রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

অ্যাকর্ডের কাজ বুঝে নেয়ার প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি মাসে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ বুঝে নেয়ার মতো প্রস্তুতি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আরও ছয় মাস সময় পেলো ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। জাতীয় উদ্যোগে গঠিত সংস্কারকাজ সমন্বয় সেল (আরসিসি) কারখানা পরিদর্শনের সক্ষমতা অর্জন না করায় অ্যাকর্ডের কার্যক্রম আরও ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।  

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির দুই সদস্য ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব জেনি হোল্ডক্রফট ও এলসি ওয়াইকিকির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সাউথহল। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান ও মাহমুদুল হাসান খান বাবু, অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গার্নার ফার্গলিন, শ্রমিকনেতা রায় রমেশ চন্দ্র, আমিরুল হক আমিন প্রমুখ।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক শিল্পের ইতিহাসে রানা প্লাজা দূর্ঘটনা সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায়। এ দূর্ঘটনায় অনেক মূল্যবান প্রাণ ঝরে পড়েছিলো। তবে রানা প্লাজা দূর্ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি ওয়েক-আপ কল। এ দূর্ঘটনার পর পরই শোককে শক্তিতে পরিণত করে শিল্পে শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বেশি উদ্যোগী হয়েছি । অ্যাকর্ড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। আমরা জানতাম না, কিভাবে ফায়ার ডোর লাগাতে হয়, কিভাবে স্প্রিংকলার লাগাতে হয়, কি ধরনের ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হয়। এগুলো আমরা শিখেছি। তারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পরম বন্ধু। 

তিনি বলেন, অ্যাকর্ড বাংলাদেশের পোশাকখাতে নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য ৫ বছর মেয়াদের ঘোষনা দিয়ে কাজ শুরু করেছিলো যার মেয়াদ এ মাসে শেষ হচ্ছে। তবে তাদের কাজ বুঝে নেযার জন্য বর্তমানে ডিআইএফইর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আরও ৬ মাসের জন্য এদেশে তাদের মেয়াদ বর্ধিত করেছেন। এই ছয় মাস কার্যক্রম চালানোর জন্য সরকার সম্প্রতি অন্তরবর্তীকালীন তদারকি কমিটি (টিএমসি) গঠন করেছে। এতে সরকার, ব্র্যান্ড, শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধি রয়েছে।

অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সভাপতি বলেন, সরকার অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির করেছে। ফলে আদালতের বিষয়টিও সরকার দেখবে। 

অ্যাকর্ডের পক্ষে এডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, চলতি সপ্তাহে অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার সম্মতি দিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বুঝে নিতে জাতীয় সংস্থাকে কারখানার পরিদর্শন করার সক্ষমতা, নিরাপত্তাঝুঁকি সংশোধন, নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, ত্রুটি সংশোধন কাজ ও পরিচালনা স্বচ্ছ এবং শ্রমিকের নিরাপত্তাবিষয়ক অভিযোগ সম্পর্কে সঠিক তদন্ত করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, আরসিসি অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বুঝে নিতে এখনো প্রস্তুত নয়। আরসিসি সবদিক থেকে যোগ্য হয়ে ওঠার পরই অ্যাকর্ড তার কার্যক্রম গোটাবে। সে ক্ষেত্রে ছয় মাস করে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বাড়তে পারে। 

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। পাঁচ বছরের জন্য গঠিত এই কার্যক্রমের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে অ্যাকর্ডের সদস্য ১ হাজার ৬২০ পোশাক কারখানার ত্রুটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে অ্যালায়েন্সের ৬৬৪ কারখানার ত্রুটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৯ শতাংশ শেষ হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ