মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪
Online Edition

মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে কেন এত আলোচনা?

মাহাথির মোহাম্মদ কৌশিক : সাকিব আল হাসানের পর জাতীয় দলের অধিনায়ক হন মুশফিকুর রহীম। এরপর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অনেকটা জুয়া খেলার মতো করে ওয়ানডে ও টোয়েন্টি-২০তে অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেন মাশরাফি বিন মুর্তজার হাতে। জুয়া খেলার কথা এই অর্থে বলা হয়েছে, মাশরাফি এখনকার মতো সে সময়েও ক্যারিয়ার অনিশ্চিত অবস্থায় ছিল। তার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ দলে। টানা দু’টি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে অংশ নেয়। সেই অবস্থার মধ্যেই আবারো তার অধিনায়কত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। যদিও বিসিবি সভাপতি ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন এমন নিশ্চয়তা দিয়েছেন। গত ঈদ-উল-ফিতরের পরপরই হুট করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্ব। সেই অনাহূত বিতর্কে দুলে উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। এরপর অবশ্য সেই বিতর্কে জল ঢেলে দিলেন বিসিবি সভাপতি। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, মাশরাফিকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছে না বিসিবি। অধিনায়ক হিসেবে তার বিকল্পও এখন বাংলাদেশে নেই। আর মাশরাফি যতদিন চাইবেন ততদিনই খেলতে পারবেন। মাশরাফির নেতৃত্ব নিয়ে বলতে গিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আলাপই হয়নি। আর আলাচনা করার সুযোগই নেই। মাশরাফি এখানে কেবল একজন খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, অধিনায়কও বটে।
তার এই দায়িত্বটা সে যেভাবে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশে তার বিকল্প পাওয়া অসম্ভব। এই মুহূর্তে তার বিকল্প কোনো খেলোয়াড় আমাদের কাছে নেই।’ অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়াও দলে একজন খেলোয়াড় তথা পেস বোলার হিসেবে মাশরাফির পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এছাড়া পারফরম্যান্সের কথা দেখেন, তার পারফরম্যান্স কিন্তু অনেক ভালো। আমাদের মাথায় সব সময় চিন্তা আছে সাকিব চলে গেলে কি হবে, মুশফিক না থাকলে কি হবে। এই চিন্তাতো আমাদের মাথায় আছেই এবং থাকবে। এটা মানে এই নয় যে মাশরাফিকে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। অভিজ্ঞদের নিয়ে ভাবছি এর মানে কখনোই এটা নয় যে, তাদেরকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এগুলো ওর জন্যও অস্বস্তিকর আমাদের জন্যও বটে।’ মাশরাফি নিজের চাওয়ামতো নির্বিঘেœ খেলে যেতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি মাশরাফি যতদিন খেলতে পারবে ততদিন ওকে বাদ দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ সে শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, তিনি একজন অধিনায়কও। ওর মতো অধিনায়ক বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।’ গত এক বছরে প্রতিটি সিরিজেই মাশরাফির নেতৃত্ব, অবসর নিয়ে কথা উঠছে। যেটাকে সমর্থন করছেন না বিসিবি সভাপতিও। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এই ধরনের প্রশ্ন এই সময় উঠাটা উচিতই না। সামনে আমাদের অনেক খেলা আছে। তার আগে আমরা কোনো বিকল্প খেলোয়াড়ের খোঁজ না পেয়ে ? যদি এগুলো বলি তাহলে ওই খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থাটা কি হয়।’ নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘যাই করি খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়। আপনাদের আগে খেলোয়াড়রাই জানতে পারবে। মাশরাফির সঙ্গে এই ধরনের কথা আমার সঙ্গে কখনোই হয়নি।’ যদিও ঈদের পর আইসিসির সভা শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে বিসিবি ভাবছে তার উদাহরণ মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। ২০১৯ সালে আইসিসির পরবর্তী বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপ নিয়ে নানা পরিকল্পনার ছক এখনই শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নানা পরিকল্পনা করছেন দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। এর মধ্যেই ২০২০ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের পরিকল্পনায় সাড়া দিতেই টি-টুয়েন্টি অধিনায়কত্ব ও খেলা ছেড়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শেষে এই ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন মাশরাফি। হঠাৎ অবসর। মূলত ওই সিরিজ শুরু আগে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে মাশরাফির সঙ্গে আলোচনা করেন পাপন।
সে আলোচনার ফলশ্রুতিতে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরু আগে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অবসরের ঘোষণা দেন মাশরাফি। এখন শুধু ওয়ানডে খেলছেন। ওয়ানডের অধিনায়কও তিনি। ২০১৬ সালেও একবার রব উঠেছিল। আবার থেমে গিয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতে গুঞ্জনের আবহেই টিকে ছিল সেই আলোচনা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ইনজুরির কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে টেস্ট খেলেন না মাশরাফি। বাকি থাকে শুধু ওয়ানডে ক্রিকেট। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এবার শুরু হয়েছে ওয়ানডে দলে তার নেতৃত্ব বিষয়ক আলোচনা। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে বেশ সফলভাবেই যে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাশরাফি। প্রশ্ন উঠেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই ২০১৯ বিশ্বকাপ ভাবনায় মাশরাফিও সরে দাঁড়াবেন কিনা? জিম্বাবুয়ের কাছে শ্রীলঙ্কার হার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের জয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাম্প্রতিক এ দুই ম্যাচের কারণে ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি খেলাটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছে ক্রিকেটের শীর্ষ দেশগুলো। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বিশ্বকাপকে ঘিরে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব নিয়ে ভাবছে বিসিবি। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭৭ ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার এখন মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৩১ উইকেট শিকারী বোলারও নড়াইল এক্সপ্রেস। একাদশের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছাড়াও গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ৪৭ ম্যাচে ২৭টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ২৯টি জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে মাশরাফির আগে আছেন হাবিবুল বাশার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বেই। ২০১৪ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয়বার অধিনায়ক হয়ে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছেন। দেশের মাটিতে টানা ছয় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে। টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও আরো কিছুদিন ক্রিকেট খেলে যেতে চান মাশরাফি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরও দেশে ফিরে বলেছেন, ক্রিকেটটা উপভোগ করছেন। অবসর নিয়ে এখনই ভাবছেন না। অবশ্য ৩৩ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার না ভাবলেও তাকে নিয়ে, তার নেতৃত্ব নিয়ে ঠিকই ভাবছে বিসিবি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ