শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

যেসব ঘটনায় আলোচিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

নাজমুল ইসলাম জুয়েল : দেশের ক্রিকেটের মতো করেই আলোজিত ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। টেষ্ট ক্রিকেটে নতুন দিগন্তে পা রেখেছে ২০১৭ সাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সারাবছরই ভারতের দাপট থাকলেও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। বিরাট কোহলি আর ষ্টিফেন স্মিথ মিলে যেন সবকিছু নতুন করেই সাজাতে চেয়েছিলেন। এছাড়া ভারত অধিনায়ক সাত পাকে বাধাঁ পড়েছেন প্রেমিকা বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মার সঙ্গে। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক চলতি বছরে ক্রিকেটে আলোচিত ঘটনাসমুহ।
ভারত এবার পারলনা পাকিস্তানের সাথে!
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পাশাপাশি বড় কোন প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান যেন পেরেই ওঠেনা ভারতের সাথে। তবে গত বছর এর ব্যতিক্রম হয়েছিল। জুনে চিরপ্রতিদ্বন্ধী ভারতকে লজ্জায় ডুবিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালের একতরফা ফাইনালে সরফরাজ আহমেদের দল জেতে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে। তরুণ ফখর জামান (১১৪), অভিজ্ঞ আজহার আলি (৫৯) ও মোহাম্মদ হাফিজের (৫৭*) দুরন্ত ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। জবাবে মোহাম্মদ আমির (৩/১৬), হাসান আলির (৩/১৯) দুধর্ষ বোলিং সামলাতে ব্যর্থ গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানেই অলআউট। গ্রুপ পর্বে বড় হারের পর অনেকে শত্রুদেশের বিপক্ষে পাকিদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওভালে সেই তাদেরই উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের শিরোপা সরফরাজদের হাতে এর চেয়ে ভাল জবাব আর হতে পারত না। আসরে তারা মোটেও ফেবারিট ছিল না, অন্যদিকে বিরাট কোহলির ভারত আগের বারের চ্যাম্পিয়ন। যে পাকিস্তানকে কেউ গোনায় ধরেনি, ওভালে চিরশত্রু ভারতকে লজ্জায় ডুবিয়ে সেই তাদেরই হাতে ওয়ানডে ফরমেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব। সেটিও এমন দু-জনের পারফর্মের ওপর ভর করে টুর্নামেন্টের আগে অনেকেই যাদের চিনতেনই না। বিরাট কোহলি, ইয়ন মরগান, স্টিভেন স্মিথ, এবিডি ভিলিয়ার্সদের স্লান করে পাকিদের সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক ফখর জামান ও হাসান আলি নামের দুই নবীন।
বনেদি পরিবারের নতুন অতিথি অঅফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড
ক্রিকেট এবার নতুন করে জাগতে শুরু করেছে। জুনের শেষ সপ্তাহে টেস্ট মর্যাদা পায় আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভায় দেশ দুটিকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দেয়ায় টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা ১০ থেকে ১২-তে উন্নীত হয়েছে। লন্ডনে আইসিসির বার্ষিক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে দেশ দুটিকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়। এর আগে ২০০০ সালে সর্বশেষ দেশ হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। মেলবোর্নে ১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা লংগার ভার্সনের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুইয়ে ও বাংলাদেশের সঙ্গে কুলীন ক্লাবে যুক্ত হয়েছে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট আয়াল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন ডিউট্রন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইরিশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্যই এটা একটা সুসংবাদ। এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য আমি আইসিসি এবং সব সদস্য রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানাই। খেলাটির সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট এবং যেটা আমাদের সকলের স্বপ্ন ছিল।’
একই রেকর্ডে মিলার ও রোহিত শর্মা
এবার যেন নতুন করেই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন ডেভিড মিলার ও রোহিত শর্মা। এ বছরই আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের এ দুই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই কীর্তি গড়েন মিলার। আর ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার সঙ্গে ভাগ বসান রোহিত। নভোজিৎ সিং সিধু আইপিএল-এ মিলারকে কিলার উপাধি দিয়েছিলেন। মিলার যে বাংলাদেশী বোলারদের কিলার হবে তা কে জানতো। দীর্ঘদিন অফ ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এ হার্টহিটার ফর্মে ফিরতে বেছে নিয়েছিলেন টাইগারদের। টি২০ ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে লেখিয়েছেন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
বড় ঝড়টা বয়ে যায় তরুণ বোলার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের উপর দিয়ে। তার এক ওভারেই ৫টি ছয় মারে মিলার। এরপর ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে মিলারের পাশে নাম লেখান তিনি। ভারতীয় ওপেনার থামেন ৪৩ বলে ১১৮ রান করে। টর্নেডো ইনিংসে ১২ চারের সঙ্গে ১০ ছক্কা হাঁকান তিনি। টি২০তে রোহিতের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
কোহলির ইতিহাস লারাকে ছাড়িয়ে
কোহলি যেন নতুন করে ইতিহাস লিখে চলেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক হিসেবে’ সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েছেন বিরাট কোহলি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লীতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪৩ রানের ম্যারাথন ইনিংস উপহার দিয়ে ব্রায়ান লারাকে ছাড়িয়ে যান ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ওয়ান্ডার বয়’। অধিনায়ক হিসেবে ৬ ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাবেক ক্যারিবিয়ান গ্রেটকে পেছনে কোহলি। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ২৩৫ রান। ভারত অধিনায়ক হিসেবে যেটি ছিল সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। নিজের রেকর্ডকেই আরও এগিয়ে নিয়েছেন হালের এই রান মেশিন। পাশাপাশি ৬ ডাবল সেঞ্চুরিতে কোহলি স্পর্শ করলেন ভারতীয় রেকর্ডও। ৬ করে ডাবল করেছিলেন বীরেন্দর শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকর। আগের টেস্টেই একমাত্র ইনিংসে নাগপুরে করেছিলেন ২১৩ রান। টেস্ট ইতিাহসে পর পর দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান কোহলি।
আলোচিত কোহলি-আনুশকার বিয়ে
সেলিব্রেটিদের বিয়ে নিয়ে কম আলোচনা হয়না। এবার যেন একটু বেশিই হলো। বাইশ গজে তার ব্যাটিং দাপটে কাঁপছে বিশ্ব ক্রিকেট। জীবনের ইনিংসের গোড়াপত্তনেও কাঁপিয়ে দিয়েছেন বিরাট কোহলি। অনেক নাটকীয়তার পর বলিউড কুইন আনুশকা শর্মাকে জীবনসঙ্গী করেছেন ভারত অধিনায়ক। বিয়ের জন্য ইতালির ঐতিহাসিক শহর রোম থেকে তিন শ’ কিলোমিটার দূরে ছবির মতো সুন্দর তাস্কানিকে বেঁছে নিলেন বহুল আলোচিত প্রেমিকযুগল। বিরাট-আনুশকা মিলে হয়ে গেছেন বিরুশকা। ১১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদে প্রকাশ, তার একদিন আগেই ইতালীরা মিলানের তাস্কানিতে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। যেখানে কেবল দুই পরিবারের কাছের মানুষেরাই উপস্থিত ছিলেন। ২৬ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে বিয়ে পরবর্তী সংবর্ধনায় নিমন্ত্রিত অতিথির তালিকায় ছিলেন ক্রিকেট, বলিউড ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিখ্যাত সব ব্যক্তি। টাইগার পাতৌদি এবং শর্মিলা ঠাকুরের পর ক্রিকেট এবং বলিউডের সেরা জুটি বলা হচ্ছে বিরুশকা। সংবাদ মাধ্যম বলছে, ‘ওয়েডিং অব দ্য ইয়ার ২০১৭’। এতটাই আলোচিত যে, বিরাট এবং অনুশকার জুটিও এখন একটা ‘ব্র্যান্ড’। যারা শুধু বলিউডের রেড কার্পেট বা ক্রিকেট মাঠের সবুজ গালিচা নয়, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিজ্ঞাপনী দুনিয়াতেও। মূলত একটি শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে প্রথম আলাপ হয়েছিল বিরাট এবং অনুশকার। প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়েই শুরু হয়েছিল সম্পর্ক। ২০১৩ সালে ছিল সেই বিজ্ঞাপনের শূটিং।
রোহিত শর্মার তিন ডাবল
ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছুটা স্লথ গতির ব্যাটিং করলেও দিনে দিনে যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রোহিত শর্মা। বহুল আলোচিত বিয়ের বিরাট কোহলি যখন ছুটিতে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার কাছে হারের জবাবটা রোহিত এভাবে দেবেন, কে ভেবেছিল? মোহালির দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেন অপরাজিত ২০৮ রানের অতিমানবী আরও একটি ইনিংস। ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের রেকর্ডটাও রোহিতের দখলে, শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে, কলকাতায়, ২০১৪ সালে। অতিকায় এই ইনিংসটিও রোহিতের ক্যারিয়ারের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। ওয়ানডেতে যে তার আছে আরও ২৬৪ ও ২০৯ রানের দুটি ইনিংস। ওয়ানডেতে প্রথম দুই শ’র সীমানায় পা রাখেন গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গোয়ালিয়রে করেছিলেন ১৪৭ বলে অপরাজিত ২০০। ২০১১ সালে সেই রেকর্ড ভেঙে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইন্দোরে বীরেন্দর শেবাগ করেন ১৪৯ বলে ২১৯। ২০১৩ সালে কাছে গিয়েও রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি রোহিত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে করেন ১৫৮ বলে ২০৯। পরের বছর, ২১০৪ সালে ঠিকই শেবাগকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে যান রোহিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলকাতায় খেলেন ১৭৩ বলে ২৬৪ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস। ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৪৭ বলে ২১৫ করেন ক্রিস গেইল। ওই বিশ্বকাপেই গেইলের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মার্টিন গাপটিল করেন ১৬৩ বলে অপরাজিত ২৩৭। এবার সেই স্বাদ আরও একবার পেলেন রোহিত। তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে গড়লেন নতুন ইতিহাস। ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ