মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪
Online Edition

সাংবাদিকের ওপর হামলা, সম্প্রচারে বাধা

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং নানাভাবে কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকেও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার চেষ্টার কথা জানা গেছে। গতকাল সোমবার ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনভর নানা অনিয়ম-অভিযোগের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
গতকাল সকালে দৈনিক আমাদের সময়ের স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান (হাবিব রহমান) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে দায়িত্ব পালনের সময় লাঞ্ছনার শিকার হন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কি করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান সোমবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।         
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ বলেন, আমরা কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হলে বেলা দেড়টার দিকে লাইভ সম্প্রচার করার জন্য প্রবেশ করলে প্রথমে বলা হয়, সাংবাদিকরা নির্ধারিত সময়ে ছবি তুলে চলে গেছে, এখন আর ঢোকা যাবে না। এরপর আবার প্রবেশের চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ নিষেধ করেন। এ সময় যেকোনও সময় সাংবাদিকরা কোন পর্যন্ত প্রবেশ ও তার কাজ করতে পারবেন জানানোর পরও বারবারই তাদের বাধাগ্রস্ত করা হয়।
এসএম হলে সকাল থেকেই সাংবাদিকদের প্রবেশে কয়েক দফা বাধা দেওয়া হয়। দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি হলে প্রবেশে এবং তথ্য সংগ্রহে বাধা দেওয়া হলেও কয়েকটিতে কোনও বাধার মুখোমুখি হননি তারা। রোকেয়া হলের সামনে থেকে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক শাহনাজ রুমা সন্ধ্যা ৭টায় জানান, তারা শেষ পরিস্থিতি জানতে রোকেয়া হলের প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় প্রভোস্ট সাংবাদিকদের সামনে দিয়েই হল ত্যাগ করেন।
সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হওয়া প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিকরা সেখানে পেশাদারিত্বের কারণেই দায়িত্ব পালন করতে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে এবং যে শৃঙ্খলা বেঁধে দিয়েছে তার ভেতরে থেকেই সাংবাদিকরা কাজ করেছেন। আমি খুবই অবাক হয়েছি যে, কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকার পরেও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন, অথচ এই কারণে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেউই টুঁ শব্দ করেননি। তিনি আরও বলেন, যারা সাংবাদিকদের নিগৃহীত করেছে তারা জানে সাংবাদিক নির্যাতন করলে কোনও বিচার হয় না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি তাদেরকে দুর্বীনিত করে তুলেছে। যারা নিজেদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে দাবি করেন, সেই শিক্ষকদের সামনে দুর্বৃত্তরা গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্ছিত করেছে কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ প্রার্থীরাই বিজয়ী : অনিয়মের অভিযোগের পর অধিকাংশ প্যানেলের প্রার্থীদের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদগুলোর ফলাফলে ছাত্রলীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে ১৬টি হলে; কুয়েত মৈত্রী হল ও রোকেয়া হলে ভোটগ্রহণ বিঘিœত হওয়ায় সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়।
ডাকসুর ২৫টি পদের পাশাপাশি হল ছাত্র সংসদের ১৩টি পদে ভোট দেন শিক্ষার্থীরা। ভোটগ্রহণ শেষে গণনার পর সন্ধ্যার পর থেকে হল সংসদগুলোর ফল আসা শুরু হয়; এতে অধিকাংশটিতে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগ প্রার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচনে ছয়টি হল সংসদ নির্বাচনের ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মুহসিন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জিয়াউর রহমান ও জসীম উদ্দিন হলে ছাত্রলীগ ভিপি ও জিএস উভয় পদে জয়ী হয়েছে। তবে শামসুন্নাহার হলের ফল পাল্টে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখানে ভিপি, জিএস এজিএসসহ ১৩টি পদের ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্যানেল জয়ী হয়েছে। এছাড়াও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ভিপি পদটি গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে। আবার সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ভিপি পদে জয়ী হলেও জিএস পদে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হেরে গেছেন।
সোমবার (১১ মার্চ) ডাকসু নির্বাচন শেষে হলগুলোর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা হল সংসদ রিটার্নিং অফিসাররা এই ফল ঘোষণা করেন।
শামসুন্নাহার হলের ফল পাল্টে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখানে ভিপি, জিএস এজিএসসহ ১৩টি পদের ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্যানেল জয়ী হয়েছে। বাকিগুলোতে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। হলটিতে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি, জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন আফসানা ছপা, এজিএস ফাতিমা আক্তার। জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্যানেলটি ৮ জনেরই ছিল। এরা সবাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্যানেলের শিক্ষার্থী।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত। তিনি পেয়েছেন ১২৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোলায়মান ইসলাম পেয়েছেন ১২৬ ভোট। এই হলে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৮৩৬ ভোট। তার নিকটতম রিফাত উদ্দিন পেয়েছেন ৬৮০ ভোট।
জসিমউদ্দিন হল ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলের ফরহাদ আলী। এই হলে জিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের ইমাম হাসান।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল হক শিশির। তিনি পেয়েছেন ৭৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাকিল মিয়া পেয়েছেন ২১৭ ভোট। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের মেহেদী হাসান মিজান। তিনি পেয়েছেন ৬২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজান রহমান পান ২৫১ ভোট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদে ভিপি পদে ছাত্রলীগের আকমল হোসেন ও জিএস পদে মেহেদি হাসান শান্ত নির্বাচিত হয়েছেন। আকমল হোসেন পেয়েছেন ৯৭৯ ভোট ও জিএস পদে মেহেদী হাসান শান্ত পেয়েছেন ৯৯৫ ভোট। এই হলের ১১টি ছাত্রলীগ জয়ী হলেও দুটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এরা হচ্ছেন সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ইয়াসির আরাফাত ও সদস্য পদে আতাউল্লাহ আরমান।
জিয়া হলে পূর্ণ প্যানেলে জিতেছে ছাত্রলীগ। এখানে ছাত্রলীগ থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৮২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তারেক হাসান পেয়েছেন ১৬৯ ভোট। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনি পেয়েছেন ৬৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রায়হানুল ইসলাম পেয়েছেন ৩৪৪ ভোট।
তবে ফলে চমক এসেছে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। এতে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী রিকি হায়দার আশা। তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী কোহিনুর আক্তার রাখিকে পরাজিত করেন। এই হলে সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সারা বিনতে জামাল জয়ী হন। এই হলে ১০ পদে ছাত্রলীগ জয় হলেও রিকির মতো সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে তাসলিন হালিম মিম ও সাহিত্য সম্পাদক পদে খাদিজা জয়ী হন। এই দুজনও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।
বিজয় একাত্তর হলে ১৩টি পদের সব কটিতেই জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ প্রার্থীরা। এই হলে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন সজিবুর রহমান এবং জিএস পদে জয়ী হয়েছেন নাজমুল হাসান নিশান।
সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলেও পূর্ণ প্যানেলে জয়ী ছাত্রলীগ। এই হলে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন এম এম কামাল। জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন জুলিয়াস সিজার ও এজিএস পদে জিতেছেন নওশের।
জগন্নাথ ও এসএম হলেও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল বিজয়ী হয়েছে বলে জানা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ