বুধবার ২২ মে ২০২৪
Online Edition

কাউখালী উপজেলার পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলের গ্রামগুলো চরম দুর্ভোগে

 

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা : পিরোজপুরের কাউখালী উপজোর সন্ধ্যা, কঁচা ও কালীগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনে পাল্টে যাচ্ছে  উপজেলার পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মানচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাঞ্চলের সোনাকুর, হোগলা, বেতকা, সয়না, রঘুনাথপুর, রোঙ্গাকাঠী ও গন্ধর্ব এলাকার বিস্তীর্ণ জনপথ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সোনাকুরের পাল বাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প নদী গর্ভে বিলিন হতে চলেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত পরিবার আজ পথে বসেছে। চাষাবাদের ভূমি দূরের কথা, নেই মাথা গোঁজার মতো আবাসনের ব্যবস্থাও। ভিক্ষা করে দিন কাটাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। কোন প্রকার সহায়তা না পেয়ে নদীভাঙ্গা মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আবাসনে, প্রতিবেশীর আঙিনায় বা কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে। ২৫-৩০ বছর ধরে নদীভাঙ্গনে মানচিত্র পরিবর্তন হলেও ভাঙ্গন রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। 

কালীগঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে বেতকা এলাকায় দাড়িয়ে পশ্চিম দিকে তাকালে যতদূর চোখ যায় এক সময় তা ছিল কাউখালী উপজেলার হোগলা বেতকা ভূখন্ড যা এখন পিরোজপুর সদর উপজেলা ভূখন্ডে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ইউসুফ, রফিক,  শাম্মী আক্তার এক সময় তাদের সব কিছু ছিল আজ তারা অসহায়। তারা বেঁচে আছে মানুষের দয়ায়। কালীগঙ্গা পাড়ের রফিক জানান তার বাড়ীর উঠনে ফাঁটল দেখিয়ে বলেন, “সামনে কত খানি জমি ছিল, তা রাক্ষুসাই নদীতে লইয়া গেছে। এহন ঘুমাইন্নার জায়গাও যাওয়ার পথে।” এছাড়া ঐ ভূখন্ডের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে কচা ও সন্ধা নদী। প্রমত্তা সন্ধ্যা ও কচা কেড়ে নিয়েছে এক ইউনিয়নের সয়না রঘুনাথপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা দত্তের হাট নামে একটি গ্রাম এবং আমরাজুড়ী ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ ভূমি। এলাকার উল্লেখযোগ্য সয়না পালবাড়ী, আমরাজুড়ী সিও রেভিনিউ অফিস, সাবেক গন্ধর্ব ও মেঘপাল প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন সন্ধ্যা নদী গর্ভে। এই এলাকার ভাঙ্গন এতই তীব্র যা নৌচলাচলের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর অবস্থা। পারত পক্ষে কেউ এই অংশ থেকে নৌ যান চালায় না। উপজেলা পশ্চিম পাড়ের ১৪টি গ্রামে ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদরাসা, ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ের সংগে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ থাকায় বহু ছেলে মেয়ে বিশেষ করে শিশুরা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে যায়। উপজেলায় ঝরে পড়ার হার শতকরা ৮/৯ভাগ হলে ওই সকল এলাকায় ঝরে পড়া শিশুর হার ১৬/১৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ফলাফল কিছুটা ভাল হলে এরপরে উচ্চ শিক্ষার হার ১৫-২০ ভাগের বেশী এগোয়নি। এই বদ্ধ দ্বীপের কোন সরকারি অফিসের তদারকী খুব একটা না থাকায় সরকারি কাজ কর্ম অনেকটা কাগজ কলমের দিকে সেরে নেয়া হচ্ছে। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, দারিদ্রতা ও অসচেতনতাই দায়ী বলে এলাকার সুধী সমাজ মনে করেন।  এলাকার নদী ভাঙ্গন কবলীত মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এস,এম আহসান কবীর জানান নদী ভাঙ্গা মানুষগুলো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। নদী ভাঙ্গন রোধ কল্পে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা চলছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ