বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

ইরানের সাফুরা ও আমাদের বর্জ্যব্যবস্থা

মহান আল্লাহর দেয়া কোনওকিছুই ফেলনা বা অপ্রয়োজনীয় নয়। পশুপাখির বিষ্ঠা থেকে মানুষের বর্জ্য পর্যন্ত কাজে লাগিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করে জ্বালানিসংকট নিরসন করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রাণিজ ও গৃহস্থালির বর্জ্য জমির সার হিসেবেতো প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাজেই কোনও বর্জ্যই অকেজো নয় আদৌ। নয় ফেলে দেবার মতো। প্রকৃতিতে প্রায় সববর্জ্যই মানুষ কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধন যেমন করতে সক্ষম, তেমনই বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে সহজেই। 

উল্লেখ্য, সাফুরা গালেজারি ইরানের গিলান প্রদেশের বন্দর আনযালি এলাকার একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলটিচার। তিনি রোজ রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করেন। কী করেন পড়ে থাকা কাগজ বিক্রির টাকা দিয়ে সাফুরা গালেজারি? নিজের সংসারে লাগান? না, তাও না। রাস্তা থেকে কুড়নো কাগজ বিক্রির টাকা দিয়ে গত দেড় বছরে সাফুরা ৬টি পাঠাগার গড়ে তুলেছেন। সাফুরার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা রাস্তা থেকে কাগজ কুড়নোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলে ব্যবহৃত কাগজও সংগ্রহ করেন। অথচ স্কুলের ব্যবহৃত কাগজও বর্জ্য হিসেবেই রাস্তার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হতো। আমাদের দেশে যেমনটি হয়। সাফুরা গালেজারি একসময় প্লাস্টিকের বোতল কুড়োতেন। হয়তো অনেকে তখন তাঁকে টোকাই ভাবতেন। আমরা যেমন ভাবি। কিন্তু না। তিনি সেরকম নন। সাফুরা কুড়িয়ে নেয়া প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি করে পঙ্গুদের জন্য হুইলচেয়ার কিনে দিতেন। অসহায় পঙ্গুরা তা দিয়ে কিছুটা হলেও পথ চলতে পারেন। এ ছাড়াও সাফুরা স্বপ্ন দেখেন ময়লাহীন ঝকঝকে তকতকে একটি শহরের। সেজন্য কাগজ কুড়ানোর সময় রাস্তায় পড়ে থাকা অকেজো ময়লা-আবর্জনাও সংগ্রহ করে নির্ধারিত জায়গায় রেখে দেন তিনি।

আমাদের মেট্রোপলিটন সিটি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে প্রায় হাঁটাচলা মুশকিল। ঘর থেকে বেরুলেই নাকে রুমাল চেপে ধরতে হয়। আর বর্ষার সময় বিচ্ছিরি বর্জ্যে রাস্তাঘাট সয়লাব হতে দেখা যায়। শহরের কোথাও কোথাও মাসিক অর্থের বিনিময়ে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে তা দূরে ফেলবার ব্যবস্থা হলেও পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া বর্জ্য রিসাইক্লিং সিস্টেমও গড়ে ওঠেনি আমাদের। তাই অবিলম্বে আমাদের গার্বেজ রিসাইক্লিং সিস্টেম গড়ে তোলা যেমন জরুরি; তেমনই ইরানের বন্দর আনযালির সাফুরা গালেজারির মতো স্কুলটিচারের খুব প্রয়োজন। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষকরাও স্কুল-মাদরাসায় তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের সঙ্গে সঙ্গে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উৎসাহিত করতে পারেন। আমরা সাফুরা গালেজারির কাছ থেকে নিশ্চয়ই কিছু শিখতে পারি। তিনি কোনও ভিনগ্রহের মানুষ নন। আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ