শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

খণ্ডিত ইতিহাস কোনো জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে না -রাষ্ট্রপতি

গাজীপুর সংবাদদাতা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, খণ্ডিত ইতিহাস কোনো জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান তা আমাদরে পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মুক্তিযুদ্ধের সাথে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র ২৬ মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি সোমবার বিকেল গাজীপুরে শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর ও শহীদদের স্মরণে নাগরিক সংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
১৯ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস উদযাপন কমিটি আয়োজিত এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে তারা সবকিছুই জেনে শুনেই করেছে। তারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভয় পায় বলেই এসব করেছে এবং করছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি এখনো ৭১-এ তাদের পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি। তাই এসব অপশক্তি সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। এরা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের শত্রু। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে তাদের যে কোন ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে। আর এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোল আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রধান অতিথি বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা সবারই জানা। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। এই ভাষণের প্রতিটি কথাই যেন ছিল এ দেশের মানুষের মনের কথা, তাদের অব্যক্ত আকুতিরই বহিঃপ্রকাশ। এমনকি তার অবর্তমানে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও তিনি পরিষ্কার দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাই-তো ৭ মার্চের ভাষণ হচ্ছে বাঙ্গালির মুক্তি সনদ। বিশের শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অনুপ্রেরণার উৎস।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা এখন স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটির জন্ম সে দেশ আজ সগৌরবে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১মহাকাশে উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, জেন্ডার সমতাকরণ, শিশু ও মাত্রমৃত্যু হার হ্রাসকরণসহ বহু বিষয়ে বাংলাদেশ এখন বিশব্যাপী রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল হতে সক্ষম হবে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরবাসী যে বীরত্ব ও সাহস দেখিয়েছিলেন এদের ইতিহাস স্বরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯ মার্চের ঘটনা মূলতঃ তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরই বঃিপ্রকাশ। স্বাধীনতার এই মাসে তাই আসুন, আমরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে ১৯৭১ সালের মতো দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
এর আগে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক তাকে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। ভাষণের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এক প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ