বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ওকালতনামা ও জামিননামা জালিয়াতির অভিযোগে দুই আইনজীবীসহ তিনজন গ্রেফতার

খুলনা অফিস : খুলনায় ওকালতনামা, বেইলবন্ড ও বার কাউন্সিলের স্টিকার জালিয়াতির অভিযোগে দুই আইনজীবীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে তাদেরকে খুলনা সদর থানায় হস্তান্তর করেছে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, এডভোকেট এস এম আরিফুর রহমান, এডভোকেট জি এম শাহাদাৎ হোসেন ও জেলা বারের অফিস সহকারী মো. মারুফ। এ ঘটনায় জড়িত মহিলা আইনজীবী বিউটি আক্তার পলাতক রয়েছে। এরা তিনজনই খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। তাদের কাছ থেকে ৪৪টি ওকালতনামা, ২৯টি বেইলবন্ড, ৪৪টি বার কাউন্সিল স্টিকার, জেলা আইনজীবী সমিতি ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নকল সীল উদ্ধার করা হয়েছে। 

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা জানান, সমিতির সদস্য এডভোকেট এসএম আরিফুর রহমান প্রেস থেকে জাল ওকালতনামা ও জামিননামা ছাপিয়ে বিভিন্ন আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করে। ২৫০ টাকার ওকালতনামা ২৩০ টাকায় বিক্রি করা হত। এ কারণে আইনজীবীদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি সিনিয়র আইনজীবীদের নজরে দেয়ার পর অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর এসএম আরিফুর রহমানকে হাতে নাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি আইনজীবীদের কাছে স্বীকার করেন, প্রেস থেকে ওকালতনামা ও জামিননামা ( বেলবন্ড) ছাপান।

আইনজীবী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক এডভোকেট আলামিন উকিল জানান, অনেক দিন থেকে এ চক্রটি জাল-জালিয়াতি করে আসছে। একটি ওকালতনামা দুইশ’ পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করা হয়। কিন্তু অনেক দিন ধরে একটি চক্র ২৩০ টাকায় ওকালতনামা বিক্রি করে আসছে। এ বিষয়টি গোপনে বারের নেতৃবৃন্দ তদন্ত করেছেন। অবশেষে আইনজীবী সমিতির পিয়ন মারুফের সূত্র ধরে জালিয়াতি চক্রের চারজন সদস্যকে সনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় আরাফাত গলির ছাপাখানা থেকে তারা এ সকল কাগজপত্র ছাপিয়ে আদালতে বিক্রি করেন। এতে জেলা আইনজীবী সমিতি, বার কাউন্সিলসহ রাষ্ট্র রেভিনিউ হারাচ্ছে।

আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু বলেন, এডভোকেট এসএম আরিফুর রহমান বার কাউন্সিলের স্টিকারসহ জাল ওকালতনামা ও জামিননামা ছাপিয়ে বিক্রি করতেন। এ কাজে আইনজীবী সমিতির পিয়ন মারুফকে ব্যবহার করা হতো। এ ঘটনায় চারজনকে আসামী করে তিনি মামলা দায়ের করেছেন। আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এডভোকেট এসএম আরিফুর রহমান, এডভোকেট জি.এম শাহাদাত হোসেন ও আইনজীবী সমিতির পিয়ন মারুফ শেখকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি জেলা পিপি এডভোকেট কাজী আবু শাহীন জানান, ওকালতনামা, বেইলবন্ড ও বার কাউন্সিলের স্টিকার, জেলা আইনজীবী সমিতির সীল, নেতৃবৃন্দের সীল নকল করেছে এ জালিয়াতি চক্রটি। তারা লিখিতভাবে নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, এডভোকেট এস এম আরিফুর রহমান ছাপাখানা থেকে এ সকল কাগজপত্র ছাপিয়ে আনতো বলে স্বীকার করেছে। এছাড়া এডভোকেট জিএম শাহাদাৎ ও এডভোকেট বিউটি আক্তার বিক্রি করতেন। আর তাদের সহায়তা করতো জেলা আইনজীবী সমিতির অফিস সহকারী (পিয়ন) মো. মারুফ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। 

খুলনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র ওকালতনামা, বেলবন্ড, বার কাউন্সিল স্টীকার নকল করে বিক্রি করে আসছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের নজরদারীও চলছিল। শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল আইনজীবী সমিতি ভবনের দোতলায় যান এবং দুই আইনজীবী ও একজন পিয়নকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জাল ৪৪টি ওকালতনামা, ২৯টি জামিননামা (বেলবন্ড), ৪৪টি বার কাউন্সিল স্টিকার, জেলা বারের সাধারণ সম্পাদকের সীল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে খুলনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এম এম মিজানুর রহমান জানান, জাল জালিয়াতির অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ