রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসি’র আপিল
স্টাফ রিপোর্টার: নিহত রাজীব হোসেনের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।
গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। তিনি জানান, আগামী রোববার চেম্বার আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কার কতটুকু দায় সেটা পরিমাপ না করে কিংবা তদন্ত না করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এ ছাড়া বিআরটিসি সরকারের টাকায় চলে। তারা কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে? এসব কারণে হাইকোর্টের আদেশের বিআরটিসির অংশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যেখানে এক মাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ ছিল।
আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন মো. জহিরুল ইসলাম।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৮ মে ওই আদেশটি দিয়েছিলেন।
ওই দিন আদেশের পর বিআরটিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘটনায় বিআরটিসি বাসটির অবহেলাজনিত দায় ছিল কি না সেটি মূল্যায়ন করা জরুরি। বিআরটিসি যেকোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত, যদি তা সঠিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্সের ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে হয়।
ওই দিন আদেশের পর আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন এবং রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই হিসাবে এক মাসের মধ্যে দুই বাস কর্তৃপক্ষ ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা জমা দেবে। টাকা জমা দেওয়ার পর আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে দুই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করবে।
২৫ জুন এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন বাকি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসতে পারে বলেও জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় বিআরটিসির দোতলা বাস ও স্বজন পরিবহনের বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাঁকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।
এরপর ৬ মে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আদালত অর্ন্তবতীকালীন সময়ে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য এ আদেশ দেন।