রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

কুয়েটের চার শিক্ষার্থী আর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারলো না

খুলনা অফিস : একামেডিক শিক্ষা সম্পন্ন করলেও কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারলেন না খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী চার শিক্ষার্থী। শনিবার গভীর রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রশিক্ষণরত (অ্যাটাচমেন্ট) অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত এবং দিপ্ত সরকার, মো. শাহীন মিয়া ও মো. হাফিজুর রহমান আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে রোববার দুপুরে কুয়েটের ভিসিসহ কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। খবর কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছালে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহত মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু বগুড়া জেলার শাহাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা গ্রামের মো. নূরুল ইসলামের ছেলে। এছাড়া আহত দীপ্ত সরকার মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার দিঘল গ্রামের বিমল সরকারের ছেলে, মো. শাহীন মিয়া সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামের নূরুজ্জামান আকন্দের ছেলে ও মো. হাফিজুর রহমান নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বান্দিপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের সকলের বয়স ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
কুয়েট সূত্র জানায়, মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু, দীপ্ত সরকার, মো. শাহীন মিয়া ও মো. হাফিজুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২ কে-১৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তারা ২০১৩ সালে কুয়েটে ভর্তি হন। পরের বছর ২০১৪ সালে তাদের ক্লাস শুরু হয়। বর্তমানে তারা ছিলেন চতুর্ষ (শেষ) বর্ষের ছাত্র। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শুধু বাকি ছিল বাধ্যতামূলক অ্যাটাচমেন্ট (ইন্টার্নশিপ) পরীক্ষা। অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা শেষে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চার সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ করতে ময়মনসিংহের ভালুকার একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাদের পাঠানো হয়। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী ছয়তলা ভবনের চারতলায় ভাড়া নিয়ে তারা থাকতেন।
গত শনিবার রাত ১টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত হন। আহতদের মধ্যে শাহীনের ৮৩ শতাংশ, হাফিজের ৮০ শতাংশ ও দীপ্তের শরীরের ৫৫ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে জানা গেছে।
খবর পেয়ে কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. আবদুল জলিলসহ চারজন শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। প্রফেসর ড. মো. আবদুল জলিল জানান, হতাহত চারজনই ছিলেন কুয়েটের অসম্ভব মেধাবী শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিহত অপু ছিলেন সেকেন্ড বয়। তারা ইন্টার্ন করার পরই গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট পেতেন। এরপরই তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করতেন।
এদিকে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হওয়ার খবর কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছালে সেখানে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
কুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, এ ঘটনার পর তাকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন ঘটনাটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটেছে। তিনি বলেন, কুয়েটের ইতিহাসে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। হতাহতরা কুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী। খবর পেয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিপার্টমেন্টের প্রধানসহ চারজন শিক্ষককে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত ছাত্ররাও সেখানে ছুটে যায়। আমিও বিস্তারিত খোঁজ-খবর রাখছি। ঘটনাটি তাদের পরিবারকেও জানানো হয়েছে এবং হাসপাতালে আছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ