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডে পৃথকভাবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামানো হবে। নগরীর প্রধান সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ চত্বর, সড়কদ্বীপ ও সার্কিট হাউস ময়দান জাতীয় পতাকা ও  ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
ঐ দিন বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, খুলনা বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।
সুবিধাজনক সময়ে খুলনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও খুলনা ইমাম পরিষদ ঈদ-উল-আযহার গুরুত্ব সম্পর্কে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করবে। ঈদের জামাতসমূহে ঈদুল আযহার গুরুত্ব এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।  ঈদের দিন শিশু পার্কসমূহে দু:স্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন বিকেল পাঁচটায় শহিদ হাদিস পার্কে রাষ্ট্রীয় নীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র ও হজের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
খুলনা মহানগর ও জেলায় কর্র্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে যেখানে সেখানে পশুর হাট স্থাপন করা যাবে না। কেসিসি মহানগরীতে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করার স্থান নির্ধারণ করেছে। ১৮ বছর বয়সের নীচে কাউকে দিয়ে পশু কোরবানি করানো যাবে না। জেলা শিল্পকলা একাডেমি সুবিধাজনক সময়ে খুলনা অফিসার্স ক্লাবে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জেলা শিশু একাডেমি সুবিধাজনক সময়ে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশু আনন্দ মেলার আয়োজন করবে।
শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নের কোন সংবাদ পেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭-৭১০৬৯৯, জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৭২-৮১৮২২১ এবং কেএমপির কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৫৫৮-৩২৮৩০০ ও ০৪১-৮১২৫৬৪ এ জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সময় খুলনা সার্কিট হাউজের হ্যালিপ্যাড, খুলনা অফিসার্স ক্লাব এবং খুলনা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে গাড়ি পাকির্ং এর ব্যবস্থা করা হবে। মুসাল্লিদের অজুর জন্য পানির ব্যবস্থাও রাখা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ