বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

মানবতার দুর্দশা লাঘবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

ডা. মো.মুহিব্বুল্লাহ : রাজধানী ঢাকা সহ বাংলার ৬৪টি জেলাই এখন পানিবদ্ধ। সমগ্র দেশটা যেন একটি প্লাবিত নগরী।রোড ঘাটে গাড়ি ঘোড়া চলার মতো অবস্থাটাই নেই। নৌকায় আর কলা গাছের ভেলায় চড়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। ভেলা ও নৌকায় চলছে অনেকের পাকশাক। এমনকি রাত কাটাতেও আজ ঐ নৌকাই তাদের অবলম্বন।ফুটপাত ও আছে পানির নিচে। রোড গুলোকে আজ ঠিক নদী নালার সাদৃশ্য দেখায়।যার দু পাড়ে দোকান পাট,বাসা বাড়ি। গাড়ি ঘোড়া চলার অযোগ্য রোডের থৈ থৈ পানি রাশি দেখলে আসলেই মনে হচ্ছে ছোটো খাটো নদীই এঁকেবেঁকে বয়ে চলছে। রেললাইন পর্যন্ত ভেঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শহরগুলোতে এতো বেশী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে যে নিচতলা ও বস্তিঘর গুলোর বেশীরভাগই পানির নিচে ডুবে গেছে।
এসকল বাসার বাসিন্দাদের আজ কষ্টের অন্তনেই। ঘুমানোর জায়গা নেই। নেই রান্না করা ও বসে খাওয়ার মত তিল ঠাঁই।বাজার ঘাটে যাবার কথাতো মনে পড়লেই গা শিউরে উঠছে। মলমুত্রযুক্ত ময়লা ও গন্ধ পানিতে পুরা পরিবেশ আরো বেশী বিষাক্ত। বহুতল ভবনের বাসিন্দারাতো বলা চলে অবরুদ্ধ। নিচতলায় পানির অবস্থান যেন তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অনেক জায়গায় আবার এ পানিবদ্ধতার কারণে পানিতে ডুবে অনেক শিশু কিশোরদের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক কথায় জনজীবন এতোটা দুর্বিষহ অবস্থায় নিপতিত হয়েছে যার বর্ণনা দেওয়ার যোগ্যতম ভাষা আমি নির্বাচন করতেই ব্যর্থ হচ্ছি।সাম্প্রতিক এ বছরের ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতি দেখে বর্ষিয়ান গুরুজনেরা বলছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা এবার দেখছি। রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ভারতের পানি বাংলাদেশের উপরে ছেড়ে দেয়াতে এ ছোট্ট দেশটি আরো বেশী বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। যে পানি উত্তর বঙ্গের শত সহস্র গ্রামকে পানির নিচে তলিয়ে দিয়েছে।যার ফলে সে সব গ্রামের বাসিন্দাদের অতি কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অনাহার অর্ধাহারের চরম কষাঘাতে জর্জরিত হতে হচ্ছে। গবাদিপশু ও হাঁস মুরগীগুলোর জীবন বিপন্নের পথে।
বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে যতই একটি ছোট দেশ হোকনা কেন এ দেশ বিশ্বের একেবারে হীন দরিদ্রদের কাতারভুক্তনা। তথাপিও তার মাঝেমাঝেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হওয়ার কারণ কি? নিশ্চয়ই আমরা বিজ্ঞ চিৎ ভাবে তা পর্যালোচনা করতে যেয়ে বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। যার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান কারণ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। গ্রীষ্মকালে তারা বাংলাদেশকে পানিবঞ্চিত করে এদেশের নদ নদী গুলোর সর্বনাশ করে দিয়েছে। মরু প্রায় আজ গ্রীষ্মের বাংলাদেশ। অথচ সেই ভারতই আবার যখন বর্ষায় এসে হাবুডুবু খেতে ধরে তখন নিজেরা বাঁচতে বাংলার ঘাড়ে চেপে বসে। পানি তখন পার করতে শুরু করে বাংলাদেশের মাঝে।বর্তমানে তাদের দেশের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাম্প্রতিক তারা ফারাক্কার ১০৮টি দরজার ১০৪টি দরজাই খুলে দিয়েছে।
ফলে গ্রীষ্মে পানির অভাবে নদীমরা বাংলায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডুবাতে আরম্ভ করে দরিদ্র বাংলাদেশীদেরকে। চৈত্রে যদি পানি পেয়ে এদেশের নদ নদীর যৌবন অক্ষুন্ন রাখতে পারতো তাহলে আজ ভারতের এই বিপদ কালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া পানিতে যেমন বাংলাদেশের মানুষকে ডুবতে হতোনা। ঠিক তেমনি আবার তারাও বাংলাদেশের নদীর টানে পানি সমুদ্রে পাস হওয়ার বদৌলতে বন্যার ভয়াবহ আঘাত থেকে বাঁচতে পারতো।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতিহিংসা মূলক আচরণে এ দেশের নদ নদীর মৃত্যুর পাশাপাশি আরো বেশকিছু কারণে ঘটছে এ জলাবদ্ধতা। যার মধ্যে অন্যতম দায়ী ব্যক্তিরা হলো এ দেশের ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত দল। নিজ তহবিল ভারি করার নেশায় যারা দেশ ও জাতির কথা ঠায় ভুলে যায়।এদেশের প্রতিটি নগরীই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় একেবারে অব্যবস্থিত। নেই প্রশংসনীয় ড্রেন। নেই ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য গৃহিত সুব্যবস্থা। দুর্নীতি আর দখলদারদের দুর্নিবার আক্রমণে যা আছে তা ও পানি নিষ্কাশন যোগ্যতা হারিয়ে বসে আছে।নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন আর ময়লা আবর্জনার বিক্ষিপ্ত বর্জ যতসামান্য অস্তিত্ত্বে বেঁচে থাকা ড্রেন গুলোকে একেবারে অকার্যকর করে তুলেছে। মাঝেমধ্যে তা পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলেও আবার পুনরায় ভরাট হতে সময় লাগে দু সপ্তাহ। বাংলাদেশের অসচেতন মানুষ গুলোও আজ জলাবদ্ধতার এই দুরবস্থায় নিপতিত হয়ে বুঝতে শুরু করেছে নদী-নালার প্রয়োজনীয়তা।পানি নেমে যাওয়ার সুব্যবস্থা যদি আমাদের দেশে থাকতো তাহলে আজ এই ছোট্ট একটি শহরের মতো দেশ বাংলাদেশের এই বন্যা পরিস্থিতি বেশ লাঘব হতো।কি বলবো দুঃখের কথা! আজ বিপদে পড়ে আমরা যে বিষয়ে বেশ শিক্ষা পাচ্ছি।কাল বিপদ কেটে যাবার সাথেসাথেই তা ভুলে বসবো।
এটাই বাঙ্গালীর বদঅভ্যাস।আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্ণধার ও সর্বস্তরের নাগরিকেরা যদি সচেতন হতো, তাহলে ঐ প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের উপর অবিচার করতে ভয় পেতো।তেমনি আমাদের কর্তাদাররা আমাদেরকে দুরবস্থায় ফেলে রেখে একা পারতোনা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ ও জাতির ক্ষতিকরে পার্থিব স্বর্গসদনবাসি হতে।আমাদের নগরীর ড্রেন, নর্দমা, খাল-নালা সবি পয়পরিষ্কার থাকতো।ড্রেনের উপরে বাড়ি ঘর, দোকান পাট গড়ে উঠে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতোনা।বৃষ্টির সাথেসাথে পানি নেমে যেত নদীতে।আর নদী সে পানি নামিয়ে দিতো বঙ্গোপসাগরে।
অপার শান্তিতে কাটতো নাগরিক জীবন। তখন দেশ নয় শুধু ভারতের বন্যা দুর্গত কালে আমরা হতে পারতাম তাদের বিপদের বন্ধু।কিন্তু প্রতিহিংসায় সে ভারত বাংলাদেশিদের ক্ষতি করতে যেয়ে আজ যেমনকরে তাদের কৃত কুঠারাঘাতে তাদেরি পদ কর্তন করছে। তেমনি পাপীকে নির্বিঘ্নে পাপ করতে দেয়ার খেসারতে পাপীর সঙ্গী সাত ঘরের লোক হয়ে দরিদ্র বাঙ্গালীকেও তার খেসারত দিতে হচ্ছে।পাশাপাশি আবার দেশিয় রাক্ষসদেরকেও জনগণের রক্ত শুষে খেতে দেয়ায় পানিবদ্ধতার এই অমানবিক নিপীড়নে আজ সকলকে ভুগতে হচ্ছে।
তাই আসুন সবাই একসাথে সচেতনতার ময়দানে নেমে আসি। চিহ্নিত করি এসকল পানিবদ্ধতা পূর্ণ বিপর্যয়ের কারণ সমুহ। আর প্রতিরোধের মাধ্যমে তা প্রতিহত করি। দেশবিদেশে সচেতনতা সৃষ্টিকরে মানবতার দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ