রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

মেয়াদোত্তীর্ণ ৫ হাজার ৫৬১ সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় থাকবে আরো ৬ মাস

কামাল উদ্দিন সুমন : গেলো ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০০২ মডেলের প্রায় ৮ হাজার ৪২১টি (ঢাকায় ৫ হাজার ৫৬১টি) সিএনজি চালিত অটোরিকশার আয়ুষ্কাল, ফিটনেস ও রুট পারমিট। অথচ এসব সিএনজি গাড়ি চলছে পুরোদমে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, বিআরটি এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো ৬ মাস চলবে এসব পরিবহন।
বিআরটিএ ১১ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০২ মডেলের প্রায় ৮ হাজার ৪২১টি (ঢাকায় ৫ হাজার ৫৬১টি) অটোরিকশার আয়ুষ্কাল, ফিটনেস ও রুট পারমিট ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। ফলে এই অটোরিকশাগুলো রাস্তাায় চলতে পারবে না। এই জটিলতা নিরসনে অটোরিকশাগুলো আগামী ছয় মাসের জন্য চলতে দেয়া আবশ্যক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হলো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত অটোরিকশা মালিকদের তোলা কয়েক কোটি টাকা নেয়ার ফন্দি হিসেবে এমনটি করছে বিআরটিএ। বুয়েটের সুপারিশের নামে সময় ক্ষেপণ করে এ কাজটি করছে তারা। ইতোমধ্যে মালিক সমিতি কর্তৃক ‘গাড়ি পরীক্ষা ও আনুষঙ্গিক খরচ’ বাবদ সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা চাঁদা তোলার খবর পাওয়া গেছে। ফলে ১৫ বছরের পুরোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, মেয়াদ বাড়ানোর আগে দেখতে হবে, যে জনসেবার উদ্দেশ্যে অটোরিকশা নামানো হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে কি না। প্রয়োজনে যাত্রীদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি জনসাধারণ সেবা না পায়, তবে সরকারের সুযোগ রয়েছে নিবন্ধন বাতিল করে অটোরিকশা খাতকে কোম্পানির আওতায় আনা। আপনি সেবা পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি সেবা পাইনি, এদের দৌরাত্ম্যের কাছে মানুষ পণবন্দী।’
বিআরটিএর সুপারিশ সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএ একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যার কাজ সড়কে শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই বিআরটিএ আইনগতভাবেই লক্কড়ঝক্কড় অটোরিকশার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সময় দেয়ার সুপারিশ করতে পারে না। এই সুপারিশ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা।’
গত ২০১৬ সালের নভেম্বরে ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তন করে অটোরিকশার মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার দাবি জানায় মালিক সমিতি। প্রয়োজনে সমিতি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে পরীক্ষা করে মতামত নেয়ার পরামর্শ দেয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ মালিকদের দেখানো পথেই হাঁটতে শুরু করে। গত বছর ২৩ অক্টোবর বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে অটোরিকশার মেয়াদ ১৫ বছরের অতিরিক্ত কত বছর বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুয়েটের মতামত নেয়ার অনুমতি চান মন্ত্রণালয়ের কাছে। দ্রুত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেয়ে যায় বিআরটিএ। গত নভেম্বরে মতামত দেয়ার জন্য বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগকে চিঠি পাঠায় বিআরটিএ। ৫ ডিসেম্বর বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগ বিআরটিএকে জানায়, এ ব্যাপারে মতামত দিতে চারটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যার জন্য ছয়-আট সপ্তাহ সময় লাগবে। এ অবস্থায় অটোরিকশার মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিআরটিএ।
সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেয়ার সময় আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল নয় বছর। পরে মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে মেয়াদ ৬ বছর বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়।
বিআরটিএ পরিচালক নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জটিলতা কাটাতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সময় দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। বুয়েট জানিয়েছে, মতামত দিতে তাদের ছয়-আট-সপ্তাহ সময় লাগবে। তাই তারা অন্তর্বর্তীকালীন সময় বাড়ানোর এই সুপারিশ করেছেন। তিনি জানান, পরীক্ষা শেষে বুয়েটের মতামত অনুযায়ীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
১৫ বছরের পুরোনোগুলো বাতিল করে নতুন অটোরিকশা নামানোর দাবিতে আন্দোলন করছে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের সদস্যসচিব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিআরটিএর এই সুপারিশ করা অন্যায়, এটা ন্যক্কারজনক। অটোরিকশা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া আরও এক বছর আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। তা না করে বিআরটিএ ষড়যন্ত্র করে আসছে, যার অংশ হিসেবে মেয়াদ বাড়ানোর এই সুপারিশ করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ