রূপগঞ্জে ৩টি ইউনিয়নে চলছে বাপেক্সের গ্যাস অনুসন্ধান
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চিহ্নিত ৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে অনুসন্ধান কার্যক্রম। রাজউকের পূর্বাচল উপশহরে পাওয়া “রূপগঞ্জ গ্যাসফিল্ড” উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বঞ্চিত হয়েছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। তবে দফায় দফায় নতুন অনুসন্ধানে নেমেছে বাপেক্স। গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। স্যাটেলাইন জড়িপে পাওয়া তথ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস রয়েছে এই এলাকায়। তাই ২০১৭-২০১৮ কর্মসূচিতে নতুন করে রূপগঞ্জের চিহ্নিত ৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে অনুসন্ধান কার্যক্রম। এর আগে বাপেক্সের অনুসন্ধানে পাওয়া ২০১৪ইং সালে পূর্বাচলের মাঝিপাড়া এলাকার গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পায় বাপেক্স।
বাংলাদেশ প্রেট্টোলিয়াম বিভাগ (বাপেক্সের) জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গির কামাল জানান, রূপগঞ্জের গ্যাস ফিল্ডটি রাজউকের অধীনে গড়া পূর্বাচল উপশহর এলাকার মাঝিপাড়ায় রয়েছে। এটি এশিয়ান হাইয়ের রাস্তা দিয়ে সরাসরি গাজীপুরের টঙ্গি থানা পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হয়েছে। সাধারণত গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় তিন হাজার ছয়শ’ মিটার গভীর গ্যাস ফিল্ড। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশানুযায়ী এই ফিল্ড থেকে উত্তোলিত গ্যাস দিয়ে দেশের গ্যাস সংকট মোকাবেলায় কথা থাকলে রূপগঞ্জবাসী কেন পাচ্ছেন না তা তার জানা নেই।
এ সময় তিনি আরো জানান, ২০১৭ এর অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ছয়মাসের কর্মসূচিতে ভূতাত্ত্বিক স্যাটেলাইন জড়িপের ভিত্তিতে রূপগঞ্জে উপজেলার ভুলতা ইউনিয়ন, সদর ইউনিয়ন ও ভোলাবা ইউনিয়নে নতুন করে অনুসন্ধান চলছে। এ কার্যক্রম গাজীপুরের কালীগগঞ্জ গিয়ে শেষ হবে। এসব স্থানে প্রতি গর্তে ৬০ফুট গভীরে একটি বিস্ফোরক প্রেরণ করা হবে। পরে বিশেষ পদ্ধতিতে গ্যাসের উপস্থিতি টের পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ সময় তিনি জানান, রূপগঞ্জের মধূখালী গ্রামের পিতলগঞ্জ ও মোগলান মৌজার মধ্যবর্তি স্থানে নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এখানে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান কাজ চালানো হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জের গ্যাস ফিল্ডটি রাজউকের অধীনে গড়া পূর্বাচল উপশহর এলাকার মাঝিপাড়ায় রয়েছে। ফলে পূর্বাচল উপশহর আবাসিক এলাকার সড়ক ও জনপদের রাস্তা নির্মাণ শেষ না করায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনুমোদন নেয়ার পর পাইপ লাইন বসালেও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পাইপ লাইনটি পূর্বাচলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইয়ের রাস্তা দিয়ে সরাসরি গাজীপুরের টঙ্গি থানা পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এখনো স্থানে স্থানে পাইপ লাইন স্থাপনের ধীর গতি থাকায় তা হয়ে ওঠছে না।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৪ ইং সালের ২২ জুন নতুন গ্যাস ফিল্ড হিসেবে পেট্টোবাংলা স্বীকৃতি দেয়। দেশের ২৬তম গ্যাস ফিল্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তার পরিধি বৃদ্ধিতে পুনর খনন কাজ ও অনুসন্ধান করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। পরপর ৪বার অনুসন্ধান করে রূপগঞ্জ গ্যাসফিল্ডের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন কোন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পায়নি বাপেক্স।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতিকুজ্জামান বলেন, রূপগঞ্জের এ গ্যাস ফিল্ডের প্রায় তিন হাজার ৬শ’ মিটার গভীরে অনুসন্ধানে কূপের শেষ দিকে থেকে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে তিন হাজার ৩০০মিটার গভীরে গ্যাসের আরেকটি স্তর রয়েছে। ওই স্তরটি ৬ মিটার পুরত্বেও। সেখানে আরও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। সঙ্গত কারণে তৃতীয়মাত্রার জরিপ শেষে আরও কূপ খনন করলে আরো বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে।
এটা রাজধানীর ঘেঁষা হওয়াতে পূর্বাচল উপশহর ও দেশের চাহিদা মেটাতে উল্লেখ্যযোগ্য হারে অবদান রাখবে এখানকার গ্যাস। তবে রূপগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দাদের আবাসিক গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভ জানান তারা।
সূত্র আরো জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার শীতলক্ষ্যার উভয় পারে রয়েছে সহস্রাধিক শিল্প কারখানা। এসব শিল্পকারখানার গ্যাস সংকটের নানা অভিযোগ নিত্য দিনের। এছাড়াও জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করলেও গ্যাসপাইপ স্থাপন অযুহাতে রূপগঞ্জের এ গ্যাস কাজে আসছে না। সূত্র আরো জানায়, বাপেক্স ২০১০ ইং সালে রূপগঞ্জের দ্বিমাত্রিক জড়িপ চালায়। এতে সেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ২০১৪ইং সনে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খনন করে গ্যাস আবিষ্কার করা হয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতিক) বলেন, বর্তমান সরকার গ্যাসের চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। সে কারণেই নতুন নতুন এলাকায় গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধানে নেমেছেন বাপেক্স। আর আমাদের এলাকায় একটি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া গেছে, আরো ক্ষেত্র অনুসন্ধান চলছে। গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া গেলে সারাদেশের গ্যাসের চাহিদার সঙ্গে আমাদের রূপগঞ্জের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হবে।