বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

নেপাল থেকে আসা লাশের কফিন ধরে স্বজনদের আহাজারী। গতকাল সোমবার বনানী আর্মি স্টেডিয়াম থেকে তোলা -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ গতকাল সোমবার দেশে নিয়ে আসার পর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে তাদের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। বেদনাবিধুর পরিবেশে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে।
এরা সকলেই নেপাল গিয়েছিলেন বেড়াতে আর ফিরছেন কফিন বন্দী হয়ে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে লাশগুলো নিয়ে আসা হয়। এর আগে নেপালে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ দূতাবাসে নামাযে জানাযা সম্পন্ন হয়। এতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নেপাল সরকারের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিগণ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিমানবন্দরে নিহতদের লাশ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। বিমান পরিবহন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
মাওলানা মাহমুদুর রহমানের পরিচালনায় মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, আত্মীয়-বন্ধু-স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আর্মি স্টেডিয়ামে জানাযায় অংশ নেন।
কাঠমান্ডুতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বাংলাদেশিদের জানাযায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। জানাযা শেষে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
লাশগুলো রাখা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে এই ২৩ জনের পরিচয় এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। নেপালের অনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল সোমবার বিকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে করে তাদের কফিন ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
বিমানবন্দর থেকে ২৩ জনের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের মধ্যে যারা কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন, তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশে থাকা পরিবারের অন্য স্বজনরাও দুপুরের পর থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্টেডিয়ামের পরিবেশ। 
বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সগুলো আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাঁধে করে কফিন বয়ে নিয়ে মঞ্চের ওপর সারি করে রাখেন।
পরে একে একে নাম ডেকে লাশ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। ২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আলাদা আলাদা ফাইলে তথ্য সংগ্রহ ও ফরম পূরণ করে ছবি ও পাসপোর্টের তথ্য দেখিয়ে লাশ হস্তান্তর করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে এ জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। লাশগুলো  বিকাল ৫টায় এখানে আনা হয়। জানাযা পরিচালনা করেন সেনা বাহিনীর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মাহমুদুল হক। ২৩ জনের লাশ ১৯টি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে লাশগুলো নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর ভিভিআইপি টারমাকে অবতরণ করে লাশবাহী ৬১-২৬৪০ নম্বর বিমানটি।
এই ২৩ জনের মধ্যে ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা রয়েছেন।
আর যাত্রীদের মধ্যে আছেন ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, বেগম উম্মে সালমা, নুরুজ্জামান, রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।
হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে কফিন নিয়ে স্বজনরা রওনা হন যার যার ঠিকানায়। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রিয়জনের দাফন সম্পন্ন করবেন তারা।  এ সময় সেখানে প্রিয়জনের লাশ নিতে আসা স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানাযা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রিয়জনের লাশ গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।
 লাশ গ্রহণকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর থেকেই শেখ হাসিনার সরকার স্বজনহারাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। তিনি আরো বলেন, তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এ দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক মেধাবী ও গুণীজনকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষতিপূরণ হবার নয়।
স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দায়িত্ব ইউএস বাঙলার। দেখা যাক তারা কি ধরনের ক্ষতিপূরণ দেন।
বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেন, ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে, সময়মতো সবকিছু শেষ হবে। আমরা সর্বদা নজরদারি করছি। তদন্ত কাজ চলছে । নিহতরা তাদের ক্ষতিপূরণ অবশ্যই পাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ