রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন মিলনায়তনে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর  থেকেই প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে নেমে পড়েন। এতে ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা লিফলেট বিতরণ করছেন। নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের কলা ভবন, ব্যবসা অনুষদ, অপরাজেয় বাংলা, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন এলাকা প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর। ছাত্রলীগের প্রচার চালিয়েছেন ভিপি পদপ্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, জিএসপ্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ টিএসসিসহ আশেপাশে তারা প্রচার চালান।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য সমর্থিত বামজোটের প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে কলা ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, টিএসসি এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন বামজোটের প্রার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ভিপি প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলি করেছেন। প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত লিটন-ফয়সাল সাদিক পরিষদের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী প্রার্থীদের ‘প্রভু নয়, বন্ধু ভাবার’ আহ্বান জানিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া প্রচারণায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, ছাত্রমৈত্রীর প্রার্থীরা। তারা ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নূর বলেন, আমরা আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাচ্ছি। অনেক ছাত্র সংগঠন কিন্তু আগে থেকেই প্রচারণা করছে। আমরা আসলে জানি না এভাবে অবাধ প্রচারণা কতদিন চালাতে পারবো। আমাদের মধ্যে এখনও শঙ্কা কাজ করছে।
অন্যদিকে লিফলেট ছাড়াই ক্যাম্পাসে প্রচারণা করছে ছাত্রদল। এভাবে কেন প্রচারণায় নেমেছেন জানতে চাইলে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ছাত্রলীগকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য ব্যালট নম্বর দেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই তারা প্রচারণা করছে, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না। ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় আমরা লিফলেট ছাপাতে পারছি না।
সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার দৃঢ় প্রত্যয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, দলমত-নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানসহ সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রক্টরিয়াল টিমকে সহযোগিতা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের মিলনায়তনে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান এই কথা জানান।
আখতারুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত  না হয়, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ করে প্রক্টরিয়াল টিম সতর্ক থাকবে। নির্বাচনের দিন এবং এর আগে ও পরে প্রক্টরিয়াল টিমকে বিশেষ সহায়তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজের ও অপরের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে সমগ্র জাতির জন্য অতীতের ন্যায় একটি মহান আদর্শের উদাহরণ ঐতিহ্যবাহী ঢাবির শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে সৃষ্টি করবে- এ বিশ্বাস আমি রাখি। মনে রাখতে হবে- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিণতি জয়-পরাজয়কে ধৈর্য ও শ্রদ্ধাশীল চিত্তে মেনে নেয়া এক উদার মানবিক মূল্যবোধ। ঢাবি শিক্ষার্থীদের কোনো ঘাটতি আছে বলে কেউ যাতে মনে করতে না পারে সে বিষয়ে সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ: আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, তা লঙ্ঘন করে চলেছে ছাত্রলীগ। রঙিন পোস্টার দেয়ালে সাঁটানো থেকে শুরু করে প্রতিটি হলে রঙিন ব্যানারে নির্বাচনী সভা করছে সংগঠনটির প্রার্থীরা।
রঙিন ব্যানারের ব্যবহার আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনে রঙিন কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। এটি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রক্টরের দায়িত্ব। প্রক্টরই বিষয়টি দেখবেন।
 গত রোববার ডাকসুর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নির্বাচনী সভা করে ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ তাদের প্যানেলের সব প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন। ওই সভায় সংগঠনটি যে ব্যানার ব্যবহার করে, তা ছিল রঙিন ডিজিটাল ব্যানার। বিষয়টি নিয়ে তখন অন্য অনেক প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে নির্বাচনী সভা করে ছাত্রলীগ। সেখানেও রঙিন ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করা হয়।
ডাকসুতে বামজোটের হয়ে জিএস পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, শুরু থেকেই ছাত্রলীগ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। মনোনয়ন কেনা থেকে শুরু করে রঙিন পোস্টার দেয়ালে টানানো, এখন আবার নির্বাচনী সভাতেও রঙিন ব্যানার ব্যবহার করছে তারা। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এ থেকে প্রমাণ হয়, কাদের জন্য এ নির্বাচন? আমরা ছাত্রলীগের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেব।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
ছাত্র মুক্তিজোটের ইশতেহারে তিন অঙ্গীকার:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ঢাবি শাখা বাংলাদেশ ছাত্র মুক্তিজোট। গতকাল টিএসসির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
এতে বলা হয়, ছাত্র মুক্তিজোট নির্বাচিত হলে সে সংসদ দল-মত নির্বিশেষে সব ছাত্র-ছাত্রীর প্রয়োজন ও যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাট্টা হয়ে কাজ করবে। ইশতেহারে তিনটি সুনির্দিষ্ট দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে সবার সমর্থন চেয়েছে সংগঠনটি। দফা তিনটি হলো-
১. ডাকসুহীন গত ২৮ বছরে গৃহীত সব নীতি, বিধি ও সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করা।
২. বে-দখল হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি পুনরুদ্ধার করে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকটের সুরাহা করা।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গবেষণাধর্মী ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার পরও কর্মক্ষেত্রে না ফিরলে অথবা বিভিন্ন অজুহাতে কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকলে সমুদয় অর্থ ফেরত নিয়ে তা কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের কল্যাণে ব্যয় করার সুনির্দিষ্ট বিধি তৈরি করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মুক্তিজোটের কন্ট্রোল বোর্ড রোজিনা আক্তারের সঞ্চালনায় এবং শিক্ষাঙ্গন প্রধান মোছা. কামরুন্নাহারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনের সহ-সভাপতি প্রার্থী শিহাব শাহরিয়ার সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অনুপ রায়সহ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং ১৩ জন সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আব্দুল্লাহ জিয়াদ, বামজোটের পক্ষ থেকে জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এ আর এম আসিফুর রহমান ও সদস্য প্রার্থী শাফায়াত হাসনাইন সাবিত চূড়ান্ত তালিকায় তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ