শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

আটক রয়টার্স সাংবাদিকদের ক্ষমা করে দিতে সু চি’র প্রতি আহ্বান আমাল ক্লুনি’র

২৯ সেপ্টেম্বর, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান : মিয়ানমারে আটক দুই রয়টার্স সাংবাদিককে ক্ষমা করে দিতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা মানবাধিকার আইনজীবী আমাল ক্লুনি। ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী এবং উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের পরিচালিত জাতিগত নিধনযজ্ঞের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক কিয়াও সো উ (২৮) এবং ওয়া লোন (৩২)। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তাদের আটক করে বর্মি পুলিশ। রয়টার্স বলছে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্যই তাদের আটক করেছে মিয়ানমার সরকার।

২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কথিত রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙের অভিযোগে দুই সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদ- দেয় মিয়ানমার। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় উঠে।

আমাল ক্লুনি বলেন, মিয়ানমারে ১০ রোহিঙ্গা পুরুষ ও বালককে নির্বিচারে হত্যার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের চেষ্টা করতে গিয়ে গ্রেফতারের শিকার হন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনির স্ত্রী এই ফ্যাশন আইকন বলেন, ‘অং সান সু চি জানেন, নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো কোনও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা নয়। এমন ঘটনা উদঘাটন করলেই কোনও সংবাদিক গুপ্তচর হয়ে যায় না।’

আমাল ক্লুনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে অং সান সু চি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে পদক্ষেপ নেবেন। তিনি এই মামলায় যে অবিচার হয়েছে তা সংশোধনের চেষ্টা করবেন। এই মানবাধিকার আইনজীবী বলেন, আটক সাংবাদিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সু চি’র সঙ্গে পরামর্শ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট তাদের ক্ষমা ঘোষণা করতে পারেন।

আমাল ক্লুনি’র মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের মিশনে ই-মেইল করে রয়টার্স। তবে সেই মেইলের কোনও জবাব মেলেনি। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিকের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রয়টার্সের এডিটর-ইন-চিফ স্টিফেন আদলার। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের এই গ্রেফতারের ঘটনা দুনিয়াজুড়ে সংবাদকর্মীদের জন্য এক হিমশীতল সতর্কবার্তা।

রয়টার্সের দুই সাংবাদিকদের কারাদ- দেওয়ার সমালোচনা করে তাদের মুক্তি দাবি করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তবে বরাবরই সাংবাদিকদের কারাদ-ের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। তার ভাষায়, ‘সাংবাদিক হওয়ার কারণে কারাদ- দেওয়া হয়নি, গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করায় আদালত তাদেরকে কারাদ- দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মামলা আইনের শাসনকে সমুন্নত করেছে। সমালোচকদের অনেকেই রায় পড়েননি।’

চলতি মাসেই রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদ-ের প্রদানের পক্ষে সাফাই গাওয়ায় সু চি’র নিন্দা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি। তার ভাষায়,  ‘প্রথমে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। আর এখন জাতিগত নিধন নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দুই রয়টার্স সাংবাদিকের কারাদ-কে যৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে। অবিশ্বাস্য।’

চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সু চি’র দফতর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয় বিষয়ক মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সোয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এ সময় তিনি মিয়ানমারে আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। জোর দেন দেশটিতে মানবাধিকার হরণের তদন্তে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর।

বৈঠকে পম্পেও যুক্তরাষ্ট্রের নথিবদ্ধ করা প্রতিবেদন ও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের উল্লেখ করা মিয়ানমারের মানবাধিকার হরণের তথ্য তুলে ধরেন। এসব ঘটনায় দায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও অন্যদের দায়বদ্ধ করারও আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সময়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নুয়ার্ট বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে কারাদ-প্রাপ্ত দুই রয়টার্স সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি মত প্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ