শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ ও সামরিকসহ সকল পদক্ষেপ নিতে হবে

রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : মিয়ানমারে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও আগুনে পুড়িয়ে মারার মত বর্বরতার মাধ্যমে জাতিগত নিধনের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এক বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ ও সামরিক ব্যবস্থাসহ সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক অবরোধের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সকল পণ্য বর্জন করতে হবে, এবং মুসলিম বিশ্বকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমার জান্তা রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যকে মুসলিম শূণ্য করার খেলায় মেতে উঠেছে। বর্মী জান্তা এবং অং সান সুচি বিশ্ব সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রাখাইনের ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও নির্মমতা এবং মানবতা ভূলুন্ঠিত হলেও জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। জাতিসংঘের এ ভুমিকায় মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অনিবার্যতা আরো জোরালো হচ্ছে। তিনি বলেন, সময় এসেছে আরাকান দখল করে বাংলাদেশের পতাকা বদলের। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আগত ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণের দাবি জানিয়ে বলেন, ত্রাণ বিতরণ নিয়ে যেন কোন দুর্নীতি না হয়। 

পীর সাহেব চরমোনাই আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ জাতিসংঘ দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসুচি ঘোষণা করে বলেন, মিয়ানমারে গণহত্যা ও বর্বরতা বন্ধ না হলে প্রয়োজনে মিয়ানমার অভিসুখে লংমার্চসহ আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, মুসলিম হত্যাকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জাতিসংঘকে কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সু চি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

মিয়ানমারের রাখাইন মুসলিম গণহত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও পুনর্বাসন দাবি এবং মিয়ানমার সামরিক জান্তার বিচারের দাবিতে ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও পূর্ব সমাবেশে তিনি একথা বলেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব-অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ঢাকা উত্তর অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, শায়খুল হাদীস মকবুল হোসাইন, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, ছাত্রনেতা জিএম রুহুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, এডভোকেট লুৎফুর রহমান, জান্নাতুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের লক্ষ্যে রওয়ানা দিয়ে কাকরাইল নাইটএংগেল পৌঁছলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে শান্তিনগর পৌঁছলে কাঁটাতারের ব্যারিগেট দিয়ে মিছিলের গতি রোধ করে। এ সময় কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এখান থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ করেন। দূতাবাসের প্রটোকল অফিসার স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ হলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব-অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, আইন উপদেষ্টা এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান।

মাদানী বলেন, রাখাইন রাজ্যের খনিজ সম্পদ লুটপাট করতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ইন্ধনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উচ্ছেদ করছে। সুচি রক্ত পিপাসু দানব। তার বিচার হতেই হবে। 

মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, রক্ত আরো রক্ত চায়, লাশ আরো লাশ চায়। কাজেই রক্ত ও লাশের খেলা বন্ধ না হলে মিয়ানমার সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে খাদ্য কিনে কাঁটা গায়ে নূনের ছিটা দিয়েছে। এই অথর্ব মন্ত্রীকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, মিয়ানমার সরকার মুসলিম নিধন ও মুসলিম শূন্য করার জন্য সেখানে ভয়াবহ তান্ডব চালাচ্ছে। হত্যা ধর্ষণ বন্ধ না হলে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মুসলমানরা সেখানে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ