বুধবার ২২ মে ২০২৪
Online Edition

পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার পরিবার কার্যকারিতা হারাচ্ছে খুলনা জলমহল

খুলনা অফিস : সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন খুলনার জলমহলের আশে পাশে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি জমি ও ছোট ছোট মৎস্য ঘের।
প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামে- বেনামে জলমহলগুলো ইজারা নিয়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে চিংড়ি চাষ আর সাব-লীজ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পানির সুষ্ঠু প্রবাহ ও নিষ্কাশন প্রক্রিয়া না থাকায় জলমহলগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই আবাসিক এলাকা, ফসলী জমি প্লাবিত হচ্ছে। ইজারা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও স্থানীয় বাসিন্দাদের এ অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ইজারা গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ৯টি উপজেলায় ২০ একরের অধিক জলমহলের সংখ্যা রয়েছে ১৫৬টি। এর মধ্যে কয়রা উপজেলায় ৩৫টি, দাকোপে ২১টি, পাইকগাছায় ৫৪টি, বটিয়াঘাটায় ১৩টি, ডুমুরিয়ায় ২৪টি, রূপসায় ৭টি ও তেরখাদায় ২টি জলমহল রয়েছে। এসব জলমহলগুলোর মধ্যে খুলনা জেলা প্রশাসন টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে ৬৪টি। তবে মাটি ভরাট ও নানাবিধ কারণে ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি ৬২টি ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আঁকে রয়েছে ৩০টির মতো জলমহল। এছাড়া ২০ একরের নিচে খুলনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জলমহল রয়েছে। ২০ একরের নিচের ওই জলমহলগুলো ইজারা দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।
জলাবদ্ধতার শিকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ওই সব জলমহলগুলো বেড়িবাঁধ, পাটা ও নেট দিয়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে চিংড়ি চাষ আর সাব-লীজ দিচ্ছেন।
এতে করে পানির স্বাভাবিক স্রোত ও পানির সুষ্ঠু নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন জলমহলের আশে পাশে বাসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার।
জলাবদ্ধতার শিকার সাইফুল ইসলাম, আনিছুজ্জামান, শেখ মহাতাব আলী, মো. মোক্তার হোসেনসহ ডুমুরিয়া উপজেলার আরও কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, সিঙ্গার বিল, শলুয়া বাজার সংলগ্ন খাল, আমভিটা বাজার সংলগ্ন তুলোখালি নদী, ঢাইগ্রামের গঙ্গানীর খাল, বিলপাবলার খাল, পাহাপুর খাল, বাইনতলার খাল ও বামুন্দিয়া বিলের খালসহ আরও অনেক খাল রয়েছে। যেগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইজারা নিয়ে ঘের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিন্তু তারা ইজারার চুক্তির শর্ত ভেঙ্গে খালগুলোতে বেড়িবাঁধ, পাটা ও নেট দিয়ে পানির স্রোত বন্ধ করছে। আবার অনেকে ইজারা নেয়া জলাভূমি সাব-লীজও দিচ্ছেন। ফলে পানির সুষ্ঠু নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, কোন ইজারাদার শর্তভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে এ বছর যেসব জলমহলে বিরুদ্ধে গণঅভিযোগ এসেছে, সেসব জলমহল ইজারা না দিয়ে তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিরুজ্জামান জানান, কোন জলমহলের ইজারা গ্রহীতা এ ধরনের কোন কার্যকলাপের সাথে লিপ্ত থাকলে বা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে তারপরও এ ধরনের অভিযোগ আসছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া ঘের মালিকদের নিয়ে মিটিং করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিটিং-এও সকলকে সতর্ক করা হবে। এরপর তারা আইন না মানলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুলনা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট রোসলিনা পারভিন বলেন, দুই দিন আগে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে যোগদান করেছি । তাই এ সম্পর্কে এখনও ভালো কিছু বলতে পারব না। তবে তিনি বলেন ইজারা গ্রহীতারা স্রোতস্বিনী জলমহল খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে মাছ চাষ বা সাব লীজ দিতে পারবে না। যদি কোন ইজারা গ্রহীতার বিরুদ্ধে এ ধরনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ আসে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ