শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ইসলামের ওপর আঘাত আসলে ঈমান রক্ষায় তাওহিদী জনতা কঠিন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে

 

স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম অন্যায়ভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, সড়ক থেকে নাম অপসারণ, মসজিদের নগরী ঢাকাসহ সারা দেশে মূর্তি স্থাপন, পাঠ্যসূচিকে নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুয়ানীকরণ, স্কুলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সিনেমা প্রদর্শনের উদ্যোগসহ আলেম সমাজ, মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামী জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেন, যখনই ইসলামের ওপর আঘাত আসবে তখনই এদেশের ওলামায়ে কেরাম তাওহিদী জনতা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

গতকাল শনিবার দুপরে ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লিখিত ইসলাম বিরোধী পদক্ষেপসমূহের প্রতিবাদে তিনি আগামী ৬ অক্টোবর, বাদ জুমা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, উত্তরগেটে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকবে জেলা ও বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন, ওলামা ও সুধী সমাবেশ এবং ঢাকায় জাতীয় ওলামা ও সুধী সমাবেশ। খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদীর সঞ্চলনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। উপস্থিত ছিলেন ঐতিহ্য সংরক্ষণের সমন্বয়কারী ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, জামিআ মুহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালাম, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান কাসেমী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব শেখ গোলাম আজগর, নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব রোকনুজ্জামান রোকন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত হোসাইন, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মহি উদ্দীন, মাওলানা ছানাউল্লাহ, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মুফতি আকরাম হুসাইন প্রমুখ।

মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেন, সরকার স্বপ্রণোদিত হয়েই সড়কের নাম ফলকে দুই বুযুর্গের নাম দেয় কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিষয়ে একটি নামের তালিকায় হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম না থাকলেও পরবর্তীতে ঐ তালিকায় উল্লিখিত দুই বুযুর্গের নাম সংযুক্ত করে নামফলক থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। এ ঔদ্ধত্য কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না তাদের নাম পুনর্বহাল করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, সরকার ও সিটি কর্পোরেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনের সম্মুখস্থ সড়কটির নাম ‘হাফেজ্জী হুজুর সড়ক’ রাখেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন মেয়র মোহাম্মাদ হানিফের ইচ্ছা ও অনুমোদনেই এ নামকরণ হয়। দীর্ঘদিন এ নাম বহাল থাকার পর শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসীর মামুনের করা রিটের ভিত্তিতে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নাম সড়ক, স্থাপনা ও স্থান থেকে তুলে দেয়ার একটি রায় আদালত থেকে বের হওয়ায় হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ.-এর নাম সড়কের নামফলক থেকে মুছে ফেলা হয়। অথচ ঐ মামলায় প্রাথমিক যে তালিকা নিয়ে জনাব শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসীর মামুনের পক্ষ থেকে রিট করা হয়েছিল তাতে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. এর নাম ছিল না, তারা পরবর্তীতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি সম্পূরক তালিকা সংযোজিত করে আলোচ্য অপরাধে যুক্ত নন এমন কিছু ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে দেখা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত বুজুর্গ, তাওবার রাজনীতির প্রবর্তক, দেশের প্রবীণতম আলেম, হযরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর নাম অন্যতম। যিনি চল্লিশের দশক থেকে ইসলামপ্রচার, ধর্মীয় শিক্ষা ও আদর্শের প্রসার, সমাজসেবা, আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নিজেকে অকল্পনীয় উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। অনন্য সাধক প্রায় শতায়ূ বুজুর্গ মনীষী তওবার রাজনীতির ডাক দিয়ে একাধিকবার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেন। তাছাড়া দেশের আরেক মনীষী বায়তুল মোকাররমের প্রথম খতীব ও মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা’র স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রহ.-এর নামও রয়েছে এ তালিকায়। রাজধানীসহ সারাদেশে তাঁদের অসংখ্য-ছাত্র-ভক্ত ও গুণগ্রাহী ছড়িয়ে আছেন। স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের তালিকায় হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রহ.-এর নাম দেখে দেশবাসী সীমাহীন বিস্মিতও হতবাক। 

তিনি বলেন, ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষার অভাবেই জাতি আজ অধঃপতনের পথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেটধারী লোক বের হচ্ছে ঠিকই কিন্তু দেশে আদর্শ নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। যার ফলে সর্বত্র অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মের সয়লাব চলছে। এক মাত্র কুরআন-হাদীসের আলোকে রচিত সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থাই পারে দেশকে আদর্শ নাগরিক উপহার দিতে। অতএব স্কুল-কলেজে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যত বেশি ইসলামী শিক্ষা দেয়া যাবে তা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। নাস্তিক্যবাদের প্ররোচনায় পুনরায় পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিলে তা দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। দেশ ও জাতি ধ্বংসের এ ষড়যন্ত্র জাতি মেনে নেবে না।

যেহেতু বাংলাদেশ বিপুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, তাই মুসলিম ঘরানার শিক্ষাবিদদের নিয়ে পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার বিষয়সমূহ সংযুক্ত করে একটি সার্বজনিন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন সময়ের দাবি। আশাকরি সরকার সকল ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গণতান্ত্রিক দাবি মেনে নেবেন।

মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, কোন দেবী বা তার ভাস্কর্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার শক্তি রাখে না। সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহই মানুষের ভাল-মন্দ, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার শক্তি রাখেন। মূর্তি স্থাপন সরাসরি আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের শামিল। বাংলাদেশ শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানদের দেশ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টে মূর্তি স্থাপন ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর চরম আঘাত। এতে দেশের জনগণ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। কতিপয় ইসলামবিদ্ধেষী কুচক্রী মহল জনগণের কাছে সরকারের ভাব-মূর্তি নষ্ট করার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অনুকরণে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধি উদয় হবে এবং মূর্তির অবসান ঘটবে। অন্যথায় দেশের জনগণ তাদের ঈমান-আকিদা, ধর্মীয় আদর্শ ও ঐতিহ্য রক্ষায় কঠিন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়বে।দেশের শীর্ষ আলেমদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদার পরও কীভাবে সুপ্রিম কোর্টে মূর্তি পুনঃস্থাপন হল তা জাতি জানতে চায়।

তিনি আরো বলেন, দেশের সর্বজনমান্য এক আধ্যাত্মিক মনীষীর প্রতি এ অবিচার যেমন জাতির জন্য কলঙ্কজনক তেমনি তা বর্তমান সরকারের বিশেষকরে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও একটি লজ্জাজনক ঘটনা। তাই আশাকরি আদালতের রায়টি পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্তটির সংশোধনের মাধ্যমে আলোচ্য তালিকা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে হাফেজ্জী হুজুর ও মুফতি আমীমুল ইহসানের নাম রাস্তায় পুনর্বহাল করবেন। আজকের এ সংবাদ সম্মেলনে ইসলাম, দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো অতীব গুরুত্ব সহকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়, সরকার ও বিচারালয় সংশ্লিষ্টগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশবাসীকে আশ^স্ত করবেন এ আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা। 

মাওলানা আতাউল্লাহ আরো বলেন, ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি এদেশের ইসলামপ্রিয় কোটি-কোটি মানুষের হৃদয়ের দাবী ও আবেদনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরছে। আশা করি আলেম-ওলামা ও ইসলাম প্রিয় জনতার দাবী বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ তাওহিদী জনতার এআন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ