রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করব -তালুকদার খালেক

খুলনা অফিস :  দল মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খুলনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন তিনি মেয়র থাকাকালে যেসব উন্নয়ন করতে পারেননি অর্থাৎ যে সকল অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ করে যেতে পারেননি নির্বাচিত হলে সেই কাজগুলো করতে চান। সকলের সহযোগিতায় খুলনাকে একটি উন্নত, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। অপরদিকে জনগণের কাছে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক কর্মী ও সুপরিচিত হওয়ার কারণে আসন্ন কেসিসি নির্বাচনে জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা মহানগর বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ‘এ শহরের মানুষের সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে ছিলাম এবং নগরবাসী সবসময় দেখেছেন আমি তাদের নিয়েই ভাবি। বিভিন্ন সঙ্কটে মানুষের সেবায় এগিয়ে গিয়েছি। আর সে কারণেই মানুষ আমাকে নির্বাচিত করবে।’ 

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে ‘সিটি গভর্ণমেন্ট’ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ, পরিকল্পনা গ্রহণে ‘পরামর্শ কমিটি’ গঠন, কেসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত করা, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, ‘খুলনা ওয়াসা’কে সহযোগিতা করা, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, নতুন আয়ের উৎস্য সৃষ্টি, পূর্ণাঙ্গ ‘আইটি ভিলেজ’ গড়ে তোলা, বিনামূল্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি, গুরুত্ব বিবেচনা করে সড়ক উন্নয়ন, পার্ক - উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানো, ‘মেয়র পদক’ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়ন, সোলার পার্ক আধুনিকায়ন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতির মিনার নির্মাণ, বধ্যভূমিগুলোর স্মৃতি সংরক্ষণ, টাউন সার্ভিস ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান, সুমিং পুল স্থাপন, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধনে আরও উদ্যোগ গ্রহণ, প্রস্তাবিত ৩টি থানা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা, আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ, খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন, খুলনা মহানগরীর সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ ও কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি কাজ বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট থাকবো। 

এক প্রশ্নের জবাবে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, মেয়র দায়িত্ব পালন কালে তিনি এ যাবৎকালের সর্বাধিক এক হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ আনতে পেরেছিলেন। বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে প্রায় ২৭৫ কোটির প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এ সময়ের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কর্পোরেশন ছেড়ে আসা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার নানা প্রকল্প পাইপ লাইনে রেখে এসেছিলেন। দায়িত্বকালে নেয়া প্রকল্পগুলো মধ্যে স্বল্পমেয়াদী প্রকল্পের কাজগুলো শেষ হয়েছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের কাজও বাস্তবায়ন হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আমি খুলনা মহানগরীকে পরিকল্পিত ও উন্নত নগর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সামগ্রিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে সামর্থ হয়েছি। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। 

অপরদিকে খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে বিদ্যমান ও দৃশ্যমান সমস্যা নিয়ে কাজ করবো। সরকারি অর্থায়ন ছাড়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব। আর তাই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করার পর তা করতে না পারা কেউ ভালোভাবে নেয় না। নাগরিক তাদের দেয়া অর্থের নিশ্চিত ব্যবহার দেখতে চান। তাই নগরবাসীর অর্থে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা বাংলাদেশের একটি বৃহত্তর শহর এবং একটি শিল্প বন্দর। এ শহরের মানুষ নাগরিক সুবিধা চান। রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি বসতির উন্নয়ন, ড্রেনেজ ও জলাবদ্ধতার উন্নয়ন চান নগরবাসী। আর সেটির জন্য তারা হোল্ডিং ট্যাক্স এবং বিভিন্ন ধরনের উৎস থেকে অর্থ দিয়ে থাকেন। এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হলো কিনা সেটি দেখতে চান নগরবাসী। আমি মনে করি এ কাজটি মুখ্য। আকাশকুসুম কোনও কিছু না দেখিয়ে খুব বেশি উচ্চাশা প্রকাশ না করে নগরের বিদ্যমান সমস্যা নিয়েই কাজ করতে হবে এবং সে ব্যাপারেই আমার আগ্রহ। আমি আমার নির্বাচনি প্রচারণায় এগুলোকেই সামনে নিয়ে আসবো।’

মহানগর বিএনপি সভাপতি বলেন, ‘যানজটমুক্ত শহর দরকার, নিরাপত্তা দরকার, সড়ক ব্যবস্থা যাতে ভালো থাকে, মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাবো। এছাড়া রাস্তাঘাটের আবর্জনা পরিষ্কার করা মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা সরিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, রাস্তাঘাটে বাতি আছে কিনা তা, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা এসব বিষয়কে আমি সামনে নিয়ে আসবো। এসব বিষয় নিয়েই ভাবছি।’

এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে সোমবার নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর আগে রোববার তালুকদার আব্দুল খালেককে মেয়র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সভাপতি এই দুই নেতা প্রথমবারের মত একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ব্যাপক জনপ্রিয় এই দুই নেতার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। দু’জনই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেননি। দলের শীর্ষে অবস্থান করায় উভয়ের জন্য এটি মর্যাদার লড়াই।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির খুলনার রাজনীতিতে কখনই অস্থিরতা বিরাজ করেনি। কেননা উভয় দলের নেতাদের বেশিরভাগই সমঝোতায় বিশ্বাসী। বড় এই দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও কখনই হামলা বা পালটা হামলার ঘটনা তেমন ঘটেনি। তবে এবার কেসিসি মেয়র নির্বাচনে তাদের লড়াই খুব একটা সহজ হবে না। হেভিওয়েট উভয় প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে কে নির্বাচিত হবেন তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। তবে উভয় দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, তালুকদার আব্দুল খালেক প্রথমবার কেসিসি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর খুলনার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। শহরের রুগ্ন ও ভঙ্গুর চেহারা বদলে নতুন এক নগরীতে পরিণত হয়েছিল খুলনা। কিন্তু তারপরও ২০১৩ সালে নির্বাচনে হেরে যান তালুকদার আব্দুল খালেক। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কেসিসি মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু সরকার বরাদ্দ কম দেয়ায় তার সময়ে নগরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করেন। তাই খালেক তালুকদারের বিপরীতে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামানের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল। তাই নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবার প্রার্থী হওয়ায় তালুকদার আব্দুল খালেকের জয় ছিনিয়ে নেয়া একটু কঠিন হবে।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনার একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও খুলনা-২ আসনে জয় পায় বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এজন্য জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন এবার জয় কিছুটা নিশ্চিত হয়েছে। যদি কোনো রকম নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং না হয়। 

খুলনা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক এডভোকেট সরদার আনিছুর রহমান পপলু বলেন, পদ্মার এপারে দলের সর্বশেষ্ঠ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক। সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতায় তিনি সব থেকে এগিয়ে। বিগত সময়ে খুলনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন তিনি জনগণকে প্রমাণ দিয়েছেন।

মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক আজিজুল হাসান দুলু বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনাবাসীর প্রাণের নেতা। কেসিসি মেয়র পদে নির্বাচনে তার জয় সুনিশ্চিত। দেশের জনগণ আর একদলীয় শাসন চায় না। মঞ্জু ভাইয়ের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।

গত সোমবার তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে তার ভাই জলিল তালুকদার মেয়র পদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে নগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি মো. মুশাররফ হোসেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। আগামী ১৪-১৫ এপ্রিল মনোনয়পত্র যাচাই-বাছাই। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। আগামী ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ