মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪
Online Edition

কুল চাষে ডুমুরিয়ার সিরাজের সাফল্য

খুলনা অফিস : জমির কারণে সবজি-পাট চাষ করে লাভের অঙ্কটা বড় হয়নি। কোনোমতে খরচ ওঠে আবার অনেক সময় ওঠে না। প্রথমে লোকসানের আশঙ্কায় কেউ পা বাড়াতে চাননি কুল চাষে। কেউ সাহস না দেখালেও লোকসানের আশঙ্কা নিয়েই কুল চাষ শুরু করেন ডুমুরিয়ার সিরাজ। আর তাতেই সাফল্য। এভাবেই যেন আলাদিনের চেরাগের খোঁজ পেল সিরাজ।

এক একর জমিতে ২০১৫ সালের দিকে পাইকগাছার গদাইপুর থেকে নারিকেল কুলের চারা সংগ্রহ করে রোপণ শুরু করেন। কিছু গাছ মারা যায় আবার নতুন চারা সেখানে রোপণ করেন। পার্শ্ববর্তী অনেকের কাছে হাসির পাত্র হয়ে যান ডুমুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের গোলনা গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম খান। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং নিজের পরিশ্রমে ১৪ মাস পর থেকে গাছের প্রতিটা শাখায় শাখায় ফলন ধরতে শুরু করে। ফলন ওঠার পর সবার মুখে হাসি। ফলন-দাম দুটোই ভালো। এবার আর বসে থাকা নয়, এগিয়ে এলো অন্য চাষিরাও। উপজেলার এখন প্রায় একশ’ হেক্টর জমিতে নারিকেল কুল চাষ হচ্ছে। চাষির সংখ্যাও বাড়ছে দিনদিন। ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল কুল চাষাবাদ বাড়ার গল্পটা এ রকম। গোলনা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাগানে সারি সারি কুলগাছ। গাছগুলো আকারে ছোট। তারপর আবার কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। কোথাও কোথাও বাঁশ বা কুঞ্চি দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। বাগান থেকে কুল তুলে পাইকারদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন চাষি সিরাজ এবং তার ছেলে ইমরান। এ বাগানের কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, যশোরসহ চলে যাচ্ছে ঢাকায়। এখন আর সিরাজের পেছনে ফেরা নয়। গত এক মাসে কুল বিক্রি করেছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকার। এখনও দেড় মাস এ বাগান থেকে কুল বিক্রি করবেন তিনি। তাতে তার আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হবে। প্রতিটি কুলের ওজন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম। এ বাগানে এখন দুইশ’টি কুল গাছ রয়েছে।

চাষি মো. সিরাজুল ইসলাম খান জানান, চলতি মওসুমে এ বাগানে ২শ’ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৪০-১০০ কেজি কুল রয়েছে। বাগান থেকে পাইকারদের কাছে কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। কুল গাছ রোপণ ও পরিচর্যায় খরচ অনেক কম। কুল থেকে সব মিলিয়ে আশা করছেন ৭ লাখ টাকা এবং গাছের ডাল-পালা বিক্রি করেও আসতে পারে আরও হাজার দশেক টাকা।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, প্রতিবছর কুলচাষি বাড়ছে। কুল চাষে বেশি লাভ হয়। তা ছাড়া কুল চাষ পতিত জমিতেও হয়। এ জন্য কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষে ঝুঁকছেন। গোলনার কুল চাষি মো. সিরাজুল ইসলাম খান আমাদের সিআইজি কৃষক।

এ ব্যাপারে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, এ অঞ্চলের মাটি কুল চাষের জন্য উপযোগী। এ এলাকায় কম খরচে দীর্ঘমেয়াদী এ নারিকেল কুল চাষ কৃষকদের জন্য দারুণ সুযোগ। ডুমুরিয়ার শোভনা এলাকার যশোর আলী নারিকেল কুল চাষে প্রথম সফল ব্যক্তি ছিলেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় এখন নারিকেল কুল চাষাবাদে চাষিরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া ব্লকে কুল চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। সে বরাতিয়া গ্রামের জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া কৃষক সুভাষ মল্লিকের ছেলে। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মওসুমী ফলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক দেড় বিঘা জমিতে দেশীয় উন্নত জাতের নারকেল কুলের আবাদ করেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে কুল চাষ করে অধিক ফলন পেয়েছেন তিনি। বাজার দর ভাল থাকায় আর্থিক ভাবেও অনেক লাভবান হয়েছেন।

জানা গেছে, দেড় বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পক্ষান্তরে বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ফলে এ মওসুমে কুল চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। এদিকে কুল ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি দপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা জানান, আধুনিক পদ্ধতি ও কলা  কৌশল ব্যবহার করে কুল চাষে অধিক লাভবান হয়েছেন কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। এ ছাড়া তার ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার সবজির রয়েছে। তিনি একজন পেশাদার ও ভালমানের কৃষক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ