রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

দুঃখ কষ্ট বেদনা এবং বিড়ম্বনার ঈদ উদযাপন

মুুহাম্মদ হাফিজুর রহমান : [দুই]
এবারের ঈদে ২২ মে থেকে যাওয়ার টিকেট এবং একই গন্তব্য হতে ২৬ মে হতে ফিরতি টিকেট বিক্রির ঘোষণা দেয়া রেল কর্তৃপক্ষ। ২২ তারিখ সূর্যোদয়ের আগে থেকেই টিকেট বিক্রির কাউন্টারগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘ লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেকে টিকেট পেলেও অনেককেই টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, পঞ্চগড়সহ অনেক এলাকায় নির্ধারিত টিকেট সংখ্যা জনগণের হাতে পৌঁছার আগে কালো বাজারীদের হাতে তা চলে যায়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে টিকেট বিক্রিতে কড়াকড়ি থাকলেও এবং কালো বাজারে যাতে টিকেট বিক্রি না হয় সে জন্য নজরদারী থাকলেও কেউ কেউ বেশী মূল্য দিয়ে কালো বাজরে টিকেট কিনতে বাধ্য হয়েছেন। এ সব ভোগান্তিকে স্বীকার করে নিয়েই জনগণকে এবারের ঈদ যাত্রা করতে হয়েছে।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল : ঈদের যাত্রা স্বস্তির এবং আনন্দদায়ক করতে কতটুকু ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে তা বোঝা খুব দুস্কর। যদিও সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এ দৃর্ঘটনায় প্রাণ হানি বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশীই বলা চলে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে বাংলাদেশে যেমন সামাজিক আন্দোলন হয়েছে বহুবার একইভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ছিলো নজির বিহীন। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফেড়াতে সরকার বরারবরই ব্যর্থ হয়েছে। ঈদে যারা ঘরমুখো হন তারা অনেক আশা, আকাক্সক্ষা, ইচ্ছা এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রিয় জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। অনেক আশা, ভালোবাসা, আবেগ, উচ্ছাস এবং ঈদের আনন্দগুলো সড়কে করুণভাবে বিদায় নেয়। তাদের ঈদগুলো সড়কের কালো পিচের সাথে মিশে আধারে ঢেকে যায়। সড়কে যিনি আহত বা নিহত হন তার ঈদের আনন্দই শুধু ম্লান হয় না। তার সাথে আরো ৫-১০টি পরিবারে যে শোকের ঝড় বয়ে যায় তা অনেকগুলো পরিবারের ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত পরিবারগুলোর ঈদের আনন্দগুলো বেদনায় পরিণত হয়। দুঃখের নীল সাগরে তারা বেদনার্ত হৃদয়ে ঈদকে বিদায় জানায়। একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংষ্করণের মাধ্যমে যে তথ্য জানা গেছে তাতে দেখা যায় ঈদের ছুটিতে মোট ৬৩ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। ঢাকার গুলিস্তান ফ্লাইভারে পৃথক ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, তারা দুই জনই ছাত্র। মাগুরায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী বাবা ছেলে একত্রে মারা গেছেন। ঢাকা খুলনা মহা সড়কের ফরিদপুর অংশে একটি বাস খাদে পড়ে গেলে সেখানে ছয় জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাস-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ৭ জন নিহত এবং ৩৫ জন মারাত্মক আহত হয়েছেন। একই সড়কে ঈদের দিন বিকেলে বাস ও ট্রাকের মূখোমুখি সংঘর্ষে আরো দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। ঈদের পরদিন ঢাকা- আরিচা মহা সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়। ঈদের দিন বিকেলে সাভারের নীবনগরে পিক আপের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ভাউটিয়া এলাকায় পিক আপ ভ্যানের ধাক্কায় এক মোটর সাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। লালমনিরহাটে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট পাঁচ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে বাস-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন চার জন, মারাত্মক আহত হয়েছেন আরো ছয় জন। নড়াইলে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন। বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে বাস চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে, একই জেলায় দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হয়েছে। বরিশালে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছে।
বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুইজন। কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে দুইজন, আহত হয়েছে ছয় জন, এ ছাড়া পিক উল্টে নিহত হয়েছেন আরো তিন জন- এ তিনজনই নিজ দেশ থেকে বা¯ুÍচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোক। ফেনীতে অটো রিক্সা- সি এন জির সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একজন আহত হয়েছেন আরো ৪/৫ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত হয়েছেন একজন। নওগাঁয় অটো রিক্সার ধাক্কায় এক যুবক নিহত হয়েছে। মাদারীপুরে মাইক্রোবাসের চাপায় এক কিশোর নিহত হয়েছে। গাজীপুরে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছে আহত হয়েছে আরো আটজন। টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরো প্রায় ১০ জন। ভোলায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে আপন দুই সহোদর। পটুয়াখালীতে অটোরিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হয়েছেন এক বৃদ্ধ, জেলার কুয়াকাটায় মোটর সাইকেল উল্টে মারা গেছে আরো এক যুবক। সুনামগঞ্জে বাস চাপায় নিহত এক কলেজ ছাত্র। ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন দুজন। পাবনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক গৃহবধূ। নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতাসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে চারজন। কুষ্টিয়ায় সি এন জি উল্টে মারা গেছেন একজন যাত্রী। চট্টগ্রামে পিক আপের ধাক্কায় মারা গেছেন একজন মোটর সাইকেল আরোহী। ঈদের সময় এ দুর্ঘটনাগুলো ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। কারো ঘরে যখন ঈদের আনন্দ তখন এ পরিবারগুলো শোক আর বেদনার বহ্নিতে মুহ্যমান ছিলো। ঈদ তাদের কাছে আনন্দের পরিবর্তে দুঃখ বেদনার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে।
বাসের ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ : রমযান এবং ঈদ আসার সাথে অসাধুতা এবং অতিরিক্ত লাভের চিন্তায় ব্যবসায়ী এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নীতি-নৈতিকতা এবং নিয়ম-বিধান সব ভুলে যায়। বাস মালিকরা টিকেটের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে একদিকে এর চাহিদা বাড়িয়ে দেয় অপর দিকে পাঁচশত টাকার টিকেট এক হাজার থেকে বারোশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। একটি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন যাত্রী একটি টিকেটের ছবি পোস্ট করেছেন, তাতে দেখা গেছে যে টিকেটের গায়ে লেখা আছে দুইশত টাকা, তার পাশেই অটো সিলের ছাপ দেয়া হয়েছে ‘ঈদ মোবারক-৪০০ টাকা’। এ বিড়ম্বনা, ভোগান্তি, জরিমানা এবং জুলুমকে সহ্য করেই ঘরমুখো মানুষদেরকে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে।
তীব্র জানজটে অতিষ্ঠ জীবন : সরকারের তরফে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো এবারের ঈদ যাত্রায় জনগণের কোনো ভোগান্তি হবে না। মহাসড়কে বড়ো বড়ো বিল বোর্ড হয়তো সকলেরই নজর কেড়েছে, যাতে যানজট ও ঝামেলামুক্ত ঈদ যাত্রার আশ্বাস বাণী লেখা আছে। এমনকি সড়ক ও সেতু মন্ত্রী বার বার বিভিন্ন বক্তব্যে এবং সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যে এবারের ঈদ যাত্রা সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক এবং নির্ঝঞ্জাট করা হয়েছে। মানুষ কতটুকু স্বস্তিতে ঈদ করতে পেরেছে যারা ৩ ঘন্টার পথ বারো ঘন্টায় এবং আট ঘন্টার পথ ২৪ ঘন্টায় অতিক্রম করেছে তারাই এর বাস্তব স্বাক্ষী। যানজটে আটকা পড়ে আপর পাশের ফাকা অংশে যমুনা সেতুতে ক্রিকেট খেলেছে একদল যুবক। যার ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে কষ্টকর সংবাদটি হচ্ছে যানজটে আটকা পড়ে সড়কেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক নারী। একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদে জানা যায়, ঈদের আগের দিন ৪ জুন কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হাবিব হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর হতে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু তীব্র যানজটে আটকা পড়ে গাজীপুরের গোল চক্কর এলাকায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংবাদ দিলে তারা এম্বুলেন্স নিয়ে রওয়ানা দিলেও যানজটের কারণে এম্বুলেন্স যথাসময়ে এসে পৌঁছতে পারেনি। যার কারণে সড়কেই সন্তানের জন্ম হয় ঐ নারীর। এত কিছুর পরও আমাদের মন্ত্রী এবং ভোটারবিহীন এমপিরা বলছেন স্বস্থির ঈদ। এমন স্বস্থি এবং আনন্দ জনগণ তাদের কাছে চায় কী?
কৃষকদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে : এবারে ধানের মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পায়নি। ধানের যে মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিলো তাতে তাদের খরচের চেয়ে বিক্রয়মূল্য অনেক কম। অনেকে এ মূল্যে ধান বিক্রি করনে নি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করলেও তাদের খরচের টাকার সাথে এ ব্যয়ভার মেটানোর জন্য আরো টাকা যোগ করতে হয়েছে। বাংলাদেশকে বলা হয় কৃষি প্রধান দেশ। কৃষকদের এভাবে ঠকানো, তাদের পণ্য এবং শ্রমের মূল্য না দেয়া সুস্পষ্ট জুলুম। প্রতিটি কৃষক পরিবারে এবারের ঈদ আনন্দের নয়, দুঃখ,কষ্ট এবং বেদনার ঈদ হিসেবে পালিত হয়েছে।
 বোবা কান্না আর অশ্রুজলে ঈদ পালন : ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমকে দিয়ে যে গুম আখ্যানের শুরু তার বলি হয়েছে অজস্র মানুষ। মোকাদ্দেস, ওয়ালিউল্লাহ, আরমান, আলতাফ এভাবে নাম লিখতে থাকলে কয়েক পৃষ্ঠা লেগে যাবে। গুম হওয়া মানুষগুলো ফিরে আসেনি আপন জনের কাছে। সবার প্রিয় জনেরা ঈদে আপন জনের কাছে ফিরে আসলেও গুম হওয়া মানুষগুলোর কোনো সংবাদ নেই। ঈদে যারা প্রবাসে থাকে, কিংবা কর্তৃব্য-দায়িত্বের কারণে বাড়িতে আসতে পারে না তারা প্রিয়জনকে ফোন করে, এমনকি ঈদের দিন সকালেও ফোনে কুশল বিনিময় করে। অথচ হারিয়ে যাওয়া এ মানুষগুলোর পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয় মানুষটির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করার পরও কোনো সন্ধান পায়নি। এ গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা বোবা কান্না আর অশ্রুজলেই ঈদকে বরণ করেছে। দুঃখ, বেদনা, হতাশা আর কান্নার নোনা জলে তারা ঈদকে স্বাগত জানায় আবার চোখের পানিতেই তারা ঈদকে বিদায় জানায়।
ফেরারী মানুষগুলোর ঈদ বড়োই কষ্টের : বর্তমান শাসককুল ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, রিমা- এবং যখন-তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবার যে সংস্কৃতি চালু করেছে তা বাংলাদেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি। রাশিয়ার জারতন্ত্রকে স্থায়ী করার জন্য তখনকরা শাসকরা এ কাজ করতো। জারতন্ত্রের বিদায় নেয়ার পর কমিউনিজমের উত্থানের পর কমিউনিস্টরা এ কাজ আরো বেশী করে করেছে। নিজভূমে পরবাসী ফিলিস্তিনের জনগণ ইসরাইলী বর্বর সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে নিয়মিত গ্রেফতরের শিকার হন। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনতার ঘরে ঢুকে হিন্দুস্তানী পুলিশ এ কাজ সব সময় করে। চীনে মুসলমানদেরকে যখন তখন ধরে নিয়ে গিয়ে অনির্দিষ্ট মেয়াদে বন্দী করে রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর একই কায়দায় যখন তখন গ্রেফতার আর মামলার পাহাড় রচনায় এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারকে যারা পছন্দ করে না, কিংবা তাদের কোনো কাজের সমালোচনা করেছে- এমন লোকদের কারো নামে মামলা নেই, তেমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কোনো কোনো রাজনৈতিক কর্মীর নামে একশ’টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। সরকারের অনুগত অতি উৎসাহী পুলিশ বাহিনী এ সকল মামলার সাথে নতুন একটি আইটেম যোগ করেছে, যার নাম- গায়েবী মামলা। কোনো ঘটনা ঘটা ছাড়াই একই দিনে একই ড্রাফটে এক একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০-১২টি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এ সকল মিথ্যা মামলায় ফেরারী হয়ে বাড়িতে যেতে পারেন না, বাড়িতে থাকতে পারেন না। এমনকি ঈদের দিনেও তাদের অনেকেই বাড়িতে যেতে পারেন নি। বুকভরা কষ্ট নিয়েই ভুক্তভোগী এ মানুষগুলো ঈদ উদযাপন করেছে।
সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, এবারের ঈদ আনন্দ এবং খুশির বার্তা বয়ে আনার চেয়ে দুঃখ-বেদনা এবং বিড়ম্বনার এক বিশাল ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে। এ ঈদকে আনন্দ এবং খুুশির মাধ্যমে উদযাপন করা যেত। কিন্তু যাদের হাতে আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজের কর্তৃত্বের চাবি তারাই জনগণকে এমন কষ্টের মাঝে নিপতিত করে রেখেছেন। জনগণের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি যদি আমাদের শাসক বর্গের থাকতো তবে তারা জনগণকে এভাবে কষ্টের মাঝে নিপতিত করতে পারতেন না। সুশাসন, আইনের শাসন, জনকল্যাণমূলক শাসন, ন্যায়বিচার বলতে যা বুঝি তা এখন এখানে অনুপস্থিত। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সমর্থনের সরকার দরকার। যারা আজ ক্ষমতায় আছে তারা জোর জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতায় আছে, জনগণের কাছে যাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যারা জনগণের সমর্থন এবং ভালোবাসায় সিক্ত হতে পারে, জনগণের সমর্থনে বিজয়ী এমন একদল লোক এ দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করুক। দেশ জাতি জনগণ তাদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ্যে বলার সূযোগ পাক। জনগণ ঈদের প্রকৃত সুখ ভোগ করার মতো পরিবেশ পাক- এটাই প্রত্যাশা করছি। [সমাপ্ত]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ