বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

ফ্লাইওভারে ভূতুড়ে পরিবেশ

রাজধানী ঢাকা মহানগরীর মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারে বাতি জ্বলে না কেন? এ নিয়ে দৈনিক সংগ্রামে আমরা অনেক লিখেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে তো হয় না। এখনও রাতের বেলায় এ ফ্লাইওভারের অনেক এলাকা জুড়ে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অন্ধকারের মধ্যে দুর্ঘটনার আশংকা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। তারপরও কোন কোন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা। এই অন্ধকারের একমাত্র কারণ অধিকাংশ লাইটপোস্টই নষ্ট। নষ্ট ক্রসিংয়ের সিগন্যাল বাতিগুলোও। তাই সন্ধ্যার পরপরই সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ ভূতুড়ে পরিবেশ। এর কারণ ফ্লাইওভারের বিদ্যুতের তার চুরি। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে যে, এই ফ্লাইওভারের বেশিরভাগ তার তো বটে, এমনকি ইলেক্ট্রিক বক্সও চুরি হয়ে গেছে। এ ফ্লাইওভারটির চারটি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল অংশে বিদ্যুতের তার আছে এবং জ্বলছে সড়কবাতিও। নিউ ইস্কাটন-মৌচাক-রাজারবাগ অংশের (প্রায় দুই কিলোমিটার) উভয় পাশের সব তার ও বক্সগুলো চুরি হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বক্স আছে এগুলোর যন্ত্রাংশ বলতে কিছুই নেই। এফডিসি-কাওরানবাজার ও মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-শান্তিনগর অংশেও বিরাজ করছে একই অবস্থা। ফলে বেশিরভাগ বাতি না জ্বলায় রাতের বেলায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
এখানে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন, রাজধানী ঢাকা মহানগরের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন এমন অবহেলা? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভারটি দেখার মতো কোন সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। ইলেক্ট্রিক তার ও বক্স চুরি হওয়ার দায়-দায়িত্ব কেউ নিচ্ছেন না। এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে ফ্লাইওভার বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কথা বলছেন। উদ্বোধনের পর এলজিইডির কথা ছিল তারা ফ্লাইওভারটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)কে বুঝিয়ে দেয়া হবে। কেননা এ ফ্লাইওভারটি এ দু’টি সিটি কর্পোরেশনের সীমানায় নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এটি দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। যতদিন বুঝিয়ে দেয়া না হবে ততদিন এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এলজিইডিকেই পালন করে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে এলজিইডি’র সীমাহীন গাফিলতিই দেখা যাচ্ছে।
দেশে এ পর্যন্ত যেসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে এর মধ্যে মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম। গত বছর ২৬ অক্টোবর দীর্ঘ ৬ বছরের অবসান ঘটিয়ে সোয়া ৮ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে জনগণ এ থেকে সুফল পাচ্ছেন না। দিনের বেলায় চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই ফ্লাইওভারটির অনেক অংশই ফাঁকা হয়ে যায়। বিভিন্ন সংস্থার টানাপোড়নের কারণে এ ফ্লাইওভারটি এখন যে অভিভাবক শূন্যতায় ভুগছে, দ্রুতই এর অবসান হওয়া কাম্য। এটি দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে দ্রুত বুঝিয়ে দেয়া উচিত। শুধু ফ্লাইওভার নয়, রাজধানী ঢাকার আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা বড় বেশি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ