বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

শাকের মধ্যে পুঁই মাছের মধ্যে রুই

শাহজাহান তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ): চলনবিলে বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথে শাক সবজির চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ বছর চলনবিলে  রবিশস্যের সাথে প্রচুর শাক সবজির চাষ হয়েছে। শীতকালিন সবজি বাজারে প্রচুর থাকায় দামও হাতের নাগালের মুঠোয়। ‘শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই’- এটি গ্রাম-বাংলার প্রচলিত একটি প্রবাদবাক্য। পুই শুধু সবজি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না । মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এতে রয়েছে অনেক পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। স্বাস্থ্য সচেতনতায় পরিবারের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পুঁইশাক রেখে পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়। পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁঢা উভয়ই তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। পুইয়ের পাকা ফল রান্না করে চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতে খুব সুস্বাদু। পুইশাকে রয়েছে ভিটামিন ‘এ ‘বি, ‘সি ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ। এটি খুব সহজলভ্য তাই দামেও সস্তা। পুই ভাজি ও রান্না করে খাওয়া যায়। এটি সাধারণত সবুজ ও লাল রঙের হয়ে থাকে।
পুঁই (Basella alba) এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুঁই Basellaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী উষ্ণমন্ডলীয় গাছ। এর ইংরেজি নাম Malabar Nightshade. বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষাবাদ হয়। এ গাছ খুব দ্রুত বাড়ে। এর পাতা নরম ও পিচ্ছিল জাতীয়। এর ফুল সাদা ও লাল বর্ণের হয়। পুই শাকের পাতাসহ সমগ্র গাছ ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন। পাতা মূত্রকারক। গনোরিয়া রোগে উপকারী। অর্শ রোগে অতিরিক্ত ¯্রাব, অতিসার প্রভৃতিতে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে পুঁই শাকের ব্যবহার হয়। পুঁই শাকের পাতার রস ছোটদের সর্দি, কোষ্ঠবদ্ধতা প্রভৃতিতে উপকার পাওয়া যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁই শাকে রয়েছে – খাদ্যশক্তি- ১৯ কিলোক্যালরি শর্করা- ৩.৪ গ্রাম চর্বি- ০.৩ গ্রাম আমিষ- ১.৮ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ২.২ গ্রাম ভিটামিন এ- ৪০০ আইইউ থায়ামিন- ০.০৫ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.১৫৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.২৪ মিলিগ্রাম ফোলেট- ১৪০ আইইউ ভিটামিন সি- ১০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ১০৯ মিলিগ্রাম আয়রন- ১.২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ৬৫ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.৭৩৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ৫২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ৫১০ মিলিগ্রাম ও জিংক- ০.৪৩ মিলিগ্রাম।
জেনে নেই পুই শাকের নানা উপকারিতা। পুইশাক ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে , শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে । চুল মজবুত রাখে। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা কমে। পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার থাকে যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত পুঁইশাক খেলে ব্রণ ভাল হয়। পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এই শাক রোগ প্রতিরোধে বেশ কাজ করে। পুঁইশাক দেহ থেকে সঠিক ভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করে। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। মাথাব্যথায় নিয়মিত পুঁইশাক খেলে তারা উপকার পাওয়া যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ