বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। তিনি বলেন, আমাদের খুব সুস্পষ্ট দাবি যে, রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়া হোক, তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক এই রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে- এটা আমাদের দাবি। তিনি বলেন, ওরা হিন্দু না মুসলিম, এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই, ওরা মানুষ। সেই মানবতার বিরুদ্ধে আজকে মিয়ানমার সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন আমরা আজকে জনমত সংগঠিত করে সমগ্র বাংলাদেশেকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই তারা যেন এই গণহত্যা বন্ধ করে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ এই মানববন্ধন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবি সম্বলিত নানা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে। ঢাকাসহ সারাদেশে ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসূচি একযোগে পালনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপির নেতারা বলেছে, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ এই কর্মসূচি করতে দেয়নি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গত ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ পানে ছুটছে। কয়েক দশক ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে অনীহা হলেও এরই মধ্যে মিয়ানমারের দেড় লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা নাগরিক ঢুকে পড়েছে।

মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসমূহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করার  ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন তাদের (মিয়ানমার) বিমান আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে তখন এই সরকার চুপ করে থাকে। এটা হচ্ছে এদের (সরকার) নতজানু পররাষ্ট্র নীতির পরিচায়ক।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্ব মানবতার পক্ষে আজকে মিয়ানমারের আরাকান  রাজ্যে যে ভয়াবহ মানবিক নির্মম অত্যাচার চলছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদ জানাতে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। দুর্ভাগ্য আমাদের সমগ্র বিশ্ব যখন আজকে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, সমস্ত মানবতা যখন রুখে দাঁড়িয়েছে তখন বাংলাদেশের সরকার যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি, যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক নাই তারা আজকে প্রায় নিশ্চুপ ভুমিকার পালন করছে। তিনি বলেন, আমরা যখন মিডিয়াতে দেখেছি সেই নাফ নদীর তীরে শিশুদের লাশ পড়ে আছে, যখন আমরা দেখি নৌকা ডুবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে এবং সেই আরাকান রাজ্যের সমস্ত গ্রামগুলো জ্বলছে, তখন আমাদের সরকার নিরব ভুমিকা পালন করেছে। আজকেও তারা (সরকার) সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কুটনৈতিক দিক থেকে এবং মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে নাই।

১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গারা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে একই ঘটনা ঘটেছিলো, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলো। তখন তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদান করেছেন এবং একই সঙ্গে কুটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছেন সেই সময়ে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে এগ্রিমেন্ট করেছিলেন। পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ১৯৯২ সালে যখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে আবার পালিয়ে চলে আসে তখনও তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছিলেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।

মির্জা ফখরুল দাবি করে বলেন, আজকে বিশ্ব মানবতার জন্যে মানবিক কারণে যেকোনো দুঃস্থ মানুষকে আশ্রয় দেয়া ও তাদের পাশে দাঁড়ানো এটা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। যেটা পরিষ্কার করে আমাদের সংবিধানেও বলা আছে যে,বিশ্ব মানবতার পাশে সবসময় দাঁড়াতে হবে, দুঃস্থ নির্যাতত মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতে হবে। সেখানে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ একটাই এই সরকার গণবিচ্ছিন্ন সরকার, তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, মিয়ানমার সরকার একটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠিকে তারা তাদের দেশ থেকে নৃশংসতার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে- এটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাছে কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা নারী-পুরুষদের হত্যা করেছে এমনকি নবজাগত শিশুকেও তারা রেহাই দেয়নি। এই পরিস্থিতি আমাদের একটি মাত্র সমাধান সেটা হচ্ছে, আমরা মানবতার হাত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাড়িয়ে দেবো এবং সারা বাংলাদেশের মানুষ এজন্য প্রস্তুত আছে। সরকার যদি এই কঠিন সত্যকে স্বীকার না করে তাহলে সরকার তাদের দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করে এই দেশ থেকে চলে যাক- এই হচ্ছে আমাদের দাবি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দুঃখের বিষয় মিয়ানমারের এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার দিক থেকে এবং মানবেতর যে অবস্থা তার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ আমরা নিরাপত্তা পরিষদের এই বিষয়টি তুলতে পারি নাই। এই ব্যাপারটিকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিবকে। এর চেয়ে লজ্জ্বার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। বিশ্বের যে সমস্ত দেশে এই ধরণের সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সমস্ত দেশ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টিকে নিয়ে সুরাহার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ সেখানে ব্যর্থ হয়েছে।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অথচ সেই দেশের কাছে খাদ্য-চাল আনতে গেছেন আমাদের খাদ্য মন্ত্রী সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে। অর্থাৎ নাফ নদীর রক্তাক্ত লাশের ওপর দিয়ে কামরুল ইসলাম গেছেন মিয়ানমারে। কত বড় নতজানু এই সরকার, প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছেন। কেনো মিয়ানমারে যাচ্ছেন? ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে চাল আছে সেখানে না গিয়ে কেনো সেখানে যাচ্ছেন?

প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্র দলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।   

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, গৌতম চক্রবর্তী, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, বেলাল আহমেদ, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, আমিরুল ইসলাম আলীম, কাদের গনি চৌধুরী, অঙ্গসংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের জেবা খান, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মিলন মেহেদী, জাসাসের শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ