বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

এডুকেশন ক্যানট ওয়েইট রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ ডলার দিচ্ছে

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবে শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটির শিশু ও কিশোরসহ ৮৮ হাজার ৫০০ শিশু ও কিশোরকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বড় ধরনের শিক্ষা সহায়তা হিসেবে ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল বরাদ্দ দিচ্ছে ‘এডুকেশন ক্যানট ওয়েইট’ (ইসিডব্লিউ)। শিক্ষার জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিশ্চিত করতে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ অব্যাহত রাখতে ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, ইউএনএইচসিআরকে এই তহিবল দেয়া হচ্ছে।

ইউএনএইচসিআরের আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা জেমস লিঞ্চ এ বিষয়ে বলেন, “যে কোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মধ্যে শিক্ষা আরও বড় ভূমিকা রাখছে। এটা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছে। একইসঙ্গে এটা খুবই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বসবাসরত শিশু ও তরুণদের জীবনের জন্য একটি আশার আলো। এদের ভবিষ্যতের জন্য ইসিডব্লিউ গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করছে।”  এর আগে গতকাল ৫০ জন শিশু, বাবা-মা, শিক্ষক এবং সরকার, জাতিসংঘ ও এনজিও প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ইসিডব্লিউর সহায়তাপ্রাপ্ত একটি শিক্ষা কেন্দ্রে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

আট বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু আমিনের কাছে তার শিক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, ‘মনে শান্তি পাই।’ আমিন ও তার মতো অনেকের কাছে শিক্ষাকেন্দ্রে অতিবাহিত সময়টুকুই তাদের দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়। রোহিঙ্গা শিশুরা ইংরেজি, বার্মিজ, গণিত ও জীবন দক্ষতা শিখতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার জন্য ক্লাসে যোগ দেয়। তবে, নতুন শিক্ষা কর্মসূচি চালু হওয়ার পর প্রতিদিন শিক্ষাগ্রহণের সময় দুই ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে চার ঘণ্টা করা হবে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, “আমরা একটি শরণার্থী জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করছি, যাদেরকে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। গত বছরজুড়ে শরণার্থী শিবিরের শিশুদের ক্লাসে যোগদানের ক্ষেত্রে আমরা অসাধারণ পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছি। যেসব শিশু নীরব এবং একাকী থাকতো তারা এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশে তারা কিছু নতুন দক্ষতা শিখেছে এবং স্বাভাবিকতার ধারণা অর্জন করেছে। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রতিভা ও সম্ভাবনার লালন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।” 

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কয়েক বছরব্যাপী ইসিডব্লিউর অর্থায়নের মাধ্যমে পেশাগত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষক উপকৃত হবে, যা শিশু ও তরুণদের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ ও মানসিক সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারে। বিশেষ করে, এই প্রকল্প নারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর মনোযোগ দেবে এবং প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ ছেলে-মেয়েদের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাবে। এর মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চিহ্নিত ও প্রতিরোধের পদক্ষেপও থাকবে।

আশ্রয়দাতা কমিউনিটিতে সরকারি স্কুলগুলোর মানোন্নয়নে জন্য শিক্ষা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণে গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ার বয়সী শিশুদের বিদ্যালয়ের বাইরে থাকার হার দেশের যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি, কক্সবাজার সেগুলোর অন্যতম। ইসিডব্লিউর অর্থ সহায়তা শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে এবং তাদের নৈপূণ্যের মাত্রা বাড়াতে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন বলেন, “যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার মান বাড়াতে ইসিডব্লিউর সহায়তা আমাদের সক্ষম করবে। উন্নত পাঠ্যসূচি ও শিক্ষা উপকরণসহ আমরা আরও অনেক শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করবো। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে যেসব রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না, তাদের কাছ পর্যন্ত আমাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারি।” 

শরণার্থী সংকটের সূচনালগ্ন থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষা সেবা কার্যক্রম চালু করতে ইসিডব্লিউ ৩০ লাখ ডলারের অর্থসহায়তা দেয়। আগের সেই সহায়তার ধারাবাহিকতায় এবং ইসিডব্লিউ কর্তৃক শিক্ষা সহজতর করতে সহায়তার একটি বৃহত্তর কাঠামোর আওতায় এবার ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের অর্থসহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালে এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৬ কোটি ডলার। তহবিলের এই ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসার জন্য অন্যদাতা ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ইসিডব্লিউ। ইসিডব্লিউর পরিচালক ইয়াসমিন শেরিফ বলেন, “২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আগমনের শুরুর মাসগুলোতে এডুকেশন ক্যানট ওয়েইট (ইসিডব্লিউ) জরুরিভিত্তিতে প্রথম যে বিনিয়োগ করেছিল তারই ধারাবাহিকতায় এ তহবিল দিচ্ছে। সাম্প্রতিক দুঃসহ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করা এই শিশু ও তরুণদের সহায়তা প্রদান আমরা বন্ধ করবো না। বরং এখনই সময় তাদের টিকিয়ে রাখার এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত করার, যা তাদের জন্য একটি উপশমমূলক ও সুরক্ষিত পরিবেশ প্রদান অব্যাহত রাখাকেও বোঝায়।” প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ