মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪
Online Edition

গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি

কাজী খোরশেদ আলম : ইংরেজী Democracy এর বাংলা প্রতিশব্দ গণতন্ত্র । গ্রীক শব্দ  Demos ও Kratia শব্দ থেকে  Democracy শব্দের উদ্ভব; যার বাংলারূপ গণতন্ত্র। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । সাধারণভাবে গণতন্ত্র বলতে যা বুঝায় তা হলোÑ যে শাসন ব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তিরই অংশগ্রহণ রয়েছে; সেইটাই গণতন্ত্র  অর্থাৎ Government in which everyone has share;its Democracy.

গণতান্ত্রিক দেশে কোন ব্যক্তি বা দলের খেয়ালÑখুশিমত শাসন ব্যবস্থা চালানোর অধিকার নেই। গণতন্ত্র হলো- সাধারণ মানুষের ইচ্ছানুযায়ী এবং তাদের কল্যাণে যে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

জনগণের ইচ্ছাই গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। অর্থাৎ গণতন্ত্র হল এমন এক ধরনের সরকার যা জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য তৈরী শাসন ব্যবস্থা। সহজভাবে বলতে গেলে গণতন্ত্র সে ধরনের শাসন ব্যবস্থা- যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে অথবা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। দেশের কল্যাণ, জনগণের কল্যাণ সাধনই গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।

আমাদের দেশের সাংবিধানিক নাম হল-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে এখানে গণতন্ত্র খোঁজে পাওয়া বড় দুষ্কর ব্যাপার। দেশে এখন কোন সরকার পদ্ধত্বিতে রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ পরিচালনা হচ্ছে- তা এই দেশের বুদ্ধিজীবী মহল এবং আন্তর্জাতিক মহলের বুদ্ধিজীবীরাও বোধগম্য নয়।

 মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরীক দল আওয়াম লীগ গণতন্ত্রের বুলি ছুঁড়ে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অজর্ন করে ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

নতুন প্রজন্ম এবং এদেশের নিরীহ জনতা তাদেন কথার ফুলঝুড়িকে বিশ্বাস করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে; তাদেন পক্ষে রায় দেওয়ার ফলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে তাদেন চেহারা-ছুরত, মন-মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যায়। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভূত তাদের ঘাড়ে চাপতে শুরু করে। প্রতিহিংস্বার রাজনীতিতে মত্ত হয়ে বিরোধীদল দমনে বেশি মনোনিবেশনে ব্যস্থ হয়ে যায়। ফলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যর লাগামহীন বৃদ্ধি,ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা এবং তারল্য সংকটের ফলে ব্যাংক গুলো দেউলিয়া হতে চলছে। প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, হত্যা ,গুপ্ত হত্যা, চাঁদাবাজি,লুণ্ঠন চলতে থাকায় জনজীবন উৎকণ্ঠায় ভোগছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনিতিতে পৌঁছে গেছে ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিব প্রেক্ষাপট বর্তমানে এমন ঘোলাটে হয়েছে যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও তার মতাদর্শীরা ছাড়া বাকি সকল লোকই রাজাকার যুদ্ধাপরাধী। কে রাজাকার আর কে যে মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ণয় করা বড়ই মুশকিল ব্যাপার। ক্ষমতার পালাবদলে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাও বদল হয়ে যায়। বাছাই ও কাট-ছাটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকা থেকে বাদ যায় আবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাবদ্ধ হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের গুণগান না গাওয়ায় খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর উপাধি পেতে হয়েছে। এভাবে হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিনাতিপাত করছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন অলিতে গলিতে ঘুরে ফিরে আনন্দ ফুর্তি করে কাটিয়েছে ; কখনো সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেনি। তারা স্বাধীনতা অর্জনের পর বড় বড় পদের অধিকারী হয়ে পকেট ভারী করে দিনের পর দিন বিলাসীতার জীবন যাপন করছে। এই হল আমাদের আজকের গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের চিত্র। যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের ললাটে ঝুটেছে কুলির কাজ, দিন মুজুরের কাজ, ভিক্ষাবৃত্তির কাজ। পত্র-পত্রিকার মারফত জানা যায়-কোন কোন মুক্তিযোদ্ধা বিনাচিকিৎসা মারা যেতে। মুক্তিযোদ্ধারা যে গনতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে -কোথায় আজ সেই গণতন্ত্র? বঙ্গবদ্ধুর কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গনতন্ত্রের খোলস পরিধান করে কোন খেলায় মত্ত হয়েছেন - তা সৃষ্টিকর্তায়ই জানেন। তার মুখে গণতন্ত্র আর অন্তরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মন্ত্র বিরাজ করছে। তিনি প্রতিহিংসার আগুণে এদেশের প্রতিটি অঞ্চলকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ক্ষান্ত হন নি; বরং প্রতিটি ঘরে ঘরে চাকুরীর বদলে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে লাশ উপহার দিচ্ছেন। কান্নার কল-রোলে প্রতিদিন বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হচ্ছে। কোন না কোন পরিবারের সন্তান,কন্যা, পিতা, মাতা, বোন,ভাইয়ের লাশ পড়ছে। কখনো তো এই হতভাগ্যদের বিচার হয় নি আর হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তাদের পরিবারের লোকজন সুষ্ঠ বিচারের প্রত্যাশায় আদালত পাড়ায় ঘুরে ফিরে মরছে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার নামে জনগণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শোষণ করছে। প্রতিটি সেক্টরে নিজেদের দলীয় লোকদেরকে নিয়োগ প্রদান করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের রাস্তা সুগম করার প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই তো অজপাড়া গাঁয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের ছোট বড় সকল প্রতিষ্ঠানে তাদের লোক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে দলীয় ব্যানারের লোকজন অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় আসন পেয়ে তারা নিজেরাই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভুলে গিয়ে দলীয় তন্ত্রের মত্ত হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রকে হত্যা করতে থাকে এবং ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দাফন করে বিশ্বের মাঝে নতুন এক তন্ত্রের উদ্ভব ঘটায়। যার নজির ইতিপূর্বে বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় নি। দেশের ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র ১২টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করে এবং তার মধ্য থেকে কয়েকটি দল ভোট গ্রহনের পূর্বে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। ভোটগ্রহনের দিনেও অনেক প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে কোন প্রতিদন্ধী না থাকায় বিনা ভোটে ১৫৩ টি আসনে সরকার দলীয়জোটের প্রার্থীরা জয় লাভ করে। এই আসনগুলোর কোন জনগণকে আর কষ্ট করে ভোট দিতে হয়নি। প্রার্থীরা জনগণের কাছে যেতে হয়নি আবার জনগণও প্রার্থীর দেখা পায়নি; তবু তারা অত্র এলাকার জনগণের প্রতিনিধি। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ তাদের নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং তাদের মমতামত প্রকাশ থেকে বঞ্চিত হল। বাকি ১৪৭ টি আসনেও তেমন কোন প্রতিদন্ধী প্রার্থী ছিল না; আর যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তারাও সরকারি জোটের অন্তর্ভুক্ত দলের প্রার্থী ছিল। যার ফলে নির্বাচনী আমেজ বলতে কিছুই ছিল না। এই আমেজহীন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম; যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। কোন কোন কেন্দ্রে সারা দিন কোন ভোটারই ভোট দিয়ে যায় নি। আবার কোন কোন কেন্দ্রে দুপুর পর্যন্ত কোন ভোট না পরলেও বিকালে ছিল ভোটের পাহাড় তা কে বা কারা দিল সেটা এদেশের জনগণ মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে। আমার এলাকায়ও সেই দৃশ্য দেখতে পেয়েছি। প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, আনসার সদস্য এবং দলীয় কিছু নেতা কর্মীরা মিলে সব ভোট কেটে বাক্স ভরে ফেলেছে। আমার ছোট ভাই একাই আমাদের বাড়ির পুরুষ-মহিলার প্রয়োগ করে বাড়িতে এসে বলে যে আপনাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অপর দিকে আমার আরেক ভাগিনা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখে তার নিজের ভোট কে বা কারা দিয়ে ফেলেছে তাই সেও রাগ করে পুরো একটি ভুতে প্রবেশ করে সকল ভোট একাই দিয়ে ফেলেছে। পুরো বাংলাদেশে এই রকম শত শত ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সারা দিন মাত্র শতকরা মাত্র ৫ জন ভোটার উপস্থিত হয়েছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে; সেখানে রাতারাতি কাস্টিং ভোটের হার হয়ে গেল শতকরা ৪০ ভাগ। একেই বলে ভুতের ভোটাধিকার প্রয়োগ। স্বাভাবিক ভাবে তো প্রত্যেক বছর বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষই ভোট দিয়ে থাকে। ভূতেরা তো আর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। তারাও তো এদেশের নাগরিক। তাই এবার তারা সুযোগ পেয়েছে তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগের তাই আর হাত ছাড়া করেনি। জ্বিন-ভূতে ভোট না দিলে এতো ভোট আসল কোথায় থেকে-এটা তো আমার একার প্রশ্ন নয়; এদেশের আপামর জনতার প্রশ্ন, সর্বমহলের প্রশ্ন।

এই রকম আজব একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচন পৃথিবীর কেউ দেখে নাই। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা লাঠিয়াল যুগে দেখেছে কি-না তারা থাকলে হয়তো বলতে পারতো। (লাঠিয়া যুগ বলতে পেশী শক্তির জোরে রাজ্য দখলের যুগ)। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে পুতুল খেলার সাথেও তুলনা করলে বেমানান হবে না। তার দৃশ্যত- জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি নিজে ঘোষণা করলে যে তার দল নির্বাচন বর্জন করেছে এবং দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের কে নির্দেশ দিলে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য। তার নির্দেশ মতে বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করলেন কিন্ত কারো কারো প্রার্থিতা প্রত্যাহার হলো আবার কারো কারোটি প্রত্যাহার হলো না; আবার কেউ কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় সরগম থেকে জয়ী হতে পারল না এবং কোন কোন প্রার্থী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে কোন রকম প্রচার-প্রচারণা না করেও জয়ী হয়ে গেলেন। এক কথায় বলা যায়- এটা একটি পাতানো নির্বাচন ছিল যা গণতন্ত্রকে ডিজিটাল প্রক্রিয়া হত্যা করা হাতিয়ার। অন্য ভাবে বলা যায় এই নির্বাচন হলো: একটি ভাগ-ভাটোয়ার নির্বাচন। ভাগ-ভাটোর মাধ্যমে নির্বাচিত সাংসদরা কতটুকু জনগণের সেবা করতে পারবে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারবে তা এখন দেখার বিষয়। এখন বাংলাদেশকে  আর গণতান্ত্রিক দেশ বলা মুশকিল: তা বাদ বলতে হবে ভাগ-ভাটোয়াতন্ত্র । যেখানে তারাই সরকার আবার তারাই বিরোধী দল- কে কার সমালোচনা করবে। সবাইতো একই বাগানের শালগাছ। কাট-চির, জ্বালানি বানাও, কাঠ বানাও, ফার্নিচার বানাও, ঘর বানাও যা খুশি তাই করো; ডাক-দোহাই দেওয়ার মতো আর কেউ থাকলো না। যারা ডাক-দোহাই দেবে বলে মনে হয় তাদের ঠিকানা অবশ্যই জেল-হাজত। মালিহীন বাগানের যে দশা আমাদের দেশের গণতন্ত্রের দশা একই।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধূ মাত্র সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিনি তারা মনের আশা পুরণ করেছেন। সংবিধানটি তো আর কোরআন-বাইবেল নয় যে তা সংশোধন করা যাবে না। যেহেতু এই সংবিধান মানব রচিত ; মানবের কল্যানে তার সংশোধন করা অত্যান্ত জরুরী বিষয় ছিল কিন্ত তিনি তা না করে ক্ষমতাটা নিজের বাহুর নিচের রাখার জন্য শুধু মাত্র সংবিধান সংবিধান বলে সংবিধানের মান-মর্যাদা বলতে আর কিছুই রাখলে না। নিজের মন মতো কিছু লোক নিয়ে নিজের মতো করে নির্বাচন কালীন সংকার গঠন করলেন আবার একটি নির্বাচনও করলেন। এখন তার সব আশা-আকাঙ্খা তো ষোল কলা পুরণ হলো। আর কি বলবেন বা কি করবেন। তার ভিশন-মিশন কি? এই দেশের সাধারণ জনগণকে তাদের দাস-দাসীতে রূপান্তরিত করা। জনমত নয় নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করা। ধ্বংস করে দেওয়া গণতন্ত্রের শক্তিকে?

তিনি নিজেই বলেছিলেন ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরবর্তীতে সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটি নির্বাচন করা হবে। কিন্ত যখন দেখলেন বিরোধী দল তার ফাঁদে পা দিয়েছে। তখন তিনি তার কথার পরির্বতন করে নিলেন এবং পুরো ৫বছর ক্ষমতায় থাকলেন। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনকে তার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিলেন। আর ক্রমান্বয়ে বিরোধী জোটকে কোনঠাসা করে ফেললেন। দেশের এই ক্লান্তিলগ্ন থেকে জাতীকে উদ্ধারের জন্য সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানার নিয়ে সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার ঘোষনা দিলেন। এখন মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে। বিরোধী জোটের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়তই মার খাচ্ছে আর পুলিশ অভিযানের মাধ্যমে তাদেরকে আটক করে জেলখানায় নিচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে ভীতি বিরাজ করছে। হয়তো ৩০ ডিসেম্বর আরেকটি ৫ই জানুয়ারী দেখতে পাব।

এভাবে নৈরাজ্য ও দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি এবং প্রতিহিংসার রাজনীতির মাধ্যমে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চলতে পারে না। সকল জনগনের সুযোগ-সুবিধার কথা বিচার বিশ্লেষণ না করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুত্ব সৃষ্টির কোন দরকার নেই এবং সেই অধিকারÑ আপামর জনতা আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান মহাজোট সরকারকে প্রদান করে নি। তাদের কে ভোট প্রদান করেছে দেশের জনগণ স্বাধীন সত্তা নিয়ে সকল নাগরিক অধিকার ভোগ করার জন্য এবং বর্হিবিশ্বের সাথে পরাষ্ট্রনীতির কার্যক্রম শক্তিশালি করে অর্থনৈতিকভাবে সয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রয়াসে। কিন্ত সরকার গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে নিজেদের মনগড়া মতো ব্যবহার করে স্বাধীন সত্তা ও সার্ভৌমত্বকে হত্যা করে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে Ñ এটার নাম কি গণতন্ত্র? আমাদের রক্তের বিনিময় অর্জিত স্বাধীনতা কি সিকিমের মতো চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে পারে?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ