বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে খুলনাঞ্চলে ক্ষমতাসীন দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব

খুলনা অফিস : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাইব্রীড নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার দায়িত্ব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি আসন ঘুরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সচেতন। হাইব্রীড নেতাদের মানোনয়ন দিয়ে তাদের ঘাড়ের ওপর পাশ করানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হলে তা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। তৃণমূল নেতা- কর্মীদের যারা দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতিতে সক্রীয় আছেন। জনগণের সাথে যাদের স¤পৃক্ততা রয়েছে। নেতা-কর্মীদের যারা পরীক্ষিত বন্ধু সুখে দু:খে মানুষের কাছে থাকেন এমন ত্যাগী নেতাকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দিতে হবে। এ আকাংখার বত্যয় ঘটলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীন গোল যোগ ও টানা পোড়েন সৃষ্টি হতে পারে। তৃণমূল কর্মীদের সাথে আলাপ করে এ রকম পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। অনেকে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে চান না, তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ বলেছেন তৃণমূলের সাথে সংযোগ নেই এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া উচিত হবে না। যারা দলকে ভালবেসে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করেন প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটানো উচিত।
গত ৭ জুলাই গন ভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের তৃণমূল নেতারা ত্যাগী ও প্রকৃত রাজনীতিকদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
খুলনা জেলায় ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রশ্নে লবিং গ্রুপিং শুরু হয়ে গেছে। এনিয়ে অভ্যন্তরীন কোন্দল শুরু হয়েছে। এর জেরে সম্প্রতি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে জেলায় দিঘলিয়ায়। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান জামাল গনসংযোগে গিয়ে আহত হন। জানা গেছে, তিনি খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসন থেকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমানে সেখানে সংসদ সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন সাবেক হুইপ খুলনা জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা। জামালের ওপর হামলার ঘটনায় আসন নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে চাপা উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। খুলনা ৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রশ্নে দলের মধ্যে একই অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে প্রধান মন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন ওঠায় বর্তমান এমপির ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীরা বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিচ্ছে না।
আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসনের অবস্থা ও তথৈবচ। খুলনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজানকে নিয়ে ৪/৬ মাস যাবত খুলনায় বেশ আলোচনা চলছে। আলোচনার বিষয়বস্তু তাকে সরিয়ে প্রথমে বিশিষ্ট শিল্পপতি সাবেক ফুটবলার সালাম মুর্শেদীকে খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে ভেতরে টানা পোড়েন শুরু হয়। পরে তাকে খুলনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় খুলনা-২ আসন নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা-ভাবনায় ছিলেন না বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। তবে, হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুস্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের নাম আসায় আবারও অস্বস্তিতে মিজান। ইতোমধ্যে শেখ জুয়েলের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে নগরীতে সাটানো হয়েছে পোস্টার ও প্যানা।
আরো একটি আলোচনা আওয়ামী ঘরানার ভেতর সরব হয়ে উঠেছে সেটি হলো খুলনা-৩ আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রয়েছেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। ওই আসনে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক ছাত্র নেতা এস এম কামাল হোসেন। দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এসব আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আর এ নিয়ে দলের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব দানা বেঁধে উঠছে।
তবে, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা তুলে দিবেন তাকে বিজয়ী করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ